জবিতে প্রয়োজনের তুলনায় অতুল্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র
জবি প্রতিনিধিঃ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)য়ে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও ব্যবহারে অধিকাংশেরই কারিগরি জ্ঞান না থাকার কারণে যে কোন দুর্ঘটনায় মারাত্মক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
রাজধানীর ব্যস্ততম অংশ পুরান ঢাকার সব চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় পনেরো হাজার শিক্ষার্থীর এই বিদ্যাপীঠে অগ্নি নির্বাপণ সক্ষমতা পর্যাপ্ত নেই।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে যে সব এসি রয়েছে সেগুলোর কম্প্রেসারও নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে না। অতিসম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে একটি কম্পিউটার মনিটর এবং অপর একটি বিভাগে এসির কম্প্রেসার বিস্ফোরিত হয়েছে। তাই সংশ্লিষ্টরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত।
গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের রেশ এখনো কাটেনি। এর মধ্যেই মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়ার বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। রাজধানীবাসীর কাছে রীতিমতো আতঙ্কের নাম যেনো অগ্নিকাণ্ড।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসহ কোন একাডেমিক ভবনেই অগ্নি নির্বাপণের পর্যাপ্ত সু-ব্যবস্থা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবনে অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার রয়েছে ৪৭টি। অধিকাংশ সিলিন্ডারেরই মেয়াদ আছে আগামী এপ্রিল মাস পর্যন্ত৷ অযত্নে ও অবেহলায় বেশ কিছু বিভাগে এসব সিলিন্ডার পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় মেডিকেল সেন্টার, শরীর চর্চা কেন্দ্র আর রেজিস্ট্রার দপ্তরের কয়েকটি শাখার অফিস। তবে এখানে নেই কোন অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার। এই ভবনের দ্বিতীয় তলায় বাংলা ও ইতিহাস বিভাগ। সেখানে রয়েছে মাত্র একটি সিলিন্ডার৷ একই অবস্থা তৃতীয় ও চতুর্থ তলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো অবকাশ ভবন জুড়ে আছে মাত্র একটি সিলিন্ডার থাকলেও একমাত্র ক্যাফেটেরিয়ায় নেই একটিও। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিভাগের ভবনে আছে মাত্র ৮টি সিলিন্ডার। এর মধ্যে অযত্নে কলাপ্সিবল গেটের চিপায় পড়ে আছে ২টি।
কলাভবনে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ২টি,ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ২টি, দর্শন ও ইংরেজি বিভাগে আছে ২টি সিলিন্ডার৷ আর বিজ্ঞান অনুষদের ভবনে সিলিন্ডার আছে মোট ১১টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় ৪টি লিফট সচল থাকলেও সেখানে মাত্র ২টি সিলিন্ডার রয়েছে৷
তবে পরিবহন পুল, শিক্ষক লাউঞ্জ,শিক্ষক সমিতির অফিস,ডে-কেয়ার সেন্টার,ছাত্রকল্যাণ দপ্তর, ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তর ও একমাত্র অডিটোরিয়ামে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা প্রায় শুন্যের কোটায়। একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনেও। তবে পূর্বের তুলনায় অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ালেও এগুলো ব্যবহার করার কারিগরি জ্ঞান নেই অধিকাংশেরই।
কলা ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ২টি ভবন এবং অবকাশ ভবন থেকে নামার জন্য রয়েছে একটি মাত্র সিঁড়ি। নতুন একাডেমিক ভবন ও বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে একাধিক সিঁড়ি থাকলেও সুবিশাল স্থাপনা হিসেবে তা অপ্রতুল। একাডেমিক ভবনগুলোর মধ্যে অগ্নি নিরাপত্তা ঝুঁকির শীর্ষে রয়েছে নতুন একাডেমিক ভবন। নবনির্মিত ১৪ তলাবিশিষ্ট এই ভবনের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলায় আছে হাতে গোনা কয়েকটি অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার। জরুরী নির্গমন পথ না থাকা এবং ভবনের মাঝ বরাবর সিঁড়ি থাকায় অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় ঘটতে পারে মারাত্নক প্রণহানি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, এখন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে৷ কখন দুর্ঘটনা ঘটবে তার নিশ্চিয়তা নেই। আমরা একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকি। তাই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নিয়ামতউল্লাহ খান বলেন, আমাদের বিভাগ নতুন ভবনের আটতলায়। জীবন হাতে নিয়েই আমরা উঠি এখন। অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না আবার জরুরি নির্গমন পথও নেই৷ আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের অধীনে এবং বিভাগগুলোর নিজ উদ্যোগে যেসব এসি লাগানো হয়েছে সেগুলোর কম্প্রেসার নিয়মিত তদারকিও হচ্ছেনা। এতেও রয়ে গেছে একটি বড় ঝুঁকি।
সার্বিক বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র যা আছে সেগুলো কম না। তবে সেগুলো কাজের সময় চালানোর প্রয়োজনীয় কারগরি জ্ঞান অনেকের নেই। তাই প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রকৌশল দপ্তরের অধীনে এবং বিভাগগুলোর নিজ তত্ত্বাবধানে স্থাপনকৃত এসিগুলোর কম্প্রেসার তদাকির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা সবকিছুর পরিকল্পনা করছি। দ্রুতই সার্বিক তথ্য পাবো।এরপর কাজ শুরু করব।