ফরিদপুরে কিশোরীকে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন, আটক-৩
মামুনুর রশীদ/ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে বাসের সুপারভাইজার আসিফ সরদার, হেলপার রাকিব ও আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে মিলি বেগম নামে একজন মহিলাসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া ওই কিশোরীর গ্রামের বাড়ি জেলার নগরকান্দা উপজেলার পীরের গ্রামে।
গত ৩০ জুন রোববার ওই কিশোরীকে আটককৃত ঢাকা মাওয়া-মহাসড়কের প্রচেষ্টা পরিবহন গাড়ির সুপার ভাইজার ও হেলপার একটি বাড়িতে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভাঙ্গা থানার ওসি জিয়ারুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা কালাম শেখ বাদি হয়ে সোমবার বিকেলে ভাঙ্গা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। রাতে ওই কিশোরীকে মেডিকেল পরিক্ষা ও চিকিৎসা জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, রোববার বিকেলে ওই কিশোরীর বড় বোন ও তার দুলা ভাই ঢাকার বাবু বাজার থেকে প্রচেষ্টা পরিবহনের বাসে ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে তুলে দেন। এসময় তারা গাড়ির ওই দুজন কর্মচারীর মোবাইল নাম্বার ও গাড়ি র ছবি তুলে রাখেন। এক থেকে দেড় ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পরে তাদের ছোট বোন বাড়িতে না পৌঁছে যাওয়ায় হেলপার ও সুপারভাইজারের মোবাইলফোনবিষয়টি জানার জন্য ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়। এসময় ভাঙ্গায় অপেক্ষামান কিশোরীর বাবা ও বোন দুলাভাইসহ পরিবারের লোকজন উদবিঘ্ন হয়ে উঠেন। পরে বিষয়টি কিশোরী পরিবার রাতপ ভাঙ্গা থানা পুলিশকে জানান। গাড়ির ছবি তুলে রাখার সূত্র ধরে পুলিশ ওই কিশোরীকে হেল্পার রাকিবের পৌরসভার কাপুড়িয়া সদরদীর বাসা থেকে উদ্ধার করেন। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বাসের সুপার ভাইজার আসিফ সরদার, হেলপার রাকিবের মা ছেলেকে অনৈতিক কর্মকান্ডে আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে মিলি বেগমকে আটক করে।
কিশোরীর বড় বোনের স্বামী সুমন আহমেদ জানান, নিজের পরিবারসহ শ্যালিকা নিয়ে তিনি ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। আমার ছোট শ্যালিকা হাজারীবাগ খাদিজাতুল কোবরা নামের একটি মহিলা মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণীতে লেখাপড়া করে । রোববার ৩০ জুলাই) বিকেলে শ্বশুরবাড়ি নগরকান্দা যাওয়ার জন্য আমি ও আমার স্ত্রী দুজন মিলে শ্যালিকারে বাবু বাজার থেকে প্রচেষ্টা পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-৬৪৮৩) একটি বাসে তুলে দেই । একা যাচ্ছে ভেবে বাসের হেলপার ও সুপারভাইজারের মোবাইল নাম্বারটা নিয়ে রাখি । এক পর্যায়ে বাসের সুপারভাইজার ও হেল্পারকে মোবাইল করি। তাদেরকে না পেয়ে আমার শ্যালিকার মোবাইল নম্বরে কল করেও বন্ধ পাই। বিচলিত হয়ে ভাঙ্গায় মেয়ের জন্য অপেক্ষামান আমার শ্বশুরকে মোবাইল ফোন করে জানতে পারি শ্যালিকার পৌছায়নি। এমন খবরে চরম উদবিঘ্ন হয়ে উঠেন আমাদের পরিবার।
বাধ্য হয়ে আমি ঢাকা থেকে ভাঙ্গায় ছুটে আসি। কিন্তু শ্যালিকা বা ওই প্রচেষ্টা পরিবহন বাস কাউকে খুঁজে না পাওয়ায় ঘটনার রাতেই ভাঙ্গা থানায় একটি মৌখিক অভিযোগ করলে পরের দিন পরিবহন বাসের ছবি দেখে সোমবার সকালে বাসটি সনাক্ত করে পুলিশ বাসের সুপার ভাইজার ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করে।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গা থানার এস আই মনির জানান, ওই কিশোরীকে মেডিকেল পরীক্ষার পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
অফিসার ইনচার্জ জিয়ারুল ইসলাম জানান, ওই কিশোরী পরিবারের মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ রাতেই মাঠে নেমে শহরে অভিযান পরিচালনা করার পর ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সোমবার বিকেলে ওই কিশোরী পরিবারের পক্ষ থেকে ভাঙ্গা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন ধারায় একটি মামলা দায়ের করার পর মঙ্গলবার আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে ঘটনার সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তদন্ত করে এমন কিছু উঠে আসলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।
স্থানীয় ব্যবসায়ী শিকদার লাবলু জানান, সকালে ঘুম থেকে জেগেই শুনতে পাই আমার হাসপাতালের পাশে কাপুড়িয়া সদরদী হেলিপটে জনৈক মোশারফ এর বাড়িতে বাসের হেলপার ও সুপারভাইজারসহ একজন কিশোরীকে আটকে রেখে রাতভর শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে পুলিশ প্রশাসন মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং তিনজনকে আটক করে।
প্রতিবেশী একজন ভাড়াটিয়া চাঁদনী বেগম জানান, পুলিশ এসে একটি মেয়েকে উদ্ধার করে বলে আমরা জানতে পারি। ওই কিশোরীকে রাতভর বাসায় আটকে রেখে কারা যেন শারীরিক নির্যাতন করেছে বলেও এলাকার লোকজন জানতে পেরেছেন।
কিশোরীর পিতা মোঃ কালাম শেখ বলেন, আমার মেয়েটি ঢাকায় তার সেজো মেয়ের বাসায় থেকে একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করে আসছিল। আম কাঁঠাল মৌসুম শেষের কথা ভেবে তাকে বাড়িতে আসার জন্য বললে সেজ মেয়ের জামাই রবিবার দুপুরের পর একটি বাসে তুলে দেয়। এ ব্যাপারে তিনি সোমবার একটি মামলা দায়ের করেছেন উল্লেখ করে আরও বলেন আমার কিশোরী মেয়েকে যারা সর্বনাশ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই।