বিদ্রোহী’ প্রিগোঝিনকে ক্ষমা করলেন পুতিন, সাজানো ফাঁদেই কি পা দিয়েছিলেন ‘ওয়াগনার’ প্রধান?
আস্থা ডেস্কঃ
রুশ গোয়েন্দা সংস্থা ‘ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস’ (এফএসবি) বলেছে, তদন্তে দেখা গিয়েছে যে বিদ্রোহে জড়িতরা অপরাধমূলক কার্যকলাপ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আইনি প্রক্রিয়া বন্ধ করা হচ্ছে।
‘ওয়াগনার’ বাহিনীর প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন-সহ সমস্ত ‘বিদ্রোহী’ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করল রাশিয়া। মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়। এরই মধ্যে আমেরিকার সামরিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট ফর জি স্টাডি অফ ওয়ার’ মঙ্গলবার দাবি করেছে, ক্রমশ ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠা প্রিগোঝিনকে ফাঁদে ফেলতেই ওয়াগনার যোদ্ধাদের একাংশের সাহায্যে ‘বিদ্রোহের চিত্রনাট্য’ তৈরি করেছিলেন পুতিন!
ভাড়াটে যোদ্ধাবাহিনী শনিবার মস্কো দখলের কথা অভিযানের কথা প্রকাশ্যে জানানোর পরেই ক্রেমলিনের তরফে প্রেস বিবৃতিতে প্রিগোঝিন-সহ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার কথা জানানো হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট পুতিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে তাঁর একদা ঘনিষ্ঠ ‘ওয়াগনার’ বাহিনীর প্রধানকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। পাশাপাশি, প্রিগোঝিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বিদ্রোহ দমনে কড়া পদক্ষেপের কথা জানান তিনি।
‘বিদ্রোহ নয়, প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম পুতিনের বিরুদ্ধে’, আত্মগোপন করে দাবি ‘ওয়াগনার’ প্রধানের
‘বিদ্রোহ নয়, প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম পুতিনের বিরুদ্ধে’, আত্মগোপন করে দাবি ‘ওয়াগনার’ প্রধানের
এর পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতির নাটকীয় বদল ঘটেছে। ‘রণে ভঙ্গ’ দিয়ে ‘অজ্ঞাতবাসে’ যাওয়া প্রিগোঝিন অডিয়ো বার্তায় দাবি করেছেন, বিদ্রোহ নয়, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সরকার এবং তাঁর সেনার আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পথে নেমেছিল ‘ওয়াগনার’ বাহিনী। এই পরিস্থিতিতে রুশ গোয়েন্দা সংস্থা ‘ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস’ (এফএসবি) বলেছে, তদন্তে দেখা গিয়েছে যে বিদ্রোহে জড়িতরা অপরাধমূলক কার্যকলাপ বন্ধ করে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তাই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া বন্ধ করা হচ্ছে।
পুতিন সরকার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরেই গোপনে রাশিয়া ছেড়ে প্রিগোঝিন বেলারুশে পাড়ি দিয়েছিলেন বলে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের একাংশের খবর। পুতিনের ‘বার্তা’ পেয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ন্ডার লুকাশেঙ্কোই নাকি, আশ্রয় দিয়েছেন প্রিগোঝিনকে। তাঁর ‘ওয়াগনার’ যোদ্ধারা রবিবারই ‘বিদ্রোহে’ ইতি টানার কথা ঘোষণা করেছিলেন। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের বিভিন্ন ‘ফ্রন্টে’ তাঁরা রুশ সেনার সহযোগী হয়ে লড়াইয়ে ফিরতে শুরু করেছে বলে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে দাবি করা হয়েছে।
প্রিগোঝিনের ওই ভাড়াটে বাহিনী রুশ সেনার অংশ নয়। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে তারা রুশ বাহিনীর সহযোগী হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। অতীতে লিবিয়া, সিরিয়া, মোজাম্বিক, সুদানের মতো দেশে গৃহযুদ্ধেও লড়েছে প্রায় ৪০ হাজার যোদ্ধার এই পেশাদার ভাড়াটে বাহিনী। ইউক্রেন যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গ্র্যাসিমভের সঙ্গে মতবিরোধ চলছিল প্রিগোঝিনের। রুশ সেনা পরিকল্পিত ভাবে ওয়াগনার যোদ্ধাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।