ডিবির ওসি বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন
অপরাধ ঢাকতে পুলিশকে জড়ানো বললেন ফরিদপুর পুলিশ সুপার
মামুনুর রশীদ/ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
ফরিদপুরের ডিবি পুলিশের ওসি মো: রাকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুস দাবির অভিযোগ এনে শুক্রবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে মধুখালী উপজেলার মধুপুরের মরহুম মজিদ খানের সন্তান সামাদ খান (৩৬) ডিবি ওসির বিরুদ্ধে এক সংবাদ সম্মেনলন করেন। তিনি অভিযোগ করেন তার (সামাদ খান ) রেন্ট-এ-কারের মাইক্রোবাস আটক করে চালককে এসপি অফিসে নিয়ে সাত লাখ টাকা ঘুস দাবি ও প্রাণনাশের হুমকিসহ মিথ্যা মামলা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়।
এদিকে জেলার একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে বিবিধ তথ্য উপস্থাপনে এনিয়ে জেলা পুলিশ ও সাধারণ মানুষের মাঝে মিস্ত্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক মহল থেকে বিবিধ মহলে। চলমান সময়ে ফরিদপুরে প্রান্ত মিত্র হত্যার আসামী গ্রেপ্তার পাশাপাশি পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে জিরও টলারেন্স নীতিতে একের পর এক অভিযান পরিচালনায় মাদক কারবারীরা বিপন্ন হতে চলেছে বলেই পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধী চক্র সক্রিয় হয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষে উঠে পরে লেগেছে অভিমত ফরিদপুরের সচেতন নাগরিক সমাজের।
উল্লেখিত সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো: শাহজাহা শনিবার (৫ আগস্ট) ফরিদপুরের সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, মূলত মাদক ব্যবসায়ী সামাদ খান নিজেকে আড়াল করার কূটকৌশল হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ের নিকট থেকে ডিবি ওসি রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৯ জুলাই সামাদ খানের মালিকানাধীন একটি মাইক্রোবাস (নম্বর-ঢাকা মেট্রো-চ-৫৩-১০২০) থেকে তিন হাজার ৫৮২ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার ও মাদকমামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৩ মামলার আসামি আলী আকবর ফকির (৫০), কক্সবাজারের উখিয়ার জসিম উদ্দিন (৩৮), মো: ফারুক (৩২), খোকন তারেক (২০), নগরকান্দার ইমরুল কাজী ও চালক সুশান্তসহ (৩৫) ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যাদের প্রত্যেকের নামেই একাধিক মাদক মামলা আছে। এদের তিনজনের বাড়ি কক্সবাজারে। এ ঘটনায় কোতয়ালী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮-এর ৩৬ (১) সারণির ১০ (খ) ৩৮/৪০ ধারায় একটি মামলা করা হয়। মামলা নম্বর ৬৪, তারিখ ২০ জুলাই ২০২৩। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে মাদক এনে এরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করে থাকে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালে সামাদ খানের বিরুদ্ধে তার শ্যালিকাকে অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা হয়। সেসময় মধুখালীতে কর্মরত থাকার সুবাদে ওই মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন বর্তমান ওসি ডিবি রাকিবুল। ওই মামলার আসামি হওয়ার আগে থেকেই পুলিশ কর্মকর্তার সাথে সামাদ খানের বিরোধ ছিল। পূর্বের বিরোধ এবং মাদক ব্যবসাকে আড়াল করতেই ডিবির ওসি রাকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
২০১৭ সালের আগস্টে সামাদ খান র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলে তার নিকট থেকে তিন হাজার ১৫০ পিচ ইয়াবা, ফেনসিডিল, বিদেশী মদ, ২৩ বোতল যৌন উত্তেজক সিরাপ ও ৬৯০ পিচ ট্যাবলেট এবং এক জোড়া কালো রংয়ের বুট জুতা,পুলিশের মনোগ্রামযুক্ত নেভী ব্লু রংয়ের প্যারেড ক্যাপ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় তার নামে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও প্রতারণাসহ তিনটি মামলা হয় ওই বছরের ২৮ আগস্টে।
সামাদ খান মূলত মাইক্রোবাসেরচালক ছিলেন। বিভিন্ন সরকারি প্রয়োজনে মাইক্রোবাসটি রিক্যুজিশন নেয়া হতো। তখন থেকে ড্রাইভার সামাদের সাথে পরিচয় পুলিশের। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে পুলিশের আড়ালে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত ছিল। ওই সময় সীমান্ত এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে ফেনসিডিল আসত মধুখালীতে। সামাদ সরবরাহ করত বিভিন্ন স্থানে। অতপর ইয়াবা এলে সে ইয়াবা ব্যবসার সাথেও সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। তার একটি হারবাল ওষুধের দোকান রয়েছে। ওই ব্যবসার আড়ালে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন অবৈধ ওষুধ বিক্রি করে ধীরে ধীরে মাদকের গডফাদার হিসেবে প্রচুর অর্থের মালিক বনে যায়।
সামাদ খানকে হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল আখ্যায়িত করে জেলা পুলিশ আরও জানায়, প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে যাওয়ায় সমাজের সবমহলের সাথে যোগাযোগ মেইনটেইন করে চলে। তার বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নিতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করে ও প্রেস ব্রিফিং করে নিজের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করে থাকে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
উল্লেখ্য, শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সামাদ খান অভিযোগ করেন, ১৯ জুলাই তার মাইক্রোবাবাসের চালক তাকে না জানিয়ে চারজন যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন। পথে ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) জাকির, আলী আকবর নামের এক ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলেন। ফরিদপুর রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে পৌঁছালে গাড়িটি দাঁড় করে চালক প্রশান্তকে একটি মোটরসাইকেলে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। গাড়িটিও ডিবির লোকেরা চালিয়ে নিয়ে যায়। পরেরদিন ওসি রাকিব তার কাছে সাত লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় একটি মিথ্যা মামলা দেয়া হয় এবং রাতে ওসি রাকিব আমাকে ফোন দিয়ে গালিগালাজ ও গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। চালককে গ্রেপ্তার করলেও তাকে পলাতক দেখানো হয় বলে জানায়।
এ বিষয়ে ওসি ডিবি রাকিবুল ইসলাম আজকের দর্পণকে জানান, বিষয়টির সাথে কোনোভাবেই আমার সম্পৃক্ততা নেই। ২০১৭ সালে ওই ব্যক্তির একটি মামলায় আমি তদন্ত কর্মকর্তা থাকাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কারণেই সে আমার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। পূর্ব ঘটনার জের ধরে এখানে জড়ানো হয়েছে আমাকে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগ কোন কিছুই লুকানোর কোন সুযোগ কারো নেই। অপরাধী তার অপরাধ লুকানোর জন্যই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে নিজের অভিমতে জানান।