গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলে শনিবার হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস। হামলার পর ইসরাইল থেকে ভয়াবহ পালটা আক্রমণের স্মৃতিতে গা হিম হয়ে গেছে স্থানীয়দের। ভয়ে গাজা ছাড়ছেন শত শত মানুষ। যারা যেতে পারছেন না তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলায়। মজুত করছেন প্রয়োজনীয় সব জিনিস। অঞ্চলের সব বেকারি ও সুপার মার্কেটগুলোতেই এদিন চোখে পড়েছে ভীতসন্ত্রস্ত আতঙ্কিত মানুষের দীর্ঘ লাইন। আলজাজিরা, স্কাই নিউজ, জেরুজালেম পোস্ট।
ইসরাইলের দীর্ঘস্থায়ী সহিংস আক্রমণের আশঙ্কায় স্থানীয়রা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখছেন। শনিবার আলজাজিরার প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন নাগরিকরা। সঙ্গে কম্বল ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে নারী, পুরুষ ও শিশুরা। স্থানীয়ভাবেও সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হচ্ছে।
উত্তর গাজার আবু গাজি বলেন, ‘আমাদের স্কুলে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। ইসরাইলের আক্রমণ থেকে বাঁচতে আমার ২৫ সদস্যের পরিবার নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। আমাদের থাকার জায়গা সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় অনেক উদ্বেগজনক’।
হামলার পর ছোট শিশুরা বেশি ভয় পেয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গাজার ফেরাল আল-আত্তার (৬০) বলেন, ‘রকেট ছোড়ার পর শিশুদের জন্য আমাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে
হয়েছে। নিরাপদে থাকতে স্কুলে আশ্রয় নিতে হয়েছে আমাদের। কারণ আমরা বেশির ভাগই শিশু ও নারী।’ ইসরাইলি হামলার কারণে চতুর্থবারের মতো তারা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বলে জানান তিনি।
সারাদিন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছে আসিল (১২)। বলে, আমরা যুদ্ধের ভয়ে আছি। আমরা বাড়িতে ফিরে যেতে চাই।
অন্য একজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, তারা শিশুদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আলজাজিরাকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে বিপুলসংখ্যক মৃত ও আহত মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। হাসপাতালগুলোতে রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বছরের পর বছর ধরেই অধিকৃত ইসরাইলি অবরোধের কারণে সৃষ্ট কষ্টের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে অধিকৃত গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের। বেকারত্ব, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা আর প্রতিনিয়ত হামলার সঙ্গে দিন কাটিয়েছেন তারা।
গত সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ হামলাটি করা হয়েছিল। সে সময় আহত হয়েছিলেন ২২ জন।
২০০৭ সালের জুনে ইসরাইল এই অঞ্চলে একটি বায়ুরোধী স্থল, সমুদ্র ও আকাশে অবরোধ আরোপ করেছিল। গাজার আকাশসীমা, আঞ্চলিক জলসীমা আর তিনটি সীমান্ত ক্রসিং দখল করে নিয়েছিল দেশটি।
অবরোধের আগে বেকারত্ব ২৩.৬ শতাংশ থেকে ২০২২ সালের শেষে ৪৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। জেনেভাভিত্তিক ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর অনুযায়ী, দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালে ৪০ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ৬১.৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
গাজার বাসিন্দাদের বর্তমানে দিনে প্রায় ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। বিশেষ করে গরমের মাসগুলোর তীব্র চাহিদার সময়গুলোতে।
এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে চলমান সহিংসতার জন্য ইসরাইলকে একাই দায়ী করেছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
উভয়পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের বিরুদ্ধে অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধ শুরুর অজুহাত হিসাবে ইসরাইল যেন এই ঘটনাগুলোকে ব্যবহার না করতে পারে সেই লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
- ফিলিস্তিন