ঢাকা ০৫:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo হোসেনপুরে পুলিশের হাত থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিল বিএনপি নেতারা Logo কিশোরগঞ্জ শহরে অটোরিকশার যানজট ও ফুটপাত দখল ভাঙতে মাঠে নামলেন ডিসি ফৌজিয়া খান Logo রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের মৃত্যুতে মহাসচিব মির্জা ফখরুলের শোক Logo রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের মৃত্যুতে প্রবাস থেকে শোক প্রকাশ করলেন সেলিম রেজা Logo নলছিটিতে বিএনপির পক্ষে জনসংযোগ ও পথসভা করলেন এ্যাড. শাহাদাৎ হোসেন Logo কাঁঠালিয়ায় গণঅধিকার পরিষদের মনোনয়ন প্রত্যাশির লিফলেট বিতরণ Logo পানছড়িতে জামায়াতের মাসিক সাধারন সভা অনুষ্ঠিত Logo ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপি নেতা সেলিম রেজার জনপ্রিয়তা বেড়েছে Logo কিশোরগঞ্জে সুপারি চুরি করতে গিয়ে গাছ ভেঙে চোরের মৃত্যু Logo মানবতার ডাক’-এর মহতী উদ্যোগ: মরণ ফাঁদ রাস্তায় ফেরালো জীবনের চলাচল

ফের বন্যায় নওগাঁর ১০ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

News Editor
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ১০৬৭ বার পড়া হয়েছে

আমিনুল জুয়েল, নওগাঁ প্রতিনিধি: টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নওগাঁর আত্রাই নদের পানি বেড়ে জেলার মান্দা ও আত্রাই উপজেলায় দ্বিতীয় দফা বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। পানি বাড়তে থাকায় আত্রাই নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আগের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি ঢুকছে। ফলে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। ভেসে গেছে শত শত পুকরের মাছ। জেলার মান্দা ও আত্রাই উপজেলার দশটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিচ্ছে নতুন রোগ-ব্যাধি। ঘরে পানি প্রবেশ করায় মানুষ এখন নিজ বাড়িতে বানানো মাচা ও টিনের চালে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বাঁধ ও সড়কের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। দুই দফা বন্যার কারণে এলাকার নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। প্রথম দফা বন্যায় নওগাঁর নিম্নাঞ্চলগুলোতে পাট ও সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারের বন্যায় তলিয়ে গেছে আমন ক্ষেতও। গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন বানভাসী লোকজনেরা।

রিফাত হত্যার পর মিন্নিকে শেষ বার্তায় যা বলেছিল নয়ন বন্ড

আত্রাই নদীর বাঁধের ভাঙ্গণ দিয়ে পানি প্রবেশ করে মান্দা উপজেলার কশব, বিষ্ণুপুর ও নুরুল্যাবাদসহ আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া, কালিকাপুর, আহসানগঞ্জ, শাহাগোলা, বিশা, পাঁচুপুর ও ভোঁপাড়া ইউনিয়ন সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। এদিকে, আত্রাই নদের পানি ধামইরহাটের শিমুলতলী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শুকুর আলী জানান, বন্যায় এই অঞ্চলের লোকজনেরা স্বর্বশান্ত হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনকে ত্রাণ তৎপরতায় এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকরামপুর এলাকায় মান্দা-আত্রাই বাঁধের সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পানিবন্দী মানুষেরা বাঁশ, খড় ও পলিথিন দিয়ে তাঁবু করে আশ্রয় নিয়েছেন। বাঁধের ওপরেই চলছে খাবার রান্নার কাজ। সংকট দেখা দিয়েছে নিরাপদ পানির। খোলা আকাশের নিচেই দিন কাটছে বানভাসী মানুষদের।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত জুলাই মাসের বন্যায় ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের সব গ্রামই তলিয়ে গিয়েছিল। এবারও একই পরিস্থিতি। এক মৌসুমে দুই দফা বন্যায় এই এলাকার কৃষকেরা সর্বস্বান্ত। সব শ্রেণির মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।

এবারে বন্যা খুবই ভয়াবহ উল্লেখ করে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল হালিম বলেন, তিন ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার পরিবারের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাঁদের সরকারি সহযোগিতা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছানাউল ইসলাম জানিয়েছেন, এই উপজেলার সাত ইউনিয়নে বন্যার প্রকোপ ছড়িয়ে পরেছে। এতে প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেছেন। বন্যা দুর্গত এলাকার মধ্যে হাটকালুপাড়া ও কালিকাপুর ইউনিয়নের ৫ শতাধিক পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, তেল, চিড়া-মুড়ি ও বিস্কুটসহ শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এদিকে, নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বন্যায় নওগাঁর মান্দা, আত্রাই, রাণীনগর ও সদর উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার আত্রাই উপজেলায়।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ উজ্জামান খান বলেন, ‘গত জুলাই মাসে ১ম দফা বন্যায় পানির তোড়ে মান্দা ও আত্রাই উপজেলার পাঁচটি স্থানে মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ১০-১২টি জায়গায় বেড়ি বাঁধ ভেঙে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর ভাঙা বাঁধগুলো মেরামতের জন্য ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়। বেশির ভাগ ভেঙ্গে যাওয়া স্থানে বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। ‘

এই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘ভাঙ্গণ বেশি হওয়ায় এবং যথেষ্ট সময় না পাওয়ার কারণে মান্দার পার-নুরুল্যাবাদ, চকরামপুর ও জোকাহাট এবং আত্রাই উপজেলার যাত্রামূল এলাকায় আত্রাই মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কারকাজ শেষ করা সম্ভব হয় নি।’

আমিনুল জুয়েল

ফের বন্যায় নওগাঁর ১০ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

আপডেট সময় : ০৬:৩৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

আমিনুল জুয়েল, নওগাঁ প্রতিনিধি: টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নওগাঁর আত্রাই নদের পানি বেড়ে জেলার মান্দা ও আত্রাই উপজেলায় দ্বিতীয় দফা বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। পানি বাড়তে থাকায় আত্রাই নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আগের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি ঢুকছে। ফলে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। ভেসে গেছে শত শত পুকরের মাছ। জেলার মান্দা ও আত্রাই উপজেলার দশটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিচ্ছে নতুন রোগ-ব্যাধি। ঘরে পানি প্রবেশ করায় মানুষ এখন নিজ বাড়িতে বানানো মাচা ও টিনের চালে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বাঁধ ও সড়কের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। দুই দফা বন্যার কারণে এলাকার নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। প্রথম দফা বন্যায় নওগাঁর নিম্নাঞ্চলগুলোতে পাট ও সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারের বন্যায় তলিয়ে গেছে আমন ক্ষেতও। গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন বানভাসী লোকজনেরা।

রিফাত হত্যার পর মিন্নিকে শেষ বার্তায় যা বলেছিল নয়ন বন্ড

আত্রাই নদীর বাঁধের ভাঙ্গণ দিয়ে পানি প্রবেশ করে মান্দা উপজেলার কশব, বিষ্ণুপুর ও নুরুল্যাবাদসহ আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া, কালিকাপুর, আহসানগঞ্জ, শাহাগোলা, বিশা, পাঁচুপুর ও ভোঁপাড়া ইউনিয়ন সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। এদিকে, আত্রাই নদের পানি ধামইরহাটের শিমুলতলী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শুকুর আলী জানান, বন্যায় এই অঞ্চলের লোকজনেরা স্বর্বশান্ত হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনকে ত্রাণ তৎপরতায় এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকরামপুর এলাকায় মান্দা-আত্রাই বাঁধের সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পানিবন্দী মানুষেরা বাঁশ, খড় ও পলিথিন দিয়ে তাঁবু করে আশ্রয় নিয়েছেন। বাঁধের ওপরেই চলছে খাবার রান্নার কাজ। সংকট দেখা দিয়েছে নিরাপদ পানির। খোলা আকাশের নিচেই দিন কাটছে বানভাসী মানুষদের।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত জুলাই মাসের বন্যায় ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের সব গ্রামই তলিয়ে গিয়েছিল। এবারও একই পরিস্থিতি। এক মৌসুমে দুই দফা বন্যায় এই এলাকার কৃষকেরা সর্বস্বান্ত। সব শ্রেণির মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।

এবারে বন্যা খুবই ভয়াবহ উল্লেখ করে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল হালিম বলেন, তিন ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার পরিবারের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাঁদের সরকারি সহযোগিতা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছানাউল ইসলাম জানিয়েছেন, এই উপজেলার সাত ইউনিয়নে বন্যার প্রকোপ ছড়িয়ে পরেছে। এতে প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেছেন। বন্যা দুর্গত এলাকার মধ্যে হাটকালুপাড়া ও কালিকাপুর ইউনিয়নের ৫ শতাধিক পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, তেল, চিড়া-মুড়ি ও বিস্কুটসহ শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এদিকে, নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বন্যায় নওগাঁর মান্দা, আত্রাই, রাণীনগর ও সদর উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার আত্রাই উপজেলায়।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ উজ্জামান খান বলেন, ‘গত জুলাই মাসে ১ম দফা বন্যায় পানির তোড়ে মান্দা ও আত্রাই উপজেলার পাঁচটি স্থানে মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ১০-১২টি জায়গায় বেড়ি বাঁধ ভেঙে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর ভাঙা বাঁধগুলো মেরামতের জন্য ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়। বেশির ভাগ ভেঙ্গে যাওয়া স্থানে বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। ‘

এই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘ভাঙ্গণ বেশি হওয়ায় এবং যথেষ্ট সময় না পাওয়ার কারণে মান্দার পার-নুরুল্যাবাদ, চকরামপুর ও জোকাহাট এবং আত্রাই উপজেলার যাত্রামূল এলাকায় আত্রাই মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কারকাজ শেষ করা সম্ভব হয় নি।’

আমিনুল জুয়েল