DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাবৃহস্পতিবার ২৬শে জুন ২০২৫
ঢাকাবৃহস্পতিবার ২৬শে জুন ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

আতঙ্কের নাম ‘’মব জাস্টিস” ভয়ে আছেন সাবেক আমলারা, ১০ মাসে হত্যা করা হয়েছে ১শ ৭২ জনকে

Astha Desk
জুন ২৬, ২০২৫ ২:৪২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আতঙ্কের নাম ‘’মব জাস্টিস” ভয়ে আছেন সাবেক আমলারা, ১০ মাসে হত্যা করা হয়েছে ১শ ৭২ জনকে।

মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছঃ

সারা দেশে একটি আতঙ্কের নাম ‘‘মব জাস্টিস’’। ৫ আগস্টের পর থেকে মব কালচার প্রকটভাবে সমাজে হাজির হয়েছে। ১০ মাসে হত্যা করা হয়েছে ১শ ৭২ জনকে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রচেষ্টায় মাঝে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও সম্প্রতি আবার সেটি মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে।

দেশে মব ভায়োলেন্সে নিহতদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও ছিল না। আসকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত আগস্ট থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১৭২ জনকে আট বিভাগে নির্বিচারে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৮০ জন, চট্টগ্রামে ২৮ জন, বরিশাল ও রাজশাহীতে ১৬ জন করে, খুলনায় ১৪ জন, রংপুরে ৭ জন, ময়মনসিংহে ৬ জন এবং সিলেটে ৫ জনকে হত্যা করা হয়। মবের সৃষ্টি করে সবচেয়ে বেশি হত্যাকান্ড ঘটেছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ওই মাসে ২৮ জনকে হত্যা করা হয়।

গত রোববার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে মব জাস্টিসের মাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন করার পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর সাবেক অনেক আমলা এবং আওয়ামী লীগের নেতারাও মব আতঙ্কে রয়েছেন।

প্রশ্ন উঠেছে, ‘’মব’’ কালচার কেন এখনো চলমান রয়েছে। কেন এটি বন্ধ করা যাচ্ছে না। এটা কি কেবলই আওয়ামী সুবিধাভোগী আমলা ও নেতাদের প্রতি ক্ষোভ নাকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলারও একটা ষড়যন্ত্র?

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, শুরুর দিকের অনেক ঘটনায় চুপ থাকলেও এখন মব জাস্টিসের ঘটনায় সরকার বেশ সরব। মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়াও শুরু করেছে তারা। মবের নামে সরকারকে বিব্রত করার কারও কোনো প্রচেষ্টা আছে কি না তাও এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সাবেক সিইসি নুরুল হুদার সঙ্গে মবের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, আটকের সময় সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থি ও ফৌজদারি অপরাধ। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় রাজধানীর উত্তরা থানা পুলিশ ৩ জনকে আটক করে।

এ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং নানা পর্যায়ে মানুষের যে ক্ষোভ, এগুলোর একটা আউটকাম হচ্ছে এই ধরনের সংঘবদ্ধ ঘটনাগুলো।

তিনি আরও বলেন, তবে যত ক্ষোভই থাকুক না কেন, এসব ঘটনা “মব” কোনোভাবেই সমাজের জন্য, সুশাসনের জন্য ইতিবাচক নয়। এসব ঘটনা কোনোভাবেই এলাউ করা যায় না। যারা এটা করে তারা অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। আইনের চোখে এদের পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। সরকার এই ব্যাপারে একেবারে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে। আইনি ভিত্তিতে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্ব দেওয়া হবে না।

আরো পড়ুন :  দাঁড়িপাল্লা ফিরে পেল জামায়াতে ইসলামী

মবের সর্বশেষ শিকার সাবেক সিইসি নুরুল হুদাঃ-আতঙ্কে সাবেক আমলারাঃ-

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক এক সচিব বলেন, আমরা সরকারের কর্মচারী ছিলাম। সরকারের এমপি-মন্ত্রী যারা ছিলেন, তাদের হুকুম পালন করেছি। দীর্ঘদিন চাকরি শেষে যদি মবের শিকার হতে হয় তাহলে মান-সম্মান তো আর কিছুই থাকল না। যারা অন্যায় করেছে, আইনের মাধ্যমে বিচার হবে। আইনের বিচারের আগে এখন মব জাস্টিসের মাধ্যমে বিচার করা হচ্ছে; হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমরা ভয়ে আছি, আতঙ্কে আছি।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ, তবে ‘মব’ পিছু ছাড়ছে না ৫ আগস্ট-এর পর আওয়মী লীগের নেতারা বেশিরভাগ আত্মগোপনে চলে গেছেন। কেউ দেশে লুকিয়ে আছেন, কেউ দেশের বাইরে চলে গেছেন।

এদিকে সরকারও আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যেও মাঝে মধ্যে খবর আসে আওয়ামী নেতাকর্মীদের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার। অনেক জায়গায় মব জাস্টিসের নামে নির্যাতন করে তারপর পুলিশে সোপর্দ করা হচ্ছে। এই ভয়ে এখন আওয়ামী লীগের গুরুত্বহীন নেতারাও লুকিয়ে রয়েছে।

মবের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন, এখনও বলছেন। তারা তাদের কর্মীদের সর্তক করেছেন মব না করতে। তারপরও এটি থামানো যাচ্ছে না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, অপরাধী যত বড়ই হোক, ‘মব জাস্টিস’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিচার সমর্থনযোগ্য নয়। গত তিনটি নির্বাচন ছিল শেখ হাসিনার একক নাটকীয় নির্বাচন। এসব নির্বাচনের সময়কার সকল নির্বাচন কমিশনারই ফ্যাসিবাদের অংশ। তবে তারা যত বড় অপরাধীই হোক, বিচার হবে আইনের মাধ্যমেই, মব জাস্টিসের মাধ্যমে নয়। মব জাস্টিস সমর্থনযোগ্য নয়।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, সরকার যতদিন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হবে, ততদিন সমাজ থেকে মবোক্রেসি বন্ধ হবে না। মব উৎপাদনের দায় পুরোপুরি সরকারের। সরকারের দুর্বলতার কারণেই বারবার মবের ঘটনা ঘটছে।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৩:৪২
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৮:৫৩
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৩:৪৭
  • ১২:০৪
  • ১৬:৪১
  • ১৮:৫৩
  • ২০:২০
  • ৫:১২