প্রযুক্তি ডেস্কঃসূর্যের চারিদিকে আবর্তনের সঙ্গে পৃথিবী নিজ অক্ষেও দিনে একবার ঘুরছে – এই তথ্য হয়তো অনেকেরই জানা। কিন্তু পৃথিবীর এই ঘূর্ণন গতি কি সবসময় একই থাকে?
পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ছোট ২৮ দিনের প্রত্যাকটিই রেকর্ড করা হয় ২০২০ সালে। আর ঠিক তখনই দিনের দৈর্ঘ কমে যাওয়া নিয়ে নড়েচড়ে বসেন জ্যোতির্বিদরা। বিভিন্ন হিসেব কষে পৃথিবীর আহ্নিক গতি বৃদ্ধির তথ্যের সঙ্গে আশ্চর্যজনক সব খবর বেরিয়ে আসে। এর আগে সবচেয়ে ছোট দিন রেকর্ড করা হয় ২০০৫ সালে। কিন্তু গতির খুব সূক্ষ্ম বৃদ্ধির ফলে ২০১৯ সালের চাইতে সামান্য দ্রুত শেষ হয়েছে ২০২০ সাল। গত কয়েক দশকের মধ্যে ২০২০ ছিল দ্রুততম বছর। আর ঠিক একই কারণে ২০২১ সাল শেষ হবে আরও তাড়াতাড়ি!
সময় পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দ্য টাইম এন্ড ডেট – এর জরীপে বেরিয়ে এসেছে এমন আশ্চর্যজনক তথ্য। সময়ের হিসেবে এক সেকেন্ডের ১০০ ভাগের এক ভাগকে ধরা হয় এক মিলিসেকেন্ড। বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী, স্বাভাবিক আহ্নিক গতির চাইতে এখন প্রতিদিন গড়ে এক দশমিক পাঁচ মিলিসেকেন্ড আগেই পৃথিবী নিজ অক্ষে একবার ঘুরে আসছে। তাই ২০২০ সালের চাইতে ২০২১ সালের দৈর্ঘ্য অন্তত শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ মিলিসেকেন্ড কম হতে পারে। ফলে ৫০ বছরের মধ্যে ২০২১ সালই হবে সবচেয়ে ছোট বছর। যদিও এই সূক্ষ্ম পরিবর্তন মানুষের পক্ষে অনুভব করা অসম্ভব।
মূলত আমাদের গণনার সুবিধার্থে ঘড়ির ২৪ ঘণ্টায় এক দিন ধরা হয়। তবে পৃথিবী নিজ অক্ষে আবর্তিত হতে এরচেয়ে সামান্য কম সময় নেয়। বিজ্ঞানীরা তাই ৮৬,৪০০ সেকেন্ডকে একটি দিনের আদর্শ দৈর্ঘ্য ধরেন। আর ঘড়ির কাটার ২৪ ঘণ্টার হিসেব মেলাতে নির্দিষ্ট সময় পরপর লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষের মতো তাদের হিসেবে যুক্ত হয় বাড়তি এক সেকেন্ড সময়। ১৯২৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৭ বার লিপ সেকেন্ড হিসেব করা হয়েছে। তবে আহ্নিক গতি একনাগাড়ে বাড়তে থাকলে এই লিপ সেকেন্ড গণনা বাদ দিতে হবে।
তবে জ্যোতির্বিদরা বলছেন এ নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। টাইমস এন্ড ডেটের জরীপ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর পৃথিবীর আহ্নিক গতির হ্রাসবৃদ্ধি হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। ভূগর্ভস্থ উপাদানের পরিবর্তন কিংবা সৌরজগতের অন্যান্য পদার্থের প্রভাবেও এ পরিবর্তন হয়ে থাকে। এর আগে ১৯৩৭ সালেও পৃথিবীর আহ্নিক গতি বাড়ায় সে বছরটি দ্রুত শেষ হয়। একইভাবে ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন এন্ড রেফারেন্স সিস্টেম সার্ভিস নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আহ্নিক গতি কমারও রেকর্ড লিপিবদ্ধ আছে। ১৯৬০ সালের পর বেশ কয়েকবার এই গতির হ্রাস হয়।