কুবি শিক্ষকের মৃত্যু; গাফিলতির অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
হৃদরোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ একলিমুর রেজার মৃত্যুও ঘটনায় বাড়ির মালিক ও চিকিৎসকদের গাফিলিতির অভিযোগ এনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রবিবার (২৩ জুলাই) সাড়ে ১০টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন শেষে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অবহেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকদের অপসারণসহ ছয় দফা দাবিতে স্বারকলিপি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ছয় দফা দাবিতে সকাল সাড়ে ১০টায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে সামনে মানববন্ধন করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোন সাড়া না পেয়ে প্রশাসনিক ভবনের অবস্থান করেন। উপ উপাচার্যের আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি তুলে নিয়ে বিভাগের শিক্ষকদের সাথে আলোচনায় বসেন তারা। আলোচনা শেষে ছয় দফা দাবিতে রেজিস্টার বরাবর স্বাকরলিপি প্রদান করেন।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরুল হাসানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মৃত্যু যখন চিকিৎসকদের অবহেলায় মারা যায় সেটা কখনো মেনে নেওয়ার না। আমাদের শিক্ষক যেদিন মারা গেছেন সেদিন আমাদের অন্যান্য শিক্ষকরা কেন তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেল। যেখানে চিকিৎসার নূন্যতম সেবা নেই। এমনকি কোন ধরণের গাইডলাইনই শিক্ষকরা দিতে পারেনি। এভাবে একজন শিক্ষক না ফেরার চলে গেল অথচ তিনদিনেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই।
তারা আরও দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তারদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কোন ধরণের সহযোগিতা করতে পারে নি। তাহলে আমাদের মেডিকেলের দরকার কী? শুধুমাত্র নাপা, স্যালাইন , গ্যাস্টিকের ঔষধ ছাড়া আর কিছু নেই এখানে। আমরা এখানকার ডাক্তারদের অপসারণ চাই এবং একটি আধুনিক মেডিকেল সেন্টারের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ছয় দফার দাবিগুলো হল বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অবহেলার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তারদের অপসারণ, একলিমুর রেজার নামে সুযোগ সুবিধা সম্বলিত মেডিকেল সেন্টার স্থাপন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক ডাক্তার নিয়োগ, একলিমুর রেজার প্রাপ্য আর্থিক প্রণোদনা এক মাসের মধ্যে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার দাবি জানান।
আন্দোলনের সমন্বয়ক ইমরুল হাসান বলেন, রেজা স্যারের মৃত্যুর সময় চিকিৎসকদের অবহেলা, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকদের অসহযোগিতাসহ যেসব অন্যায় করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আজকের এ মানববন্ধন । আমরা প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বস্ত করেছেন। যদি আমাদের দাবি মেনে ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে আমরা আরও কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলনে যাব।
এদিকে শিক্ষককের মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের গাফিলিতি ছিল না দাবি করে মেডিকেল সেন্টারের চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আমাকে যখন প্রক্টর স্যার কল দেয়, তখন আমি ট্রমা হাসপাতালে দায়িত্বরত ছিলাম। তখন আমি আমার সহকর্মীকে দিয়ে এম্বুলেন্স ম্যানেজ করেছি, পরামর্শ দিয়েছি। আমরা দায়িত্বে কোন ধরনের অবহেলা করি নাই।
ছয় দফা দাবিতে স্বারকলিপি প্রদান করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এবিষয়ে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের স্মারক লিপি হাতে পেয়েছে, এখন আমি কিছু বলতে পারতেছি না কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে যা সিদ্ধান্ত আসে তা জানাবো।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি উত্থাপন করেছে তাদের সাথে আমি একমত পোষণ করছি। মঙ্গলবার উপাচার্য মহোদয় আসলে এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারব।