খাগড়াছড়িতে নাশকতার পরিকল্পনা করছে ইউপিডিএফ
- আপডেট সময় : ১০:১৪:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
- / ১০৩৫ বার পড়া হয়েছে
খাগড়াছড়িতে নাশকতার পরিকল্পনা করছে ইউপিডিএফ
মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছঃ
খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষীছড়ির বর্মাছড়িতে রাষ্ট্রবিরোধী নাশকতা কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছে ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুোপ)। এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) আইএসপিআর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির রামসু বাজার এলাকায় ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্যদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলিতে তিনজন পাহাড়ি যুবক নিহত হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম যেসব এলাকায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প নেই সেসব এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়।
অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফের সশস্ত্র ক্যাডারের সদস্যরা খাগড়াছড়ির দুর্গম বর্মাছড়ি এলাকার বিভিন্ন পাড়া থেকে এসে রামসু বাজার এলাকায় সেনাবাহিনী এবং সাধারণ জনগণের ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য এলাকার মতো খাগড়াছড়ির বর্মাছড়ি এলাকায় গত ১৮ অক্টোবর থেকে সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনা শুরু করে। অভিযানের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর টহল দল মূল ক্যাম্প থেকে দূরবর্তী স্থানে অস্থায়ী পেট্রোল বেস স্থাপন করে বর্মাছড়ি এলাকা থেকে ইউপিডিএফের সশস্ত্র দলগুলোকে নির্মূল করার জন্য প্রয়োজনীয় আভিযানিক কার্যক্রম শুরু করে।
বর্মাছড়িতে সেনা অভিযান চলাকালে সেনা টহল দল একটি খালি জঙ্গলকীর্ণ এলাকায় অস্থায়ী পেট্রোল বেস স্থাপন করে, যা কি-না বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের খিরাম অংশের জমির অন্তর্ভুক্ত এবং বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বিহার থেকে ৫০০ মিটার পশ্চিম দিকে অবস্থিত। বর্মাছড়িতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এবং অভিযানের কারণে ইউপিডিএফের সশস্ত্র ক্যাডারগুলো পাড়া থেকে দ্রুত সরে গিয়ে দুর্গম কালাপাহাড় এলাকায় এবং পার্বত্য অঞ্চলের বাইরে ফটিকছড়ির দুর্গম অঞ্চলে অবস্থান নেয়।
দীর্ঘমেয়াদি সেনা অভিযানের কারণে খাগড়াছড়িতে আগামী মাসগুলোতে ইউপিডিএফের চাঁদা আদায় কার্যক্রম এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় তারা জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে অস্থায়ী সেনা পেট্রোল বেস স্থাপনের বিরুদ্ধে চিরাচরিত কৌশল হিসেবে এলাকার জনগণ, নারী এবং শিশুদের জোরপূর্বক জমায়েত করে আন্দোলন শুরু করে।
বন বিভাগের সংরক্ষিত জমিতে স্থাপিত অস্থায়ী পেট্রোল বেসের স্থানটিকে বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বিহারের অংশ হিসেবে দাবি করে একইসঙ্গে তারা দেশ এবং বিদেশ থেকে ব্যাপক অনলাইন প্রোপাগান্ডা এবং পার্বত্য অঞ্চলে যেখানে ইউপিডিএফের আধিপত্য আছে এমন সব এলাকায় পোস্টার লাগিয়ে পাহাড়ি জনগণকে উত্তেজিত করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ইউপিডিএফের নেতৃত্বে ২৪ অক্টোবর বর্মাছড়ি অস্থায়ী পেট্রোল বেসের কাছে আনুমানিক ১০০০ জন নারী, শিশু ও পুরুষদের জমায়েত করে এবং সেনা সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। তারা বর্মাছড়িতে স্থাপিত অস্থায়ী পেট্রোল বেস আর্য কল্যাণ বিহারের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করে এবং সেনাবাহিনী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। কিন্তু তাদের দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রকার প্রমাণাদি উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ির বর্মাছড়ি এলাকাটি একটি পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকা এবং নিকটবর্তী স্থানে কোনো সেনা ক্যাম্প না থাকার কারণে ইউপিডিএফ দীর্ঘ সময় ধরে সশস্ত্র দলের ক্যাম্পসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে। একইসঙ্গে বর্মাছড়ি এলাকাটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে সমতলের যোগসূত্র হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশের অভ্যন্তরে ইউপিডিএফের অস্ত্র চোরাচালানের রুট হিসেবেও ব্যবহার হয়ে আসছে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য এবং ইউপিডিএফের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে জানা যায়, ইউপিডিএফের (প্রসিত বিকাশ খীসা) সশস্ত্র দলের অর্থ সম্পাদক অর্কিড চাকমা বর্মাছড়ি এলাকার নেতৃত্ব পর্যায়ের একজন নেতাকে সেনা পেট্রোল বেসটি আর্য কল্যাণ বিহারের জমি না হওয়া সত্ত্বেও এলাকার হেডম্যান ওই জায়গাটি ‘ব্যাকডেট’ (পূর্বের তারিখ) দিয়ে কিয়াং ঘরের (আর্য কল্যাণ বিহার) জন্য দলিল তৈরি করে লিখে দেবে বলে জানায়।
অর্কিড চাকমা একইসঙ্গে এই বিষয়ে ভিক্ষু সংঘ কর্তৃক বিবৃতি দেওয়া হবে বলে ওই স্থানীয় নেতাকে বিহারে বড় পরিসরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করে।
গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, ইউপিডিএফ নেতা প্রসীত বিকাশ খীসা সেনাবাহিনীর অভিযানকে বিতর্কিত করে তুলতে আগামী ২৭-৩০ অক্টোবরের মধ্যে আর্য কল্যাণ বিহারে নাশকতার উদ্দেশ্যে বড় আকারে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করার নির্দেশ দেয়। এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য ১০ থেকে ১৫ হাজার পাহাড়ি জনগণকে বিভিন্ন এলাকা থেকে জোরপূর্বক যোগদান করতে বাধ্য করা হবে বলে অর্কিড চাকমা, বর্মাছড়ির নেতৃত্ব স্থানীয় একজন পাহাড়িকে অবগত করে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের জনৈক অধ্যাপক এবং খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার জ্যোতিমারা বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের একজন ধর্মীয় নেতা ওই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সেনাবাহিনীর অভিযানকে বিতর্কিত করতে প্রয়োজনীয় বক্তব্য ও সমর্থন প্রদান করবেন। ওই অনুষ্ঠানকে সফল করে তুলতে তারা পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আর্য কল্যাণ বিহারের পক্ষ থেকে আগামী ২৯ অক্টোবর বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের লিফলেট (অনলাইন এবং অফলাইন) বিতরণ শুরু করে। একই সময়ে ইউপিডিএফের দেশি-বিদেশি অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং সমমনা ধর্মীয় নেতারা সেনাবাহিনী এবং বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিদ্বেষমূলক এবং উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করা শুরু করে।
পরিস্থিতির সামগ্রিক বিশ্লেষণে সুনিশ্চিতভাবে বলা যায়, ইউপিডিএফ গত ২৩-৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাগড়াছড়ি এবং রামসু বাজার এলাকায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের আদলে পুনরায় পার্বত্য অঞ্চলকে অশান্



















