টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মঞ্জুর রহমান নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে প্রবাসীর স্ত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিবস্ত্র ভিডিও ও আপত্তিকর ছবি দিয়ে জিম্মি করে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দাবিকৃত আরো এক লাখ টাকা না দেয়ায় ভিডিও-ছবি ছড়িয়ে দেয়া হয় নারীর আত্মীয়-স্বজনদের কাছে।
এই ঘটনার পর ওই গৃহবধূ শিশু সন্তান নিয়ে স্বামী সংসার থেকে বাবার বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। গ্রাম্য মাতাব্বরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সুবিচার না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।
সেনা সদস্যের স্ত্রীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার
অভিযুক্ত মঞ্জুর রহমান (২৬) উপজেলার ভাওড়া ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের ইন্নছ আলীর ছেলে। ঘটনার পর ওই যুবক এলাকাতেই দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রতারণার শিকার প্রবাসীর স্ত্রী জানান, তার স্বামী বিদেশ থাকার সুবাদে হাড়িয়া গ্রামের ইন্নছ আলীর ছেলে মঞ্জুর রহমানের কুনজর পড়ে তার ওপর। মঞ্জুর তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। তিনি বখাটের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হুমকি এবং ভয়ভীতি দেখাতেন। একপর্যায় ওই যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান ওই গৃহবধূ। প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার বাড়িতে গিয়ে গোপনে কৌশলে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে এবং আপত্তিকর ছবি তোলেন।
পরে গৃহবধূ তার ভুল বুঝতে পেরে মঞ্জুরকে তার পথ থেকে সরে দাঁড়াতে বললে তিনিঅস্বীকৃতি জানান।
মঞ্জুর গৃহবধূর কাছে টাকা দাবি করেন। গৃহবধূ কয়েক দফায় মঞ্জুরকে ৫ লাখ টাকা দেন। কিন্তু এতেও মঞ্জুর ক্ষান্ত হননি। তিনি বিদেশে যাবার পুরো ৬ লাখ টাকা দাবি করেন ওই গৃহবধূর কাছে। তা নাহলে সব ভিডিও ও ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকিও দেন। ওই টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে প্রবাসে থাকা ওই গৃহবধূর স্বামীকে ভিডিও ও ছবির কথা বলে দেন মঞ্জুর।
এই ভিডিও ও ছবি তিনি গৃহবধূর কয়েকজন আত্মীয়ের ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠান।
এই অবস্থায় সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন গৃহবধূ। গ্রাম্য মাতব্বরদের দ্বারে দ্বারের ধর্না দেন ওই গৃহবধূ। একাধিকবার গ্রাম্য সালিশে ওই বখাটেকে শাস্তি দিলেও তিনি সংশোধন হননি, বরং আরও কয়েকজনকে ভিডিও ও ছবি পাঠান।
গ্রাম্য সালিশে মাতাব্বর শাহীন, ফিরোজ আল মামুন, হেলাল উদ্দিন এবং জাহাঙ্গীরসহ আর অনেকেই উপস্থিত ছিলেন বলে গৃহবধূ জানিয়েছেন।
এ ঘটনার পর স্বামীর বাড়ি থেকে শিশু সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হন প্রতারণার শিকার ওই গৃহবধূ।
এদিকে প্রবাসীর স্ত্রী অভিযোগ করেন, ন্যায় বিচার চেয়ে প্রথমে মির্জাপুর থানায় মামলা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন এবং এলাকার কয়েকজন মাতব্বর গ্রামে বিষয়টি মীমাংসা করার কথা বলেন। কিন্তু এতে কালক্ষেপন হওয়ায় নিরুপায় হয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মির্জাপুর আমলী আদালতে মঞ্জুর রহমানকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা হওয়ার পর মঞ্জুর রহমান ও তার সহযোগীরা প্রবাসীর স্ত্রী ও তার পরিবারকে হত্যাসহ নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন ওই গৃহবধূ।
এ ব্যাপারে বখাটে মঞ্জুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফেনে যোগাযোগ করা হলে প্রবাসীর স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি জেনেছেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর মোবাইল ফোনের লাইনটি কেটে দেন।
এ ব্যাপারে ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। গ্রাম্য সালিশের তারিখ দেওয়া হয়। তার আগেই ওই গৃহবধূ টাঙ্গাইল আদালতে মামলা দায়ের করেছে বলে তিনি শুনেছেন।
মির্জাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্রবাসীর স্ত্রী ও মঞ্জুর রহমান নামে যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কারণে আপত্তিকর অবস্থার বিবস্ত্র ছবি ভাইরাল হয়েছে। গৃহবধূ পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেছেন। আদালত থেকে মামলার তদন্ত চেয়েছেন। তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে তিনি বলেন।