আমার স্বামীই হারুন স্যারকে প্রথম আঘাত করেছে
আস্থা ডেস্কঃ
পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতা এবং রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব আজিজুল হক মামুনের সঙ্গে হওয়া ঘটনা নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগে অতিরিক্ত উপকমিশনার সানজিদা আফরিন নিপা বলেছেন, আমার স্বামীই প্রথম হারুন স্যারকে আঘাত করেছে। সানজিদা আফরিন আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী এবং ৩১তম বিসিএসের কর্মকর্তা।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সানজিদা গণমাধ্যমকে বলেন, আমি বেশ কয়েকদিন ধরে তীব্র ব্যথায় ভুগছিলাম। সেদিন পেইনটা একটু বেশিই হচ্ছিল। তাই তখন আমার একজন ডাক্তার দরকার ছিল। যেহেতু ইব্রাহিম কার্ডিয়াক স্যারের জুরিসডিকশনের মধ্যে পড়ে, তাই ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আমি স্যারের হেল্প চেয়েছিলাম। স্যারকে জানালে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ঠিক আছে, আমি আশেপাশে আছি। আমি এসে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে দিচ্ছি। এরপর স্যার আসলেন। আসার পর একজন ডাক্তার ম্যানেজ হলো। এরপর তিনি কিছু টেস্ট দিলেন। আমি ব্লাড টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিলাম। ইকু আর ইসিজিও করানো হলো।
সানজিদা বলেন, এই ঘটনার সময় আমি যে রুমে ইটিটি করানো হয়, সেই রুমে ছিলাম। ইটিটি করানোর ১৫-২০ মিনিট পর আমি বাইরে একটা গণ্ডগোলের শব্দ শুনি। আমার কানে প্রথম এসেছিল হারুন স্যারের কণ্ঠ-ভাইয়া, আপনি আমার গায়ে হাত দিলেন কেন? আপনি তো আমাকে মারতে পারেন না। আমাকে মারছেন কেন? এরপর হট্টগোলের মধ্যে দেখলাম আমার হাজবেন্ডসহ বেশ কয়েকজন স্যারকে (হারুন অর রশীদ) মারতে মারতে ইটিটি রুমের ভেতরে নিয়ে আসলেন। ওইসময় স্যার নিজের সেফটির জন্য আমি যেখানে দাঁড়ানো ছিলাম সেই রুমের কোনার দিকে দৌড়ে এসে দাঁড়ালেন। ইটিটি রুমে এতগুলো লোক ঢোকার কারণে তখন সেখানে একটা বিশ্রি পরিবেশ তৈরি হয়। তখন আমি চিৎকার করছিলাম।
তিনি আরও বলেন, এরপর আমার হাজবেন্ড তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বললেন, এই ভিডিও কর। এরপর সবাই ফোন বের করে ভিডিও করা শুরু করে। যখন তারা ভিডিও শুরু করে, তখন আমি আমার হাজবেন্ড এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনের সঙ্গে চিল্লাচিল্লি শুরু করছিলাম। এরপর যারা ভিডিও করছে আমি তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলে তাদের হাতের সঙ্গে লেগে আমার হাতেও আমি সামান্য ব্যথা পাই। কারণ আমি চাচ্ছিলাম না, ওই অবস্থায় কেউ আমার ভিডিও করুক। আর আমার হাজবেন্ডের সঙ্গে যেসব ছেলে ছিল আমি তাদের কাউকে চিনতামও না। ওই অবস্থায় আমার হাজবেন্ড আমার গায়ে হাত তোলে এবং স্যারকে বের করার চেষ্টা করছিলেন। তখন স্যারের কাছে বিষয়টি সেফ মনে হয়নি। এরপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। তখন হাসপাতালের সিকিউরিটি লোকজনও আসলেন। এর ১০/১৫ মিনিট পর হাসপাতাল থেকে ফোর্স আসলে তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়’।
এসব ঘটনার স্থান সময়ের বিষয়ে সানজিদা আফরিন বলেন, আমার ডাক্তার দেখানোর সিরিয়াল ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে। এরপর সাতটার দিকে স্যার (হারুন অর রশীদ) এসেছিলেন। পরে ডাক্তারও এসেছিলেন। এরপর আমি ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকি। ঘটনা ঘটেছে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের চারতলার কার্ডিওলজি বিভাগে।
অসুস্থতার বিষয়টি স্বামী জানতেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ, সেটা আমার হাজবেন্ড জানতেন। কিন্তু আমি যে সেদিনই ডাক্তার দেখাতে যাব, সেটা তিনি জানতেন না। এর আগেও বিভিন্ন সময় ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু সামহাউ উনি মিস করে গিয়েছিলেন অথবা বিজি ছিলেন। যেহেতু ছয় সাত দিন ধরে আমার সিভিয়ার টেস্ট পেইন হচ্ছিল, যাইহোক, সবসময় তো পরিস্থিতি একরকম থাকে না যে আমি তার সঙ্গে শেয়ার করব। যেহেতু আমার সিভিয়ার পেইন হচ্ছিল, তাই আমি নিজেই ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। কিন্তু সেদিন আমার হাসপাতালে যাওয়ার বিষয়টি তিনি কীভাবে জেনেছেন সেটা আমি জানি না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘পরকীয়া’র অভিযোগ অস্বীকার করে সানজিদা বলেন, ‘উনি (হারুন অর রশীদ) আমার সিনিয়র কলিগ। এর বাইরে আর কোনো বিষয় নেই’।
আপনার কী মনে হয় তিনি আপনার পেছনে কাউকে দিয়ে নজরদারি করছেন? জবাবে তিনি বলেন, করতে পারেন। তবে আমি নিশ্চিত নই।
সানজিদা বলেন, ওই ঘটনার পর আমার স্বামীর সঙ্গে আমার আর কোনো কথা হয়নি। আমি আমার অফিসেই আছি।