ওসিকে সাসপেন্ড করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি শিক্ষকের
রিয়াজুল হক সাগর/রংপুর প্রতিনিধিঃ
রংপুরে হার্ট এ্যাটাকে মারা যাওয়া মুদী দোকানদার সমেছ উদ্দিন হত্যা মামলা করে ষড়যন্ত্রমুলক ভাবে গ্রেফতারের ঘটনার মুল হোতা মেট্রোপলিটান হাজিরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহকে সাসপেন্ড করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে তাকে গ্রেফতারের পেছনে কারা কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বেরোবির গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক।
তিনি আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি হেয়াত মাহমুদ ভবনের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। তার দাবি বাস্তবায়ন করার জন্য অর্ন্তবর্তীকালিন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। অন্যথায় তিনি নিইে আইনের আশ্রয় নেয়া সহ আন্দোলনে যাবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন।
শিক্ষক মাহমুদুল হক গ্রেফতারের বর্ননা দিয়ে বলেন, ১৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রোগ্রাম শেষে বাসায় ফিরে আমার অষ্টম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছেলে সহ দুপুরের খাবার খেয়ে বসে ছিলাম। আমার স্ত্রী ও মেয়ে রাজশাহিতে অবস্থান করছিলো। দুপুর আড়াইটার দিকে সাদা পোশাকে ও পুলিশের পোশাক পড়ে মেট্রোপলিটান হাজিরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহ সহ কয়েকজন পুলিশ আমার বাসায় প্রবেশ করে আমার নাম ধরে জানতে চায় তখন আমি জানাই আমার নাম মাহমুদুল হক আমি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক।
এ সময় ওসি বলেন আমার নামে নাকি হাজিরহাট থানায় মুদী দোকানদার সমেছ উদ্দিনের মৃত্যুর মামলা আছে। ওই মামলায় আমি নাকি ৫৪ নম্বর আসামী। তিনি বলেন আমি কয়েক বছর হলো শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছি। আমি হাজির হাট থানা ও ওই এলাকার নামও শুনি নাই। সেই এলাকায় হত্যা বা মৃত্যুর ঘটনাও শুনি নাই। এরপর আমাকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়ে ওসি বলেন তাকে তাদের সাথে যেতে হবে।
আমিকে ওসিকে কাপড় চেঞ্চ করার সময় চাইলে আমাকে শুধু প্যান্ট পড়ার জন্য ১০ মিনিট সময় দেয়া হয়। এ সময় আমি আমার স্ত্রী সহ কারো সাথে কথা বলতে পারি নাই। এরপর আমাকে গাড়িতে তুলে নেয়া হয়। আমাকে নিয়ে যাবার সময় ওসিকে জিজ্ঞাসা করি আমাকে গ্রেফতারের বিষয়টি কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করা হয়েছে কিনা। ওসি ওই সময় মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার মজিদ অলীর সাথে ফোনে কথা বলেন। সম্ভবত পুলিশ কমিশনার আমাকে গ্রেফতার করার গ্রীন সিগনাল দেন। (কেন পুলিশ কমিশনার গ্রেফতার করার অনুমতি দিলে তা বলতে পারবোনা)।
এরপর আমাকে হাজিরহাট থানায় না নিয়ে গিয়ে সরাসরি মেট্রোপলিটান কোতয়ালী থা নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে ওই থানার ওসি আমাকে দেখেন তবে কিছু বলেন নাই। এরপর সেখানেই দ্রুততার সাথে কাগজপত্র ঠিক ঠাক করে আমাকে সরাসরি আদালতে নিয়ে গিয়ে হাজত খানায় ঢুকানো হয়। এর পর আমাকে দ্রুতি আদালতে বিচারকের কাছে তোলা হয় সেখানে মাত্র ৪ সেকেন্ডের মধ্যে আমাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। এরপর আমাকে আবারো আদালতের হাজত খানায় নেয়া হয়। আমি আমার আইনজিবীর স াথে কথা বলারও সুযোগ পাই নাই। পরে আমার আইনজিবী আসেন। আমাকে হাজির হাট থানার হার্ট এ্যাটাকে মারা যাওয়া এক ব্যাক্তির মামলায় ৫৪ নম্বর আসামী করা হয়। আমি রোববার জামিনে মুক্তি পাই। আমি অসুস্থ ছিলাম সংঘবদ্ধ চক্র আমার মতো অনেকেই মিথ্যা সাজানো মামলায় ভিকটিম হচ্ছে। কোন রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও অনেকেই কারাগারে অসহনীয় জীবন যাপন করছেন।
শিক্ষক মাহমুদুল হক বলেন দীর্ঘ দিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরী হয়েছে তারা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ড করানোর জন্য আমাকে ও দেশবাসিকে হেয় করার চক্রান্ত চালিয়ে আসছিলো।
তিনি বলেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমরা অংশ নিয়েছিলাম আমাদের জনআকাংখার প্রতিফলন হবে এই আশা নিয়ে। আমি গনঅধিকার কর্মী হিসেবে মামলা বানিজ্য , মামলা থেকে নাম বাদ দেবার বাজিন্য , চার্জসীট না দেবার বানিজ্য পরিবারকে নিস্ব করার বানিজ্য থেকে মুক্তি চাই। আমার মতো যারা নির্যাতিত নিপিড়িত তাদের ব্যাপারে সরকার ব্যাবস্থা নেবেন আশা করি।
তিনি বলেন দীর্ঘ ১৬/১৭ বছর ঢাকায় সাংবাকিতা করেছি। আমি ইউএনবিতে কাজ করেছি। সর্বশেষ ডেইলি ষ্টারে সিটি এডিটরে কাজ করেছি। এর পর দেশী বিদেশী অধিকার সংগঠনে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছি। শিক্ষকতায় যোগদান করেছি সাড়ে ৬ বছর আগে। বেরোবিতে দুর্নিতী বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী ছিলাম। তৎকালিন উপাচার্যের বিরুদ্ধে ৭৯০ পৃষ্টার দুর্নিতীর ফিরিস্তি প্রনয়ন জাতীয় পতাকা অবমাননার মামলা করেছি। এ সব কারনে একটি গোষ্টি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। পুরো ঘটনা তদন্ত করার দাবিও জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সহকর্মী সহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।