দীঘিনালায় দুই নেতার নামে অপকর্মের অভিযোগ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ
নাগরিক পরিষদের নাম ব্যবহার করে ব্যাক্তিস্বার্থ হাসিল এবং ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে দীঘিনালা উপজেলা নাগরিক পরিষদের সভাপতি মোঃ জাহিদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনসুরের বিরুদ্ধে।
তারা প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভাগিয়ে নিয়েছেন। জাহিদ নিয়েছেন তার শ্বাশুড়ির নামে আর মনসুর নিয়েছেন তার ভাইয়ের নামে।
এছাড়াও একটি বিশেষ বাহিনীর নাম ব্যবহার করে জাহিদ তার বড় ভাই মোঃ বেলাল হোসেন এর বসত ঘর গুড়িয়ে দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুজনই পেশায় বেকার কিন্তু কিছুদিন পরপর বিভিন্ন ব্যবসায় লাখ লাখ টাকা খাটান উভয়েই। দুই মাস আগে জাহিদ ২টি ও মনসুর ৩টি গুচ্ছগ্রামের রেশন কার্ড বন্ধক রেখেছেন জাহিদ-মনসুর। প্রতিটি রেশন কার্ড বন্ধক রেখেছেন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা করে। কিন্তু এই টাকাই বা কোত্থেকে আসলো এর উৎস জানেনা কেউ।
এরা এলাকায় নিজেদের বিশেষ বাহিনীর কাছের মানুষ বলে পরিচয় প্রকাশ করেছেন। সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কারও কোন সমস্যা থাকলে তা সমাধানেরও আশ্বাস দেন। নিজেরা দুজন সরাসরি কোন কাজ করতে না পারলে তখন কাজে লাগান সংগঠনকে।
এরকম একটি কল রেকর্ড এসেছে এই প্রতিবেদকের কাছে। সেখানে শুনা যায় জাহিদ তার এক বড় ভাই নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতার সাথে কথা বলিয়ে দেন এক ব্যবসায়ীকে। তার কাছে সেই বড় ভাই তখন ১ লাখ টাকা দাবী করেন এবং কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা দিতে বলে দেন। বড় ভাই বলেন, ‘আমি ডিসিকে ফোন দিয়ে পারি আর কমান্ডারকে ফোন দিয়ে পারি আমি কাজ করে দেব।
এছাড়া জাহিদ-মনসুর হতদরিদ্র নন, প্রতিবন্ধী বা কোন ধরনের আশ্রয়হীনও নন। কিন্তু নাগরিক পরিষদের প্রভাব দেখিয়ে ভাগিয়ে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুটি ঘর।
একটি জাহিদের শ্বাশুড়ি জহোরা বেগমের নামে আরেকটি মনসুরের ভাই আব্দুর রহিমের নামে। এর মধ্যে জাহিদ তার শ্বাশুড়ির নামে যে ঘর নিয়েছেন সেখানে প্রশাসনের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
তার শ্বাশুড়ির ঠিকানা বেতছড়িতে নিজ জায়গায় ঘর করার কথা থাকলেও সে ঘর করেছেন নিজের বাবার ভিটায়।
জহোরা বেগমের ঠিকানায় গিয়ে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কোন ঘরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কিন্তু সেখানে জহুরা বেগমের বসবাসযোগ্য ৩টি বসতঘর রয়েছে। জায়গা রয়েছে প্রায় ৪০ শতক এবং তার গুচ্ছগ্রামের একটি রেশনকার্ডও রয়েছে। জায়গার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
বিশেষ বাহিনীর নাম ব্যবহার করে হুমকির বিষয়ে মোঃ জাহিদের বড় ভাই মোঃ বেলাল হোসেন বলেন, আমি খুব কষ্ট করে ছোট ভাইকে পড়ালেখা করিয়েছি। কিন্তু সে বড় হয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় নির্যাতন চালাচ্ছে। পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে আমাদের ঠকাচ্ছে। একটি বিশেষ বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার নাম ভাঙ্গিয়ে আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়েছে। সে বিশেষ বাহিনী দিয়ে আমার বসতঘর গুড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দিয়েছে। তার ভয়ে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জাহিদ হাসান বলেন, আমার শ্বাশুড়ির নামে একটি সরকারি ঘর বরাদ্দ পাই। ঘরটি আমার জায়গায় নির্মাণ করেছি।
এ বিষয়ে মনসুরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার কাউন্সিলর মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, গত এক বছর আগে খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক কমিটি ২ সদস্য বিশিষ্ট দীঘিনালা উপজেলার কমিটির অনুমোদন দেয়। তিনমাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এক বছরেও তারা পারেনি। কোন ব্যাক্তির অপকর্মের দায় সংগঠন নিবেনা। কেউ যদি নাগরিক পরিষদের নাম ব্যবহার করে অপকর্মে জড়িত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার বিষয়ে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরাফাতুল আলম বলেন, আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।