পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর!
জেলা প্রতিনিধিঃচুয়াডাঙ্গার যাদবপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুইপক্ষের সংঘর্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক আলী খানসহ পাঁচজন আহত হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার বেগমপুর ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের পারঘাটাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। পরে উভয় পরিবারের সদস্যরা আহতদেরকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতদেরকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করেন।
আহতরা হলেন- যাদবপুর গ্রামের পারঘাটাপাড়ার মৃত হযরত আলীর ছেলে সিদ্দিক আলী খান (৭২), তাঁর ছেলে রফিকুল ইসলাম, একই এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে আব্দুস সামাদ ও তাঁর ছেলে রাকিব (২২) ও আকিব (২০)। আহতদের মধ্যে সিদ্দিক আলী খান ও রাকিবকে হাসপাতালে ভর্তি রাখেন।
এ ঘটনায় আহত অন্য তিনজন হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে একজন মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় অত্র এলাকায় ছি ছি পড়ে গেছে।
জানা যায়, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ১৪ কাটা জমি নিয়ে মৃত হযরত আলীর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক আলী ও তার ভাই শফিকুল ইসলামের সঙ্গে তাঁদের সৎ বোন আফিয়া বেগম ও তার শশুর বাড়ির লোকজনের বিরোধ চলে আসছিল। গত তিনমাস পূর্বে জমি দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধ মিমাংসার জন্য পুলিশের নিকট যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক আলী।
সেই জমি পুলিশের উপস্থিতিতে সার্ভেয়ার দ্বারা মাপজোপ করে বুঝে নিতে যায় সিদ্দিক আলী ও তাঁর দুই ছেলে। জমি মাপজোপ চলাকালীন সময়ে আফিয়া বেগমের দেবর সামাদ খন্দকার (৬০), তাঁর দুই ছেলে রাকিব, আকিব লাঠিসোটা নিয়ে বেগমপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জের উপস্থিতিতেই বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক আলী ও তাঁর দুই ছেলে আব্বাস খন্দকার ও রফিকুলের ওপর হামলা করে।
এতে উভয় পক্ষের পাঁচজন আহত হয়। এ ঘটনায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে বলেন, ‘পুলিশের উপস্থিতিতে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের ওপর হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এর সঠিক বিচার হওয়া প্রয়োজন।’ এ ঘটনায় অনেকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তার সমালোচনা করতেও ছাড়েননি।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় বেগমপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আসলাম হোসেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি দ্রুত ক্যাম্পে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এনে সামাদ ও তার দুই ছেলেকে আটক করে উত্তম মাধ্যম দেয়। সে সময় তিনি উভয়পক্ষকে দর্শনা থানায় পাঠানো হয়। দর্শনা থানা থেকে উভয়পক্ষকে চিকিৎসার জন্য দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
সিদ্দিক আলীর ভাই শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিদ্দিক আলীর পিতা হযরত খার দুজন স্ত্রী ছিল। তাঁর প্রথম স্ত্রীর নাম লালমতি ও ২য় স্ত্রীর নাম আছিয়া বেগম। একটি কন্যা সন্তানসহ ২য় স্ত্রী আসিয়া বেগমকে হযরত খা বিয়ে করে। প্রথম স্ত্রীর ঘরের দুই সন্তান সিদ্দিক আলী ও শফিকুল ইসলাম। ছিদ্দিক আলী আনুমানিক ৩০ বছর পূর্বে স্বপরিবারে শশুর বাড়ী কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার ভাদাইল গ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করেন।
গ্রামে শুধুমাত্র তার ছোট ভাই শফিকুল থাকত। এই সুযোগে তাঁদের সৎ বোন আফিয়া বেগম ও তাঁর স্বামী মাহমুদ খন্দকার জোরপূর্বক শফিকুলের কাছ থেকে তার অংশের জমি টিপসহির মাধ্যমে রেজিষ্ট্রি করে নেয়। সিদ্দিক আলী বাইরে থাকায় তার অংশ লিখে নিতে না পারলেও তার সম্পত্তি দীর্ঘদিন যাবত ভোগ দখল করে আসছিল তারা।
এরই মধ্য নামমাত্র টাকা দিয়ে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া দুই ভাইয়ের ৯ বিঘা জমি রেজিষ্ট্রি করে নেয় আফিয়া বেগম ও তার স্বামী। এক বছর পূর্বে সেই জমি মাপজোপ করতে গিয়ে ১৪ কাঠা জমি অবশিষ্ট পায় সিদ্দিক আলী। অবশিষ্ঠ ১৪ কাঠা জমিও আফিয়া বেগম ও তার দেবর সামাদ গংদের দখলে থাকায় তিনি গ্রাম্য মণ্ডল মাত্ববরদের দারস্ত হন। গ্রাম্যভাবে তা মিমাংসা নাহলে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দেন। গতকাল সেই জমি মাপজোপ করতে গেলে তাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক আলীর ছোট ভাই শকিফুল ইসলাম বলেন, সামাদ গং অভিযোগ করছে, আমার বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক আলী সামাদ গংদের উপর প্রথমে হামলা করেছে, কিন্ত ৭০ বছর বয়স্ক একজন মানুষ যে নিজেই অন্যের সাহায্য ছাড়া ঠিক মতো চলাচল করতে পারেন না, সে কীভাবে তাদের উপর হামলা করল?’ এ ঘটনায় সম্পর্কে আরও জানতে অপরপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।’
এবিষয়ে বেগমপুর ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই আসলাম হোসেন বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। দুইপক্ষ আচমকা সংঘর্ষ বাঁধায়। তবে আমি সঙ্গে সঙ্গে ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছি। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করে দর্শনা থানায় পাঠিয়েছি।’
পুলিশের উপস্থিতিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলা ও মারধর, এমন প্রশ্নে এসআই আসলাম বলেন, ‘আমি জানতাম না তিনি মুক্তিযোদ্ধা। তবে আমি দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিই। তাই বড়ধরণের সংঘর্ষ ঘটেনি।’
দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুবুর রহমান কাজল বলেন, ‘জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষের থেকেই কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে এ ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ও গ্রামের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উভয় পক্ষের দুজনকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’