আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে, বললেন ক্লাসে শুয়ে থাকা সেই শিক্ষিকা
স্টাফ রিপোর্টারঃ
বিদ্যালয় চলাকালীন শিক্ষার্থীদের দিয়ে হাত পাখায় বাতাস করিয়ে নেওয়া ও শ্রেণিকক্ষে বিছানা পেতে শুয়ে থাকার বিষয়ে মুখ খুলেছেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের গাড়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পেয়ারী বেগম।
সম্প্রতি তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ছবিগুলোর কোনটিতে শিক্ষিকা পেয়ারী বেগম বিছানা পেতে ঘুমাচ্ছেন। কোনটিতে তিনি ক্লাসে বসে খাতায় কিছু লিখছেন আর হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে এক শিক্ষার্থী। কোনটিতে তিনি ঘুমাচ্ছেন পাশে এক শিশু স্মার্ট ফোনে গেম খেলছে। দেখা যায়, শিক্ষিকার পাশে হাতপাখা, টিফিন বাটি, তার ভ্যানিটি ব্যাগ সবই রয়েছে।
পেয়ারী বেগম তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুল করিমের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৭ জুলাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর তাকে লাঞ্ছিতের লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন প্রধান শিক্ষক।
স্কুল শিক্ষিকা বলেন, আমি নির্দোষ। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। ওইদিন স্কুল ছুটির ৫ মিনিট আগে আমার প্রেসার উঠছিলো আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাই। তখন স্কুলের ম্যাডামরা আমাকে ওখানে শুইয়ে দেয়। এরপর প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুল করিম পিয়ন মিনারুলকে বলছে ছবিটা তুলে নে। তখন আমার মাথায় কাপড়ও ছিলো না যাতে করে মাথায় বাতাস পায়। পিয়ন ছবি তোলার পর প্রধান শিক্ষক, সভাপতি কাফি তিনজনে মিলে এই কাজটা করেছে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে তারা।
তিনি বলেন, এর আগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুইবার শিক্ষা অফিসে আমরা সহকারী শিক্ষকরা অভিযোগ দিয়েছিলাম। তিনি মহিলা শিক্ষকদের টর্চার করেন। শারিরিক মানসিক সব ধরনের টর্চার আমরা তার কাছ থেকে পাইছি। তিনি আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন সবসময়। কিন্তু শিক্ষা অফিসে দুই বার অভিযোগ করেও আমরা কোনো সমাধান পাইনি। আর আমরা তাদের কাছে ভুল স্বীকার করার প্রশ্নই আসে না। কোনো ভুল করি নাই মাফ কেন চাইব। বরং প্রধান শিক্ষকই বারবার আমার কাছে ভুল স্বীকার করেছেন। আর স্কুলের সভাপতি তো স্কুলেই আসেন না ৫ থেকে ৭ মাস ধরে। আমাকে বলা তো দূরের কথা, আমার তো কোনো ভুলই নাই।
তিনি আরও বলেন, ওই জায়গাটা ছিল পরিত্যক্ত একটা রুম। সেখানে স্কুলের দুই ম্যাডামের বাচ্চাদের শোয়ানো হয়। ওই রুমে ক্লাস হয় না। ওই রুমেই শোয়ানো হয় আমাকে। আর মাঝে মধ্যে আমরা সেখানে নামাজ পড়ি। ওই দিন প্রেসারটা অনেক বেড়ে গেছিলো। কেমন কেমন লাগতেছিলো তখন আমি পড়ে যাই। একটু বাতাস ও মাথায় পানি দেওয়ার পর আমার স্বামী স্কুলে এসে বাসায় নিয়ে গেছে।
অফিস সহায়ক মিনারুল বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নাই, ওটা সমাধান হয়ে গেছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল কাফি বলেন, যেসব বাচ্চারা স্কুলে আসেনি তাদের বিস্কুট ও উপবৃত্তির টাকা দেওয়া নিয়ে সহকারী শিক্ষক পেয়ারীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব হয়, পাল্টাপাল্টি অভিযোগও করে দুপক্ষ। আমি কিন্তু ওই স্কুল কম যাতায়াত করি। ওই ম্যাডামের বিরুদ্ধে আমার কাছে লিখিত অনেক অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য পক্ষে বিপক্ষে কিছু বলতে পারবো না। মূলত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটা সেটা কাউন্টার অভিযোগ। ওই ম্যাডামের সাথে ঝামেলা ছিলো আমার। তিনি আমাকে অনেক অপমান করেছেন।
প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুল করিম বলেন, আমি কেনো আমার শিক্ষকের বদনাম হবে এই পোস্ট করবো, ছবি তুলবো। এটা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমি সম্পূর্ণ দ্বায় মেনে নিবো। আমি কারো পিছনে লাগতেও যাবোনা। কেউ যদি আমার ক্ষতি করতে চায় করুক তার জন্য আল্লাহতায়ালা একজন আছেন। আমি কেনো এই কাজ করবো। যে কাজে মানুষের ক্ষতি হবে। আমি যদি এ কাজ করতাম সর্বপ্রথম আপনার কাছে বলতাম- দেখেন ভাই এই অবস্থা। আমি তো আপনাদের কাছে কখনো নালিশ করিনি।
তিনি আরও বলেন, এখন তো ওই শিক্ষিকা আমাকে জড়াবে, যাতে প্রধান শিক্ষকের ভাবমূর্তিটা নষ্ট হয়। কে ছবি তুলেছে আমি তো নিজেই জানি না। আমি তো মিডিয়ার মাধ্যমে জানলাম। তারপর তো আমি ওই শিক্ষিকাকে বললাম, এটা কিভাবে কি করেছেন এটা নিয়ে কানাকানি হইছে। মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার হইছে। তখন তিনি আমাকে বললেন, আমাকে ক্ষমা করে দেন। আপনারা এসেছেন তারপরেও তার বিরুদ্ধে আমি কিছু বলিনি।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান বলেন, তাকে ইতোমধ্যে শোকজ করা হয়েছে। আজ রোববার সে শোকজের কাগজ হাতে পাবে। সেদিন সে অসুস্থ ছিলো এমনটা আমিও শুনতেছি। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সেই শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকরা অভিযোগ দিয়েছিলো সেটি সমাধান হয়ে গেছে। আর এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতা পাইনি। তবে তদন্ত করে বলা যাবে আসল ঘটনা কি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, বাড়ির কাজ স্কুলে করার কোনো বিধান নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করানোরও কোনো নিয়ম নেই। আমরা ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় সিদ্ধান্ত নেবো।