ঢাকা ১১:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo মানবতার ডাক’-এর মহতী উদ্যোগ: মরণ ফাঁদ রাস্তায় ফেরালো জীবনের চলাচল Logo গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ জাতিসংঘ আদালতের Logo মাটিরাঙ্গায় গনধর্ষণের শিকার কিশোরী: আটক-২ Logo শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় পাহাড়ে কাজ করছে বিজিবি Logo ন্যায্য দাবি আদায়ে দীঘিনালায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি Logo শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা হবে মোট ১৫ শতাংশ, দুই ধাপে দেওয়া হবে Logo দশমিনায় জেলেদের জিম্মি করে ছাত্রদল নেতার চাঁদাবাজি Logo বেনাপোলে কোটি টাকার বকেয়া আদায়ের দাবিতে আমদানিকারকের সংবাদ সম্মেলন Logo মানবতার আলোর পথে: লালন দর্শনের নতুন পাঠ Logo পরিমাপের ক্ষেত্রে মানসম্মত পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম : ড. ইউনূস

আত্মসাৎ হয়েছে সমবায় ব্যাংকের ১১ হাজার ভরি সোনা

Astha DESK
  • আপডেট সময় : ০২:৪১:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১০৪৪ বার পড়া হয়েছে

আত্মসাৎ হয়েছে সমবায় ব্যাংকের ১১ হাজার ভরি সোনা

আস্থা ডেস্কঃ

ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানকৃত বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহি ২০২১ সালের আগে ২ হাজার ৩শ ১৬ গ্রাহকের বন্ধক রাখা ১১ হাজার ভরির বেশি (প্রতি ভরি ১১ দশমিক ৬৬ গ্রাম) সোনা আত্মসাৎ করেছে। তখন আত্মসাৎ করা সোনার মূল্য ছিল ১শ কোটি টাকার বেশি। তাকে সহযোগিতা করেন সমবায় ব্যাংকের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শেষ করে একটি মামলা দায়ের করেছিল।

মামলার এজাহারে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহিসহ আট ব্যাংক কর্মকর্তার নাম আছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে আটক করা হলেও মহিউদ্দিন আহমেদ মহি নেই। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন।

দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আখতারুল ইসলাম বলেন, মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি ও অন্যরা প্রতারণার মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ার পাশ কাটিয়ে ২ হাজার ৩শ ১৬ জন গ্রাহকের বন্ধক রাখা সাত হাজার ৩শ ৯৮ ভরি ১১ আনা সোনা আত্মসাৎ করেন।

সমবায় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল গনি বলেন, আমরা যত দূর জানি ২ হাজার ৩শ ১৬ জন গ্রাহকের ৭ হাজার ৩শ ৯৮ ভরি ও ১১ আনা বন্ধকি স্বর্ণ আত্মসাৎ করা হয়েছে, এটি স্বর্ণের নিট ওজন। তবে মোট ওজন ১১ হাজার ভরি ছাড়িয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে মহিউদ্দিন আহমেদ মহির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

তদন্তকালে সমবায় ব্যাংকের ঢাকা শাখার অনুমোদন পাওয়া বন্ধকী সোনা ফেরত চাওয়া ৪শ ৫৫টি আবেদন সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করেছিল দুদক। এতে দেখা গেছে, এর মধ্যে মাত্র ১শ ২০টি আবেদন প্রকৃত মালিকরা করেছেন, বাকি ৩শ ৩৫টি আবেদনে স্বাক্ষরে অসঙ্গতি দেখা গেছে এবং সংশ্লিষ্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি।

তদন্তে জানা গেছে, এই ব্যক্তিরা প্রকৃত মালিকদের পরিবর্তে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বন্ধকী সোনা সরিয়েছে। এভাবে ওই সময় আট কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের ১ হাজার ৫শ ৯৪ ভরি ১৪ আনা সোনা আত্মসাৎ করা হয়।

তদন্তে আরও দেখা যায়, ব্যাংক কর্মকর্তারা সহযোগিতা না করলে তাদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেডও তাদের গ্রাহকদের বিপুল পরিমাণে সোনা বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকে রেখেছিল। সেই বন্ধকী সোনার জন্য দুদক ১ হাজার ৯শ ৮৪টি আবেদন খুঁজে পেয়েছে। যেগুলো ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছিল। অথচ এই আবেদনগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটি আবেদন বৈধ ছিল।

বাকি আবেদনগুলোর স্বাক্ষর ও পরিচয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে। ফলে, এখান থেকে ৫ হাজার ৮শ ৩টি ভরি ১৩ আনা সোনা আত্মসাৎ করা হয়েছে, যার মোট মূল্য ১শ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

সব মিলিয়ে ২ হাজার ৩শ ১৬ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকার স্বর্ণ আত্মসাৎ করা হয়। কিন্তু বন্ধকী পরিশোধ করায় এই প্রতারণার ফলে আত্মসাতের অঙ্ক দাঁড়ায় ১১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল গনি বলেন, যখন ব্যাংকের চেয়ারম্যানই প্রধান অপরাধী, তখন ব্যাংকের পক্ষে কিছু করার থাকে না। তবে সব আসামিকে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) করা হয়েছে এবং তাদের কাউকেই ব্যাংকে ফিরিয়ে আনা হয়নি।

ট্যাগস :

আত্মসাৎ হয়েছে সমবায় ব্যাংকের ১১ হাজার ভরি সোনা

আপডেট সময় : ০২:৪১:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪

আত্মসাৎ হয়েছে সমবায় ব্যাংকের ১১ হাজার ভরি সোনা

আস্থা ডেস্কঃ

ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানকৃত বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহি ২০২১ সালের আগে ২ হাজার ৩শ ১৬ গ্রাহকের বন্ধক রাখা ১১ হাজার ভরির বেশি (প্রতি ভরি ১১ দশমিক ৬৬ গ্রাম) সোনা আত্মসাৎ করেছে। তখন আত্মসাৎ করা সোনার মূল্য ছিল ১শ কোটি টাকার বেশি। তাকে সহযোগিতা করেন সমবায় ব্যাংকের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শেষ করে একটি মামলা দায়ের করেছিল।

মামলার এজাহারে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহিসহ আট ব্যাংক কর্মকর্তার নাম আছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে আটক করা হলেও মহিউদ্দিন আহমেদ মহি নেই। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন।

দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আখতারুল ইসলাম বলেন, মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি ও অন্যরা প্রতারণার মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ার পাশ কাটিয়ে ২ হাজার ৩শ ১৬ জন গ্রাহকের বন্ধক রাখা সাত হাজার ৩শ ৯৮ ভরি ১১ আনা সোনা আত্মসাৎ করেন।

সমবায় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল গনি বলেন, আমরা যত দূর জানি ২ হাজার ৩শ ১৬ জন গ্রাহকের ৭ হাজার ৩শ ৯৮ ভরি ও ১১ আনা বন্ধকি স্বর্ণ আত্মসাৎ করা হয়েছে, এটি স্বর্ণের নিট ওজন। তবে মোট ওজন ১১ হাজার ভরি ছাড়িয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে মহিউদ্দিন আহমেদ মহির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

তদন্তকালে সমবায় ব্যাংকের ঢাকা শাখার অনুমোদন পাওয়া বন্ধকী সোনা ফেরত চাওয়া ৪শ ৫৫টি আবেদন সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করেছিল দুদক। এতে দেখা গেছে, এর মধ্যে মাত্র ১শ ২০টি আবেদন প্রকৃত মালিকরা করেছেন, বাকি ৩শ ৩৫টি আবেদনে স্বাক্ষরে অসঙ্গতি দেখা গেছে এবং সংশ্লিষ্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি।

তদন্তে জানা গেছে, এই ব্যক্তিরা প্রকৃত মালিকদের পরিবর্তে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বন্ধকী সোনা সরিয়েছে। এভাবে ওই সময় আট কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের ১ হাজার ৫শ ৯৪ ভরি ১৪ আনা সোনা আত্মসাৎ করা হয়।

তদন্তে আরও দেখা যায়, ব্যাংক কর্মকর্তারা সহযোগিতা না করলে তাদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেডও তাদের গ্রাহকদের বিপুল পরিমাণে সোনা বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকে রেখেছিল। সেই বন্ধকী সোনার জন্য দুদক ১ হাজার ৯শ ৮৪টি আবেদন খুঁজে পেয়েছে। যেগুলো ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছিল। অথচ এই আবেদনগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটি আবেদন বৈধ ছিল।

বাকি আবেদনগুলোর স্বাক্ষর ও পরিচয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে। ফলে, এখান থেকে ৫ হাজার ৮শ ৩টি ভরি ১৩ আনা সোনা আত্মসাৎ করা হয়েছে, যার মোট মূল্য ১শ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

সব মিলিয়ে ২ হাজার ৩শ ১৬ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকার স্বর্ণ আত্মসাৎ করা হয়। কিন্তু বন্ধকী পরিশোধ করায় এই প্রতারণার ফলে আত্মসাতের অঙ্ক দাঁড়ায় ১১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল গনি বলেন, যখন ব্যাংকের চেয়ারম্যানই প্রধান অপরাধী, তখন ব্যাংকের পক্ষে কিছু করার থাকে না। তবে সব আসামিকে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) করা হয়েছে এবং তাদের কাউকেই ব্যাংকে ফিরিয়ে আনা হয়নি।