জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশ প্রত্যাহারের নির্দেশ
- আপডেট সময় : ০৩:৩০:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
- / ১০৬১ বার পড়া হয়েছে
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশ প্রত্যাহারের নির্দেশ
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষী ইউনিটকে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো থেকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় দীর্ঘদিনের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জাতিসংঘের এক নথি অনুযায়ী, কঙ্গো, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যাপক কাটছাঁট ও সদস্য প্রত্যাহার চলছে। তবে সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের মুখোমুখি একমাত্র দেশ বাংলাদেশ।
ক্যামেরুন, সেনেগাল ও মিশরের কনটিনজেন্টে আংশিক হ্রাস ঘটলেও বাংলাদেশ পুলিশ ইউনিটকে পুরোপুরি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই ইউনিটে ১৮০ জন সদস্য রয়েছেন, যার মধ্যে ৭০ জন নারী পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই জাতিসংঘের একমাত্র সর্বমহিলা পুলিশ ইউনিটের সদস্য, যারা মাত্র দুই মাস আগে কঙ্গোতে দায়িত্ব নেন।
সূত্র জানায়, এই ইউনিটের সদস্যদের মধ্যে ১শ ৬২ জনকে ২০ অক্টোবরের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো হবে, বাকি ১৮ জন প্রশাসনিক ও লজিস্টিক কাজ শেষে নভেম্বরের মাঝামাঝি দেশে ফিরবেন।
একজন অতিরিক্ত ডিআইজি (পুলিশ সদর দপ্তর) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাতিসংঘের ডাউনসাইজিং নীতির কারণে বাংলাদেশ পুলিশের এফপিইউকে (ফর্মড পুলিশ ইউনিট) নভেম্বরের মাঝামাঝির মধ্যে ফিরিয়ে আনার মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখনও আনুষ্ঠানিক চিঠি পাওয়া যায়নি, তবে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক, কারণ ইউনিটটি খুব ভালো পারফর্ম করছিল।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) শাহাদাত হোসেন বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, যিনি পাঁচ বছর আগে জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত ছিলেন তিনি বলেন, জাতিসংঘ সাধারণত ডাউনসাইজিং করলে সব দেশের ক্ষেত্রেই তা সমানভাবে হয়। এবার শুধু বাংলাদেশকেই পুরোপুরি ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটা বাংলাদেশের কূটনৈতিক দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশ পুলিশের নারী ইউনিট ২০০৫ সাল থেকে কঙ্গোতে কাজ করছে। এ বছরের আগস্টে ইউনিটটির মেডেল প্যারেডে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন, যা ছিল জাতিসংঘের আস্থার প্রতীকস্বরূপ একটি বিরল দৃষ্টান্ত।
তবে এবার সেই আস্থা যেন ভেঙে যাচ্ছে। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের অংশগ্রহণ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় গৌরব ও মর্যাদা এনে দিয়েছে। সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপ না থাকায় এখন সেটি হুমকির মুখে।
একজন সিনিয়র নারী কর্মকর্তা বলেন, নারী পুলিশের এফপিইউ শুধু পুলিশের সাফল্য নয়, এটি জাতীয় গৌরবের প্রতীক। সরকারের উচিত দ্রুত কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধান করা।
বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্ত আছে। নামিবিয়ায় প্রথমবারের মতো পুলিশ সদস্য পাঠানোর পর থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত ২৪টি দেশে ২৬টি মিশনে ২১ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন।
এর আগে আর্থিক সংকটের কারণে জাতিসংঘ সম্প্রতি তাদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কাঁটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খরচ কমাতে কিছু মিশনের আকার ছোট করা হচ্ছে এবং নতুন বাহিনী পাঠানোর ক্ষেত্রে সংযমী নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। (সূত্র-টিবিএস)।