DoinikAstha Epaper Version
ঢাকারবিবার ৫ই মে ২০২৪
ঢাকারবিবার ৫ই মে ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

টাকা নেই পদও নেই, ছাত্রদল নেতার আবেগঘন স্ট্যাটাস

DoinikAstha
আগস্ট ২২, ২০২১ ১:৫৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টারঃ ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলে দীর্ঘ তিন বছর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মো. রুকনুজ্জামান রুকন। একমাস আগে তার বাবার মৃত্যুতে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক সোহেল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়।

কিন্তু চলতি বছরের ৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর থেকে নামের বিভ্রান্তি নিরসন শিরোনামে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একই নামে আরেকজনের ওই পদ বলে নিশ্চিত করা হয়। এর পর থেকেই স্থানীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে দীর্ঘদিন পদ ব্যবহারকারী মোঃ রুকনুজ্জামান রুকন তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে করে ছাত্রদল কর্মীররা সমালোচনার ঝড় তুলছেন। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো- আমি মোঃ রুকনুজ্জামান রুকন জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা।

গত ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ময়মনসিংহ দক্ষিন জেলা শাখার কমিটিতে আমাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পদক করা হয়। পাশাপাশি আমি ময়মনসিংহের ছাত্র রাজনীতির আতুরঘর হিসেবে খ্যাত আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র হওয়াই এ ইউনিটে ছাত্রদলের কোন কমিটি না থাকায় ক্যাম্পাসের নবীন শিক্ষার্থীদের ছাত্রদলে যোগদানের জন্যে সংগঠিত করেছি

তাদেরকে অনুপ্রাণিত ও সংগঠিত রাখতে তাদেরকে নেতৃত্ব দিয়ে আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদলের ব্যানারে কেন্দ্র ঘোষিত প্রত্যেক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। গত ২০২০ সালে সারা বাংলাদেশের সকল ইউনিট কমিটিগুলো নতুন করে ঘোষণা করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের ফর্ম পূরণের জন্যে আহবান করতখন আমার আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও সহযোদ্ধাদের আবদারের প্রেক্ষিতে ও দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের পরামর্শে নিজেকে আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সে অনুযায়ী ফর্ম পূরণ করে কর্মী সমাবেশে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। লকডাউনের স্থবিরতায় গত চলতি বছরের ১২ জুলাই আমার বাবার মৃত্যু হয়। তখন আমার বাবার মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের শোক বার্তায় এত বছরের রাজনৈতিক অর্জন ময়মনসিংহ দক্ষিন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শান্তনা পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবার মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই গত ৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রদল থেকে পরিচয় নিশ্চিতকরন এক বিজ্ঞপ্তি দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই।

আমার পদ একই নামের অন্য আরেক জন কে গণ্য করা হবে। ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলকে বার বার ভুল বুঝিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই কুচক্রী মহল টাকার লেনদেনের মাধ্যমে আমার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ অন্য আরেকজনের নামে ইস্যু করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলে সুপারিশ করে। এই টাকার লেনদেনের বিষয়টি হয়ত কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের অজানা রয়ে গেছে।

যারা টাকার বিনিময়ে আমার এই পদ অন্যের কাছে বিক্রি করে দিলেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনারা যে বায়িং হাউজে কর্মরত একজনের আছে আমার পদ বিক্রি করে দিলেন তাতে দলের কি লাভ হলো? এত বছর রাজপথে সক্রিয় থেকেও আমার ক্যারিয়ার হুমকিতে ফেলা হয়েছে। আজ তাদের মত আমার এত টাকা নেই এটাই কি আমার অপরাধ? নাকী এতবছর রাজপথে সক্রিয় থেকে নবীণদের ছাত্রদলের পতাকাতলে নিয়ে আসাটাই আমার অপরাধ? প্রশ্ন রেখে গেলাম আপনাদের বিবেকের কাছে।

যদি বিবেক বলে আপনাদের কিছু থাকে তাহলে! এর আগে ময়মনসিংহ ছাত্রদলের বিভিন্ন উপকমিটিতে পদবাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। ছাত্রদল নেতাদের টাকা নেয়ার একটি ভিডিও ফাঁসের পর বিভিন্ন কমিটিতে টাকার বিনিময়ে পদ দেয়ার অভিযোগ করেছেন খোদ ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মীরাই। জেলার ভালুকা উপজেলা, পৌর ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের কমিটির পদের জন্য টাকা নেয়ার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সাময়িকভাবে অব্যাহতিও দেয়া হয়।

টাকা নেয়ার ভিডিও ফাঁসের পর সমালোচনা হলেও এক মাস পরই বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান রানা ও সাধারণ সম্পাদক আবু দাউদ রায়হানের বিরুদ্ধে দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর কেন্দ্রের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। অভিযোগ উঠেছে, দক্ষিণ জেলা শাখার ১৮টি ইউনিট কমিটির বেশির ভাগ পদেই অযোগ্য, বিবাহিত, হত্যা ও ধর্ষণ মামলার আসামি, চাকরিজীবী ও অন্য দলের নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে।এসব ইউনিটের কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তর শাখার স্বাক্ষরেই অনুমোদন দেয়া হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে, কমিটি দেয়ার সময় জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কোনো মতামত বা স্বাক্ষর নেয়া হয়নি।

ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ ব্যবহারকারী মো. রুকনুজ্জামান রুকন বলেন, ‘এ পদে স্থানীয় বিএনপির সব নেতা-কর্মী আমাকেই চিনে। রাজপথে আন্দোলন করতে যেয়ে জীবনের সোনালি সময় নষ্ট করেছি। বহু হামলা-মামলার স্বীকার হয়েছি। ‘এক মাস হলো আমার বাবার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতারা। আর এখন স্থানীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আঁতাত করে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল তথ্য দিয়ে আমাকে পদ থেকে সরানো হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। এ জন্য আগে থেকেই আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। এখানে নিঃসন্দেহে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন হয়েছে, যা হয়তো কেন্দ্রীয় নেতারা জানেন না।’

নতুন পদ পাওয়া মো. রুকনুজ্জামান রুকন বলেন, ‌‘আমি দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সকল প্রোগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছি। এ ছাড়া এই পদটি আগে থেকেই আমার ছিল। এখানে আর্থিক লেনদেনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

‘রুকন সরকার’ নামে অধিক পরিচিত, কিন্তু কমিটিতে রুকনুজ্জামান রুকন লেখার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার ডাক নাম রুকন সরকার। ফলে এই নামেই বেশি পরিচিত হব, সেটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ইতোমধ্যে লিখিতভাবে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে এবং দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলও পরিষ্কার করেছেন।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ছাত্রদলের একজন সাবেক সভাপতি বলেন, ‘ময়মনসিংহের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি করার ক্ষেত্রে শতভাগ আর্থিক লেনদেন হয়েছে।

রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যারা ছিল না তাদের নেয়া হয়েছে। দুঃসময়ের নেতাকর্মী বঞ্চিত হয়েছে। এতে অনেকের ভেতরে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো কমিটিতে স্বার্থত্যাগী নেতা-কর্মীদের পদে আনা হলেই আবারও চাঙ্গা হবে সংগঠন।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এসেছে। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, যা রটে তা কিছু হলেও ঘটে। এ ছাড়া ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, পদ দিয়ে মোটা অংকের টাকা নেয়া হয়েছে। ‘এরপরও কেন্দ্রীয় কমিটি অভিযুক্তের পদ সাময়িক স্থগিত করে ফিরিয়ে দেয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।’

একাধিক ছাত্রদল নেতা জানিয়েছেন, তারেক রহমানের কাছে কমিটি গঠনের এসব অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। আর্থিক লেনদেন আছে কি না তা গোপনে তদন্ত করছেন তিনি। এসব বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রানার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণ সম্পাদক আবু দাউদ রায়হান বলেন, ‘পদ দাবি করা রুকনুজ্জামান রুকন আমাদের দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি।

নামের ভুলে তার বাবার মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল শোক জানিয়েছিল। তিনি এর আগে এই পদ কোথাও ব্যবহার করেননি। এখানে টাকার বিনিময়ে কাউকে পদ দেয়া হয়নি।’ বিভিন্ন কমিটি করার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ভিডিওর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ ছাড়া এটির সুরাহা হয়েছে। ‘তখন কমিটির জন্য টাকা নেইনি। ব্যবসায়িক কাজের টাকা নেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাক্ষরে কমিটিগুলোর অনুমোদন হয়েছে। আমি রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি।’ ঘটনা প্রসঙ্গে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় টিম প্রধান মাজেদুল ইসলাম রুম্মন বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। তবে ময়মনসিংহে বিভাগীয় টিমের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আমরা ওই ছেলেটিকেই পেয়েছি। কিন্তু এখন কেন বা কি কারণে পদ পরিবর্তন হল, তা আমাদের টিমের কেউ জানি না। এ ধরনের বিভ্রান্তি ছাত্রদলে কাম্য নয়। আশা করছি সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টি স্পষ্ট করবে।’

বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘পদ দিয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগটি আমাদের সকলের নজরে এসেছিল। পরে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সাময়িক অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। তদন্ত করে আবারও অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।’ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে দুজনের নামের বিভ্রান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি আমি এখনও জানি না। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল আরও তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৩:৫৭
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৬:৩৩
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:০২
  • ১১:৫৯
  • ৪:৩১
  • ৬:৩৩
  • ৭:৫৩
  • ৫:২১