শরীয়তপুরে ২০ বছর পর হাবিব উকিল ও তার ভাই মনির হত্যা মামলায় ২৬ আসামি কারাগারে
এস এম স্বাধীন, শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুর জেলা আওয়সমী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জজ আদালতের সাবেক পিপি (সরকারি কৌঁসুলি) হাবীবুর রহমান ও তাঁর ভাই যুবলীগ নেতা মনির হোসেন মুন্সী হত্যা মামলায় আদালতে দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) শুনানি শেষে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইন মামলার ২৬ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে হাজির না হওয়ায় ১৪ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের পিপি মীর্জা মো. হযরত আলী জানান, স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনেছেন। যুক্তিতর্কের ওপর রাষ্ট্রপক্ষের মতামতের জন্য আগামী রোববার পুনরায় তারিখ ধার্য রয়েছে। সে দিন রায় দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এ কারণে আদালত ২৬ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আর মানবিক দিক বিবেচনায় ১২ আসামিকে ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন। মামলার বাকি ১৪ জন আসামি আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
মামলার এজাহার ও বাদীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জাজিরা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ। তখন আওরঙ্গের পক্ষে অবস্থান নেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ। ১ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জাজিরা উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়। স্থগিত হওয়া সেই নির্বাচন নিয়ে ৫ অক্টোবর শহরে হাবীবুর রহমানের বাসভবনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে সভা চলছিল। সেখানে হামলা চালান আওরঙ্গ-সমর্থক যুবলীগের সাবেক নেতা সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদারের লোকজন। তাঁর ভাই মন্টু তালুকদার সেখানে গুলিবিদ্ধ হন। কিছুক্ষণ পর ওই বাসভবনে আবার হামলা হয়। তখন হাবীবুর রহমান ও তাঁর ভাই মনির হোসেন খুন হন।
হাবীবুর রহমান তখন আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মনির হোসেন ছিলেন পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, হাবীবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত রহমানের করা হত্যা মামলায় আওরঙ্গকে প্রধান আসামি করা হয়। মোট ৫৫ ব্যক্তিকে আসামি করেন তিনি। পুলিশ তদন্ত শেষে আওরঙ্গের নাম বাদ দিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলার বাদী তখন আদালতে নারাজি দেন। আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর জিন্নাত রহমান উচ্চ আদালতে রিট করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন আওরঙ্গ। তিনি নানাভাবে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। ২০১৩ সালের ৩ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় আওরঙ্গ মারা যান। এরপর উচ্চ আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন পুলিশকে। পুলিশ ২০১৩ সালের অক্টোবরে আদালতে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আওরঙ্গ ছাড়াও ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামী শাহজাহান মাঝি ও স্বপন কোতোয়াল মৃত্যুবরণ করেছেন। আর মামলার চার আসামি পালিয়ে বিদেশ চলে গেছেন।
হাবীবুর রহমানের ছেলে জজকোটের এপিপি ও শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান বলেন, ‘আমার বাবা ও চাচার হত্যার বিচার দেখার জন্য ২০ বছর ধরে অপেক্ষায় আছি। এ ২০ বছর অনেক কষ্ট ও চাপের মধ্য দিয়ে আমাদের দিন কাটাতে হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার পরিবারের পাশে ছিলেন বলেই আমরা টিকে রয়েছি। আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা আছে, নিশ্চয়ই হত্যাকারীরা কঠিন শাস্তি পাবেন।’