দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে তিন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের ‘বিদ্রোহী’ মন্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিএনপিতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিন সিনিয়র নেতার এমন বেফাঁস মন্তব্যে তৃণমূল থেকে দাবি উঠেছে অবিলম্বে এই তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর সরাসরি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবি হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্যের প্রধান নির্বাহী ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তারা বলেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আপসহীন হলে কারাগারেই থাকতেন খালেদা জিয়া। আপস করেই কারাগার থেকে মুক্তি নিয়েছেন তিনি।
ঘুম থেকে উঠেই মাদরাসার ছাত্রীকে ধর্ষণ,শিক্ষক গ্রেফতার
আপসহীন ভাবমূর্তি হারিয়েছেন খালেদা জিয়া। নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণেই আপসের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। তারেক রহমানকে খালেদা জিয়ার উত্তরসুরী মনোনীত করা ভুল সিদ্ধান্ত। খালেদা জিয়া না থাকলে রাজনীতি ছাড়ার কথা ভাবছেন তারা। টিভি চ্যানেলটিতে তিন পর্বে তিন নেতার বক্তব্য প্রচারের পর তৃণমূলের নেতারা ধারণা করছেন এমন আরো কিছু নেতা আছেন যারা বিদ্রোহী মনোভাবের।
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, খালেদা জিয়া কিসের আপসহীন। আপস না করলে উনি জেল থেকে বের হলেন ক্যামনে। সরকারের কথা শুনেই তো বেরিয়ে এসেছেন। খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন তার একটিই কারণ তিনি জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী। অথচ সেই জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচার করলেন না কেনো?
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা নেতাকর্মীরা সরকারের সাথে আপোস করে ফেলেছি। একারণে খালেদা জিয়া জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু জনমনে তার যে স্থায়ী আসন তার কোন রিপ্লেসমেন্ট নেই। খালেদা জিয়াই বিএনপির বর্তমান ও ভবিষ্যতের একমাত্র নেতা। তারপরে কে জানি না।
শাহজাহান ওমর বলেন, তারেক রহমান কতটুকু দল চালাতে পারবেন আপনারাও দেখেন আমিও দেখি। লন্ডনে বসে কথাবার্তা-ভাব আদান প্রদান করা কঠিন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথেই আছেন। তার এখন দলের চিফ অ্যাডভাইজার হওয়া উচিত। তিনি জেল থেকে কিভাবে মুক্তি পেলেন জানি না। উনার উচিত ছিলো জেলে ফেরত যাওয়া। তাকে এক জেলখানা থেকে বের করে বাসার জেলখানায় ঢুকানো হয়েছে।
দেশবাসীর বিরাট ভালোবাসা আছে তার জন্য। তিনি বলেন, তারেক রহমানকে খালেদা জিয়ার উত্তরসুরী করা ভুল সিদ্ধান্ত। সে অটোমেটিক উত্তরসুরী হতো। তারেককে আমি স্নেহ করি, কিন্ত দুর থেকে যোগ্যতা প্রমাণ করা যায় না।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাফরুল্লাহকে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আমলে না নিলেও আলোচিত তিন সিনিয়র নেতার বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। খালেদা জিয়া নিজেও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
দলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন,মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর দলে থাকলেও তারা নিস্ক্রিয়। গত নির্বাচনের পর তারা নির্বাচনী এলাকায় যান না এবং তৃণমূলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তারা ওয়ান ইলেভেনসহ অতীতে বিএনপির ক্রান্তিকালে বিতর্কিত ভূমিকায় ছিলেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, এই তিন নেতার মধ্যে শাহ মোয়াজ্জেম ছাত্রলীগের একবার সাধারণ সম্পাদক ও তিনবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাই বিএনপিকে ভাঙতে তারা যেকোনো সময় যেকোনো মন্তব্য করতে পারে।