DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশনিবার ২১শে ডিসেম্বর ২০২৪
ঢাকাশনিবার ২১শে ডিসেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করবেন

News Editor
অক্টোবর ৭, ২০২০ ৮:৫৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাসূলে কারিম (সা.) বিভিন্ন সময় ও কাজের জন্য যেসব দোয়া ইরশাদ করেছেন, সেসবের অন্যতম ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সময় পঠিত দোয়া। রাসূলে আকরাম (সা.) ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর সর্বপ্রথম এই দোয়া পড়তেন,

الْـحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أمَاتَنَا وإِلَيْهِ النُّشُورُ

উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুসুর।

অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার, যিনি আমাকে মৃত্যুর পর পুনরায় জীবন দান করেছেন। তারই দিকে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। (বুখারি, মুসলিম)।

আরও পড়ুন : যে প্রেম-ভালোবাসায় জান্নাত লাভ করবে নারী

এই দোয়ার একদিকে আল্লাহর শোকর আদায় করা হয়েছে। কারণ, তিনি মৃত্যুর পর পুনরায় জীবন দান করেছেন। কেননা, ঘুমের মধ্যেই আমার মরণ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। ঘুমের মধ্যে বহু মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু আয় আল্লাহ! মৃত্যুর পর আপনি আমাকে পুনরায় জীবিত করেছেন। তাই আপনার শোকর আদায় করছি।

অন্যদিকে এই দোয়ার মাধ্যমে এই কথা স্বীকার করা হয়েছে যে, আপনার দেয়া এই নতুন জীবন সব সময়ের জন্য না। অচিরেই একটা সময় আসবে যখন আমাকে দুনিয়া ছেড়ে আল্লাহ তায়ালার নিকট হাজির হতে হবে।

কীভাবে দিন অতিবাহিত করবে:

যে ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠেই আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে, আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করে, এই জীবনকে আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত মনে করে এবং মনে করে এই জীবন চিরকালীন না, এই দুনিয়া ছেড়ে একদিন অবশ্যই চলে যেতে হবে, এমন ভাবনা যেই ব্যক্তি ভাববে, মনে করা হবে সে তার দিন আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছে মোতাবেক অতিবাহিত করার চেষ্টা করেছে।

এমন ব্যক্তি ব্যর্থ হবে না:

যে ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে কোনো কথা বলেনি। কোনো কাজ করেনি। এমনকি ওজুও করেনি। বরং সে ঘুম থেকে জেগে সর্বপ্রথম এই দোয়া পড়ে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে নিয়েছে।

আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে নিয়েছে এমন ব্যক্তি কি জীবনে ব্যর্থ হতে পারে? আল্লাহ তায়ালা কি এমন ব্যক্তিকে অসফল রাখতে পারেন, যে ঘুম থেকে উঠেই বলে, আয় আল্লাহ, আপনার আগে আমি অন্যকারো সঙ্গে সম্পর্ক করিনি। আমি একমাত্র আপনার সঙ্গেই সম্পর্ক করেছি।

ফেরেশতা ও শয়তানের দ্বন্দ:

হাদিস শরিফে এসেছে, যখন কোনো ব্যক্তি ঘুম থেকে জেগে উঠে, সঙ্গে সঙ্গে তার নিকট একজন ফেরেশতা ও একটা শয়তান উপস্থিত হয়। শয়তান কামনা করে এই লোক আমার হয়ে যাক। সকাল থেকেই তাকে আমি আমার আয়ত্তে নিয়ে নেব। এখন থেকে সে শুধু আমার হুকুমে চলবে। অন্যদিকে ফেরেশতা চান এই লোক আল্লাহ তায়ালার বিধান মোতাবেক চলুক। এই নিয়ে ফেরেশতা ও শয়তানের মধ্যে দ্বন্দ হয়।

হাদিস শরিফে এসেছে, সে সময় যদি মানুষ আল্লাহ তায়ালার কথা স্মরণ করে, আল্লাহ তায়ালার জিকির করে তাহলে শয়তান ব্যর্থ হয়ে পালিয়ে যায়। আহা! লোকটারে আমার বাধ্য ও অনুগত করে রাখতে পারলাম না। এখন আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সে সম্পর্ক সৃষ্টি করে নিয়েছে। তার ওপর আমার আর কর্তৃত্ব চলবে না। কারণ তার হেফাজতের জিম্মাদারি খোদ আল্লাহ তায়ালা নিয়ে নিয়েছেন। শয়তান ব্যর্থ হয়।

রাতে আবার দ্বন্দ:

এমনিভাবে রাত্রিবেলা যখন কেউ ঘুমানোর ইচ্ছা করে এবং এই ইচ্ছে নিয়ে সে বিছানায় যায় তখন তার নিকট একজন ফেরেশতা আগমন করেন। পাশাপাশি একটা শয়তানও আসে। শয়তান চায় এই লোক আমার হুকুমের গোলাম হয়ে ঘুমাক। আর এই ঘুমেই যদি তার মৃত্যু হয়, তাহলে ভালোই হবে। তাকে নিয়েই জাহান্নামে যাওয়া যাবে।
কিন্তু যখন এই ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার কথা স্মরণ করে, আল্লাহ তায়ালার নাম নেয় তখন শয়তান ব্যর্থ হয়ে পালিয়ে যায়। এবারো শয়তান তার ওপর কোনো কর্তৃত্ব খাটাতে পারে না। (কানযুল উম্মাল ১৫/৫৫০; মুসতাদরাকে হাকিম ৫/৬৭)।

আরো পড়ুন :  আবারও দেশের মাটিতে মিজানুর রহমান আজহারী

হাদিস শরিফে এই আলোচনা এসেছে। নবী করিম (সা.) এই আলোচনা করেছেন। যাতে তার বান্দারা ঘুম থেকে উঠেই সর্বপ্রথম তাদের রব ও প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার কথা স্মরণ করে।

সকালের দোয়া:

আল্লাহ তায়ালার এমন বান্দারা যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হয়, আল্লাহ তায়ালার কথা স্মরণ করে, আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। এরপর যখন সকাল হয় তখন এই দোয়া পড়ে,

اللَّهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا، وَبِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا، وَبِكَ نَمُوتُ، وَإِلَيْكَ النُّشُورُ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা ওয়াবিকা আমসাইনা ওয়াবিকা নাহয়ি ওয়াবিকা নামুতু ওয়া ইলাইকাননুসুর।

অর্থ: আয় আল্লাহ! আমরা আপনার নাম নিয়ে সকাল করি। আপনার নাম নিয়েই সন্ধ্যা করি। আপনার মর্জিমোতাবেক আমরা জীবনযাপন করি। আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা মৃত্যুবরণ করব। অবশেষে আমরা আপনার নিকটই ফিরে যাব। (তিরমিজি, আবু দাউদ)।

অর্থাৎ আয় আল্লাহ! এই যে সকাল হচ্ছে, এ আপনার ইচ্ছায়ই হচ্ছে। আপনার রহমত শামিল না হলে কখনোই এই সকাল হতো না। সামান্য চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারব, কী গভীর মর্ম লুকিয়ে আছে এই দোয়ার মধ্যে। এক অর্থ এই যে, এই ঘুমের মধ্যে আমাদের মৃত্যু হয়নি। বহু মানুষ ঘুম থেকে কখনোই ওঠে না। সেখানেই তাদের মৃত্যু এসে যায়।

দিনের আলো আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত:

অন্যদিকে এই যে সকাল হয়েছে, আমাদের সাধ্যে ছিল না একে নিয়ে আসার। যদি রাতের অন্ধকার সব সময় আমাদের ওপর ছেয়ে থাকত তাহলে কি দিনের আলো ফিরিয়ে আনার সাধ্য ও সামর্থ্য আদৌ কারো ছিল? কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

أرء يتم إن جعل الله عليكم الليل سرمد ألي يوم القيمة من أله غيرالله يأتيكم بضياء 

‘আল্লাহ তায়ালা যদি তোমাদের ওপর সার্বক্ষণিকের জন্য রাতকে চাপিয়ে দেন, তা হলে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত এমন কে আছে, যে তোমাদেরকে আলো দান করবে ‘ (সূরা:কাসাস, আয়াত: ৭১)।

হে আল্লাহ! এই সকাল আপনার কুদরতের সৃষ্টিবৈচিত্র্য। এসব কিছু হচ্ছে আপনার মহাবিশ্ব-নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার অধীনেই। সত্যিই বড় সুশৃঙ্খল আপনার নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা। যখন সূর্য ডুবে যায়, আকাশে তারকাপুঞ্জ ভেসে ওঠে। আবার যখন দিনের আলোর পূর্বাভাস দেখা যায় তখন তারকারা আড়ালে চলে যায়। সূর্যের উদয় হয়। এই দোয়ার মধ্যে এই দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

সবশেষে বলা হয়েছে,

وإليه النشور

দোয়ার এই অংশ দিয়ে এই কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সবশেষে আয় আল্লাহ, আপনার নিকটই ফিরে যেতে হবে।

সন্ধ্যাবেলার দোয়া:

এরপর সন্ধ্যাবেলা এই দোয়া পড়বে,

اللَّهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا، وَبِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا، وَبِكَ نَمُوتُ، وَإِلَيْكَ النُّشُورُ

‘হে আল্লাহ, এই সন্ধ্যাও আপনার দান। যখন সকাল হয়েছিল, তাও ছিল আপনার দয়ায়। আমরা আপনার দয়ায় বেঁচে থাকি। এবং আপনার ইচ্ছায়ই আমরা মৃত্যুকে গ্রহণ করব। অবশেষে আমাদের সবাইকে আপনার নিকট ফিরে যেতে হবে।’

এমন ব্যক্তি বিরত হবে না:

এভাবে যখন কোনো ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করবে, এমন ব্যক্তিকে কি আল্লাহ তায়ালা মাহরুম ও বিরত করতে পারেন? না, কখনোই এমন ব্যক্তি বিরত হতে পারে না। ইনশাআল্লাহ!

যাইহোক, নবী করিম (সা.) যেসব দোয়া-দরুদ ও জিকির-আজকার শিক্ষা দিয়েছেন, তার প্রতি আমাদের সবাইকে যত্নবান হওয়া উচিত। আমরা নিজেরাও এসব দোয়া মুখস্থ করে নেব এবং আমাদের সন্তানদেরকে শিশুকাল থেকেই মুখস্থ করিয়ে দেব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দয়া ও অনুগ্রহ করে এসবের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:১৪
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৯
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:১১
  • ১১:৫৯
  • ৩:৪০
  • ৫:১৯
  • ৬:৩৮
  • ৬:৩৬