জেলা প্রতিনিধি:
রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন। এবারের নির্বাচন নিয়ে নগরজুড়ে ভোটার ও সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। নির্বাচনের জন্য নগরের ৭৩৫টি কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি। একইসঙ্গে কেন্দ্রগুলোতে চলছে বুথ তৈরির তোড়জোড়। এ নিয়ে নির্বাচনের কমিশনের সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
ভোটগ্রহণের আগের দিন মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। চট্টগ্রাম নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করা হয়েছে, যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনার সুযোগ না থাকে।
ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে, নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারে সেটা আমরা নিশ্চিত করেছি।
দুপুরে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম থেকে ভোটের সরঞ্জাম বিতরণের সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এক প্রশ্নের উত্তরে হাসানুজ্জামান বলেন, কেন্দ্রভিত্তিক যে মালামাল আছে, তা চারটি ভেন্যু থেকে বিতরণ করছি। আশা করছি, এই মালামাল তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে। সেখানে যাওয়ার পরে আবার রি-চেক করব, কোনো সমস্যা আছে কি না। আজকের মধ্যেই একেবারে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রস্তুতি গ্রহণ করব যাতে কালকে সকাল আটটার ভোটগ্রহণে কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়।
নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নির্বাচনে পুলিশের ৭ হাজার ৭৭২ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ২৫ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৪১টি দল আছে। এছাড়া মোবাইল টিম থাকবে ৪১০টি। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে ১৪০টি দল। ভোটে দায়িত্ব পালন করবে প্রতিটি ওয়ার্ডে র্যাব ও পুলিশের একটি করে টিম। আনসারের প্রায় তিন হাজার ৮০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ৬৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ৪১ ওয়ার্ডে ৪১ জন ভোটের দিন দায়িত্বে থাকবেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ২০ জন।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসানুজ্জামান বলেন, মোট কেন্দ্র ৭৩৫টি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ৪১৬টি। সেগুলোতে ৮ জন পুলিশ ও ১০ জন আনসার সদস্য মিলিয়ে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন। সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ থাকবে ছয়জন এবং আনসার ১০ জন। আগের চেয়ে বেশি পুলিশ-আনসার আমরা এবার ভোটকেন্দ্রে দিচ্ছি, যাতে ভোটগ্রহণে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়।
এবার চসিক নির্বাচন অতীতের তুলনায় বেশি উৎসবমুখরভাবে হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন প্রচার-প্রচারণা ছিল উৎসবমুখর। সুন্দর পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি। শেষ দিন পর্যন্ত প্রার্থীদের প্রচারণা ছিল উৎসবমুখর। আশা করি আগামীকালের নির্বাচনটি উৎসব মুখর হবে।
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া ৫৮টি অভিযোগের মধ্যে ৪৮টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আইনের আওতায় নিয়েছি। বিভিন্ন ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশ নেবে।
ইভিএমে কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা গেলে কি করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত আছে, সমস্যা হলে রিপ্লেস করতে পারব। প্রতিকেন্দ্রে একটি করে ইভিএম অতিরিক্ত আছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (বিশেষ শাখা) মো. আবদুল ওয়ারিশ জানান, কেন্দ্রের নিরাপত্তায় অস্ত্রধারীসহ ছয়জন করে পুলিশ সদস্য ও ১২ জন করে আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এর বাইরে সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রধারীসহ চারজন পুলিশ ও ১২ জন করে আনসার সদস্য থাকবে। এছাড়া কেন্দ্রের বাইরে টহল পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা তৎপর থাকবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকবে নগর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটের বোম ডিসপোজাল ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজম ও সোয়াত সদস্যরা।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, অনুমতিপ্রাপ্ত সাংবাদিকরা তো অবশ্যই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এর বাইরে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত জানিপপ, আসক, সমাজ উন্নয়ন প্রয়াসসহ নয়টি সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতিপত্র দিয়েছি।
ভোটের দিন সাধারণ ছুটি না থাকায় ভোটার উপস্থিতি কম হবে কিনা জানতে চাইলে হাসানুজ্জামান বলেন, ইতোপূর্বে অনেকগুলো নির্বাচন হয়েছে এভাবে। ঢাকায় অনেকগুলো উপ-নির্বাচন, দেশে উপজেলা ও অনেকগুলো পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে। সেখানে যে সিস্টেমে হয়েছে চট্টগ্রাম সিটির ভোটও সেটাকে অনুসরণ করে হচ্ছে। সাধারণ ছুটি সেখানেও ছিল না, সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতি ছিল। আশা করি এখানেও সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতি থাকবে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেগুলো খোলা থাকবে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোট দেয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।