জেলা প্রতিনিধিঃঅরক্ষিত সীমান্ত পেরিয়ে এখনো দেশে ঢুকছে মানুষ। ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই চোরাই পথে দালালদের মাধ্যমে ভারত থেকে দেদারছে দেশে আসছে বাংলাদেশি নাগরিকরা। বিজিবির নিয়মিত অভিযানে হাতে গোনা কিছু অনুপ্রবেশকারীদের আটক করা হলেও একটি বড় অংশ তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে চলে আসছে।
এতে করে ভারত সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহে করোনার ভারতীয় ধরণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।বিজিবির তথ্য মতে, গত তিন মাসে প্রায় তিন শতাধিক নারী পুরুষকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদের কোনোভাবেই কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়নি। যা থেকে জেল কারাগারও এখন আশঙ্কায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও। তাদের দাবি, দ্রুত বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নিদের্শনা না মিললে ভারতের মত অবস্থা হতে পারে বাংলাদেশেরও।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্তসহ দেশের তিনটি সীমান্ত পথ খুলে দেওয়া হয়।
বিভিন্ন কাজে ভারতে গিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১৭ মে থেকে দর্শনা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরা শুরু করেছে বাংলাদেশিরা। গত ৬ দিনে ৪৫৯ নারী-পুরুষ দেশে ফিরেছেন। ভারতে আটকে পড়া এসব বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হলেও অবৈধ পথে দেশে ঢুকে পড়া নাগরিকদের কোয়ারেন্টিন কোনোভাবেই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
বরং অনুপ্রবেশকারীরা বিজিবির হাতে আটক হয়ে চলে যাচ্ছে জেলহাজতে। আবার যারা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে আসছে তারা চলে যাচ্ছে নিজ এলাকায়। ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই দেশে প্রবেশের পর ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে তারা। এ থেকে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টও ছড়িয়ে পরার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তথ্য বলছে, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বেনীপুর, ধোপাখালী, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মাটিলা, লড়াইঘাট, সামান্তা ও খোশালপুর সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটছে। যাদের নেই কোনো পাসপোর্ট ভিসা। ভারতের অংশ ও বাংলাদেশের অংশে দালালদের সেতুবন্ধনে পারাপার হচ্ছে শ শ মানুষ। তারা দেশে প্রবেশ করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ভারতে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে তারা কোনো উপায়ন্তু না পেয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসছে।
ঝিনাইদহের মহেশপুর ৫৮-বিজিবির তথ্যমতে, গত তিন মাসে অন্তত ৮১৭ অনুপ্রবেশকারী নারী-পুরুষকে আটক করেছে তারা। আইনের বাধ্য বাধকতা থাকায় আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। পুলিশ তারপর আদালত এবং সবশেষ তারা চলে যাচ্ছে কারাগারে। এতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
মহেশপুর-৫৮ ব্যাটালিয়ন বিজিবির পরিচালক কামরুল হাসান জানান, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে। টহল দলের হাতে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক নারী পুরষ আটকও হয়েছে। তবে এ অঞ্চলে সীমান্ত কিছুটা অরক্ষিত থাকায় সুযোগ পাচ্ছে অনুপ্রবেশকারীরা। বিজিবি তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করছে।
এসব অরক্ষিত সীমান্ত পথ ব্যবহার করে চুয়াডাঙ্গায় আসছে মানুষ। তেমনই দুই জন ভারতফেরত বাংলাদেশি নাগরিক জানান, বিভিন্ন কাজের সূত্রে ভারতে অবস্থান করেন তারা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে করোনা পরিস্থিতির কারণে সে দেশে অবস্থান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই দেশে ফিরে এসেছেন। দেশে ফেরার প্রক্রিয়া করে দেন দু দেশের দালাল। প্রথমে ভারতীয় দালাল টাকার বিনিময়ে সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশ পার করে দেয়। পরে দেশে ঢুকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয় তারা।
এমন অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষকরা। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের চুয়াডাঙ্গা জেলার সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী বলেন, অবৈধ পথে দেশে ফেরার লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। একইসঙ্গে তাদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি স্বাস্থ্য বিভাগের অনুকূলের বাইরে চলে গেলে করার কিছুই থাকবে না। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকারে চুয়াডাঙ্গার সক্ষমতা একেবারেই কম। আর এরই মধ্যে যদি এভাবে ভারত থেকে অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান জানান, কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার দায়িত্ব শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের একক দায়িত্ব নয়। তাই সমন্বিত উদ্যোগে সীমান্তে অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। না হলে পরিস্থিতি বদলাতে সময় লাগবে না। সূত্র- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম