ঢাকা ০৮:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo খাগড়াছড়িতে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস পালিত Logo পাহাড়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বাড়াতে টার্গেট সেনাবাহিনী Logo খাগড়াছড়িতে সেনা ক্যাম্প স্থাপনে বাধা প্রদানের প্রতিবাদে ঢাবিতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল Logo একটি স্নাইপার বুলেটই যথেষ্ট: বাঙালি নেতাকে কেএনএফ-এর হুমকি! Logo খাগড়াছড়িতে নাশকতার পরিকল্পনা করছে ইউপিডিএফ Logo সামনে ঘোর অন্ধকার-আমরা ঘুমাচ্ছি Logo খাগড়াছড়িতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে যুবদলের প্রতিষ্ঠা বাষিকী পালিত Logo কিশোরগঞ্জে ৫ দফা দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল Logo হোসেনপুরে পুলিশের হাত থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিল বিএনপি নেতারা Logo কিশোরগঞ্জ শহরে অটোরিকশার যানজট ও ফুটপাত দখল ভাঙতে মাঠে নামলেন ডিসি ফৌজিয়া খান

৫ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে কেনার প্রস্তাব

Astha DESK
  • আপডেট সময় : ০২:৩৬:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১০৭৫ বার পড়া হয়েছে

ফগার মেশিন ৫ লাখ, ময়লা ফেলার ট্রলি সাড়ে ৭ লাখ। ৫ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে কেনার প্রস্তাব

আস্থা ডেস্কঃ

মশাবাহিত রোগ ও বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নতির জন্য একটি প্রকল্প নিচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি)। এক ফগার মেশিন ৫ লাখ, ময়লা ফেলার ট্রলির দাম ধরা হয়েছেসাড়ে ৭ লাখ।

প্রকল্পটিতে মশা মারার ধোঁয়া ছাড়ার ১শ টি ফগার মেশিন কিনতে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। অর্থাৎ, একেকটি ফগার মেশিনের দাম পড়ছে পাঁচ লাখ টাকা। অথচ বাজারে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে এসব ফগার মেশিন পাওয়া যাচ্ছে।

প্রকল্পটিতে বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা সরানোর জন্য ৪০টি হুইল ব্যারো বা ময়লা স্থানান্তরের ট্রলি কিনতে খরচ ধরা হয়েছে তিন কোটি টাকা। অর্থাৎ একটি ট্রলি কিনতে খরচ পড়ছে সাড়ে সাত লাখ টাকা। অথচ এসব ট্রলি অন্য প্রকল্পে মাত্র ২০ হাজার টাকায় কেনা হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্পটিতে অন্য কেনাকাটায়ও এমন অধিকাংশ পণ্য মূল দামের চেয়ে ৫ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

৩ গাড়িতে ব্যয় ৭ কোটি

এলজিইডির প্রকল্প প্রস্তাবে রয়েছে নানা অসঙ্গতি। সরকারের নিষেধাজ্ঞার পরও প্রকল্পে বিলাসবহুল গাড়ি কেনা ও বিদেশ সফরের কথা বলা হয়েছে। যদিও চট্টগ্রাম বাদে বাকি এলাকা ঢাকার আশপাশেই। সরকারি অর্থে প্রতিটিতে কোটি টাকার বেশি খরচ করে তিনটি জিপ কেনার জন্য ধরা হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। সেগুলোর পেছনে খরচ ধরা হয়েছে আরও সাড়ে তিন কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গাড়ির জন্য ব্যয় হবে সাত কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সবশেষ সার্কুলার অনুযায়ী যানবাহন কেনার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রকল্প ঋণের আওতায় যেহেতু যানবাহন কেনা বাদ দিতে হবে, প্রয়োজনে কিছু গাড়ি ভাড়া নেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া এখন সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রকল্পে বিদেশ সফরও নিষেধ রয়েছে। এটাও বাদ দেওয়া যেতে পারে।

এদিকে জিওবির আওতায় বিভিন্ন বিষয়ের মেরামত খাতে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আসবাবপত্রে দুই কোটি, কম্পিউটারে দুই কোটি, অফিস সরঞ্জামে দেড় কোটি, মেশিনারি-ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জামে দুই কোটি এবং সাজসজ্জায় পাঁচ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অনেক বেশি বলে মনে করছে কমিশন। এজন্য এসব খাতে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর কথা বলা হয়েছে।

প্রকল্প ঋণের আওতায় পরিচালন ব্যয়ের পেছনেই প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগ বা ১৭৯ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ব্যয় অনেক বেশি মন্তব্য করে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর কথাও বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

তিন অফিসারের বেতন-ভাতা ৩ কোটি ৪০ লাখ

প্রকল্পে তিনজন অফিসারের জন্য বেতন-ভাতায় খরচ হবে তিন কোটি ৪০ লাখ টাকা। তারপরেও চার লাখ টাকা অবসর ভাতা, বিশ্রাম ভাতা পাঁচ লাখ টাকা, বিনোদন ভাতা চার লাখ টাকা, মোবাইল ভাতা চার লাখ টাকা, আবাসিক ফোন ভাতা চাওয়া হয়েছে ছয় লাখ টাকা। সবই ব্যয় করা হবে সরকারি অর্থ থেকে। টিভি, রেডিও পত্রিকায় প্রচার ও প্রচারণা খাতে ব্যয় হবে ৭২ কোটি টাকা।

প্রকল্প ঋণের আওতায় আউটসোর্সিং সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে ২৬৬ জনের জন্য ৬০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাজের ধরন দেওয়া হয়নি।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, বিদেশে প্রশিক্ষণ ছাড়াও প্রকল্প ঋণের অর্থায়নে স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাবদ ৯৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কোন বিষয়ে কতজনকে, কাদের কোন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তা জানানো হয়নি।

দেশে মশা নির্মূল ও স্বাস্থ্যখাতের কাজ বছরের পর বছর ধরে চলে এলেও প্রকল্প ঋণের অর্থায়নে ১৩ জন পরামর্শকের পেছনে ৩৯ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এত পরামর্শক ও তাদের পেছনে ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে।

কমিশন বলেছে, এ প্রকল্পে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জনবলের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে বৈদেশিক অর্থায়নের নিশ্চয়তাও পাওয়া যায়নি। আগে অর্থায়ন ঠিক করতে হবে।

জানা যায়, মশা মারার পাশাপাশি মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অসংক্রামক রোগ বিষয়েও কার্যক্রম থাকবে এ প্রকল্পে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সাভার পৌরসভা ও নারায়ণগঞ্জের তারাবো পৌরসভায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৮ মেয়াদে পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

ট্যাগস :

৫ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে কেনার প্রস্তাব

আপডেট সময় : ০২:৩৬:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফগার মেশিন ৫ লাখ, ময়লা ফেলার ট্রলি সাড়ে ৭ লাখ। ৫ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে কেনার প্রস্তাব

আস্থা ডেস্কঃ

মশাবাহিত রোগ ও বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নতির জন্য একটি প্রকল্প নিচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি)। এক ফগার মেশিন ৫ লাখ, ময়লা ফেলার ট্রলির দাম ধরা হয়েছেসাড়ে ৭ লাখ।

প্রকল্পটিতে মশা মারার ধোঁয়া ছাড়ার ১শ টি ফগার মেশিন কিনতে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। অর্থাৎ, একেকটি ফগার মেশিনের দাম পড়ছে পাঁচ লাখ টাকা। অথচ বাজারে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে এসব ফগার মেশিন পাওয়া যাচ্ছে।

প্রকল্পটিতে বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা সরানোর জন্য ৪০টি হুইল ব্যারো বা ময়লা স্থানান্তরের ট্রলি কিনতে খরচ ধরা হয়েছে তিন কোটি টাকা। অর্থাৎ একটি ট্রলি কিনতে খরচ পড়ছে সাড়ে সাত লাখ টাকা। অথচ এসব ট্রলি অন্য প্রকল্পে মাত্র ২০ হাজার টাকায় কেনা হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্পটিতে অন্য কেনাকাটায়ও এমন অধিকাংশ পণ্য মূল দামের চেয়ে ৫ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

৩ গাড়িতে ব্যয় ৭ কোটি

এলজিইডির প্রকল্প প্রস্তাবে রয়েছে নানা অসঙ্গতি। সরকারের নিষেধাজ্ঞার পরও প্রকল্পে বিলাসবহুল গাড়ি কেনা ও বিদেশ সফরের কথা বলা হয়েছে। যদিও চট্টগ্রাম বাদে বাকি এলাকা ঢাকার আশপাশেই। সরকারি অর্থে প্রতিটিতে কোটি টাকার বেশি খরচ করে তিনটি জিপ কেনার জন্য ধরা হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। সেগুলোর পেছনে খরচ ধরা হয়েছে আরও সাড়ে তিন কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গাড়ির জন্য ব্যয় হবে সাত কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সবশেষ সার্কুলার অনুযায়ী যানবাহন কেনার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রকল্প ঋণের আওতায় যেহেতু যানবাহন কেনা বাদ দিতে হবে, প্রয়োজনে কিছু গাড়ি ভাড়া নেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া এখন সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রকল্পে বিদেশ সফরও নিষেধ রয়েছে। এটাও বাদ দেওয়া যেতে পারে।

এদিকে জিওবির আওতায় বিভিন্ন বিষয়ের মেরামত খাতে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আসবাবপত্রে দুই কোটি, কম্পিউটারে দুই কোটি, অফিস সরঞ্জামে দেড় কোটি, মেশিনারি-ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জামে দুই কোটি এবং সাজসজ্জায় পাঁচ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অনেক বেশি বলে মনে করছে কমিশন। এজন্য এসব খাতে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর কথা বলা হয়েছে।

প্রকল্প ঋণের আওতায় পরিচালন ব্যয়ের পেছনেই প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগ বা ১৭৯ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ব্যয় অনেক বেশি মন্তব্য করে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর কথাও বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

তিন অফিসারের বেতন-ভাতা ৩ কোটি ৪০ লাখ

প্রকল্পে তিনজন অফিসারের জন্য বেতন-ভাতায় খরচ হবে তিন কোটি ৪০ লাখ টাকা। তারপরেও চার লাখ টাকা অবসর ভাতা, বিশ্রাম ভাতা পাঁচ লাখ টাকা, বিনোদন ভাতা চার লাখ টাকা, মোবাইল ভাতা চার লাখ টাকা, আবাসিক ফোন ভাতা চাওয়া হয়েছে ছয় লাখ টাকা। সবই ব্যয় করা হবে সরকারি অর্থ থেকে। টিভি, রেডিও পত্রিকায় প্রচার ও প্রচারণা খাতে ব্যয় হবে ৭২ কোটি টাকা।

প্রকল্প ঋণের আওতায় আউটসোর্সিং সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে ২৬৬ জনের জন্য ৬০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাজের ধরন দেওয়া হয়নি।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, বিদেশে প্রশিক্ষণ ছাড়াও প্রকল্প ঋণের অর্থায়নে স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাবদ ৯৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কোন বিষয়ে কতজনকে, কাদের কোন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তা জানানো হয়নি।

দেশে মশা নির্মূল ও স্বাস্থ্যখাতের কাজ বছরের পর বছর ধরে চলে এলেও প্রকল্প ঋণের অর্থায়নে ১৩ জন পরামর্শকের পেছনে ৩৯ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এত পরামর্শক ও তাদের পেছনে ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে।

কমিশন বলেছে, এ প্রকল্পে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জনবলের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে বৈদেশিক অর্থায়নের নিশ্চয়তাও পাওয়া যায়নি। আগে অর্থায়ন ঠিক করতে হবে।

জানা যায়, মশা মারার পাশাপাশি মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অসংক্রামক রোগ বিষয়েও কার্যক্রম থাকবে এ প্রকল্পে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সাভার পৌরসভা ও নারায়ণগঞ্জের তারাবো পৌরসভায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৮ মেয়াদে পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।