গত কয়েক মাসে বিশেষ চাপ অনুভব না করলেও জার্মানিতে করোনা মহামারি এবার জাঁকিয়ে বসছে। বেড়ে চলা সংক্রমণের হার মোকাবেলা করতে সোমবার থেকে সে দেশে এক মাসের জন্য আরও কড়া বিধিনিয়ম চালু করা হচ্ছে। চার সপ্তাহের জন্য এই ‘লকডাউন লাইট’ মানুষের মেলামেশা যতটা সম্ভব কমিয়ে এনে সংক্রমণের গতির পথে বাধা সৃষ্টি করবে, এমনটাই আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
বার-রেস্তোরাঁ, সিনেমা-থিয়েটার ইত্যাদি বন্ধ হবার আগে সপ্তাহান্তে জার্মানির মানুষ যতটা সম্ভব সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিয়ে নিয়েছেন। বিশেষ করে মিউনিখ ও বার্লিন শহরে বাড়তি উৎসাহ চোখে পড়েছে। সোমবার থেকে মিউজিয়াম ও সাংস্কৃতিক মনোরঞ্জনের সব অনুষ্ঠানও বন্ধ থাকছে। শরীরচর্চা বা শরীরের যত্ন নিতে জিম, সুইমিং পুল, বিউটি ও মাসাজ পার্লার, উলকি আঁকার দোকানও খুলতে পারবে না। তবে চুল কাটার সেলুন খোলা থাকবে। এমনকি স্টেডিয়ামে গিয়ে বুন্ডেসলিগার ফুটবল ম্যাচ দেখারও উপায় থাকবে না। মোটকথা প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ দুটি পরিবারের দশ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ সপ্তাহে দ্বিগুণ ইউরোপে
এত বাধা সত্ত্বেও জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপ চালু রাখতে স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন খোলা থাকছে। বেশিরভাগ দোকানবাজারও খোলা থাকছে, যদিও বদ্ধ জায়গায় ক্রেতাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মাথা গুনে দোকানে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। যাদের পক্ষে ঘরে বসে ‘হোম অফিস’ করা সম্ভব, তাদের দপ্তরে না যাবার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাকি বিশ্বের তুলনায় ইউরোপের করোনা পরিস্থিতি সম্প্রতি অনেক অবনতি হয়েছে। মাত্র পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে ইউরোপে আক্রান্তদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের হিসেব অনুযায়ী রবিবার আক্রান্তদের সংখ্যা এক কোটির মাত্রা অতিক্রম করেছে। অথচ সেখানে ৫০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে প্রায় নয় মাস সময় লেগেছিল। বিশ্বের দশ শতাংশ জনসংখ্যার ভাগীদার হয়েও ইউরোপে এখনো পর্যন্ত ২২ শতাংশ করোনা সংক্রমণ ঘটেছে। গত মাসে ল্যাটিন অ্যামেরিকা ও এশিয়াও এক কোটির মাত্রা পেরিয়ে গিয়েছিল। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখেরও বেশি।
পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে জার্মানি ছাড়াও ফ্রান্স, ব্রিটেন, পর্তুগালের মতো দেশ নানা মাত্রায় লকডাউন চালু করেছে। স্পেন ও ইতালিতেও আরো কড়া বিধিনিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। এমন পদক্ষেপের মেয়াদ শেষ পর্যন্ত কত বাড়ানো হবে, সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে। কিছু দেশের সরকার কমপক্ষে আগামী বছরের বসন্তকাল পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতির আশা দেখছে না। পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশগুলো নাগরিকদের সমস্যা কমাতে ব্যর্থ হলে ব্যাপক অসন্তোষের আশঙ্কা করছে কিছু মহল।
সূত্র: ডয়চে ভেলে।