DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশুক্রবার ১৩ই জুন ২০২৫
ঢাকাশুক্রবার ১৩ই জুন ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

দেশের ক্রান্তিকালে পাশে থাকার বার্তা সেনাবাহিনীর

Astha Desk
জুন ১২, ২০২৫ ১:৫৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দেশের ক্রান্তিকালে পাশে থাকার বার্তা সেনাবাহিনীর

মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছঃ

বরাবরের মতো এবারও আগাম বন্যা হানা দিতে পারে বৃহত্তর সিলেটের কয়েকটি অঞ্চলে। ঠিকই ঈদের পূর্বাপর কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণে তলিয়ে যায় হবিগঞ্জসহ আশপাশের বেশ কিছু গ্রাম।

কারো বুঝে ওঠার আগেই পানিবন্দি গ্রামবাসীর পাশে ঈদুল আজহার দিন শনিবার দাঁড়িয়ে যান সেনা সদস্যরা। বানিয়াচং, হবিগঞ্জ আর্মি ক্যাম্প থেকে রান্না করা উন্নতমানের খাবার নিয়ে যাওয়া হয় ৩৪ জন সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ ১২০ জন বন্যাদুর্গত মানুষের কাছে।

স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে দিতে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এমন মানবিক উদ্যোগ শুধু একটি তাৎক্ষণিক সহায়তা নয়, বরং দেশের জনগণের প্রতি একটি বার্তা ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

দেশের ক্রান্তিকালে পাশে থাকার বার্তা সেনাবাহিনীর বুঝমানদের জন্য সেনাবাহিনীর এই সফট মেসেজ বোঝা পানির মতো সোজা। আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষ রূপ-সৌন্দর্য এখানেই।

সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাসহ যৌথ বাহিনীর নজরদারি মালুম করতে পেরেছেন এবার ঈদের ছুটিতে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরা।

বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার বিতরণকালে আশপাশের পর্যটন এলাকায়ও ছিল সেনাবাহিনীর নজরদারি। পাহাড়ি ঢলের স্বচ্ছ জলে ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছেন পর্যটকরা। একসময় লোকমুখে মৌসুমে ভোলাগঞ্জে সাদা পাথরের ঢল নামার কথা শুনলেও যাওয়ার সাহস হয়নি।

এবার যৌথ বাহিনীর নজরদারির খবর জেনে সেখানে নেমেছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের ঢল। ঈদের ছুটিতে অবকাশ যাপনের জন্য পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে গিয়ে যারপরনাই মুগ্ধ তারা।

বন-পাহাড়ের সৌন্দর্যে মাতোয়ারা হয়েছেন হাজার হাজার পর্যটক। মাথার ওপর তুলার মতো মেঘ, সীমান্তের দিকে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো সবুজ পাহাড়। নিচে পানি-পাথরের সংমিশ্রণ।

পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঠাণ্ডা পানির স্রোত। সেই পানিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ। পাহাড়ি ঢলের স্বচ্ছ পানিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেট কোম্পানীগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্র যেন নতুন করে আবিষ্কার হয়েছে।

নিরাপত্তাব্যবস্থা এমন থাকলে বন, পাথুরে নদী, পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা ঝরনা, বিস্তৃত নীল জলধারা, হাওর আর ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর পর্যটকদের কাছে টানতেই থাকবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং সেবা নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসন সেনা সদস্যসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর এবারের তৎপরতায় অভিভূত। কোনো মিডিয়া কাভারেজ বা প্রচার ছাড়াই চলেছে কর্মযজ্ঞটি।

এর মাত্র কয়েক দিন আগে, সেনাবাহিনীর সতর্কবার্তা তথা হুঁশিয়ারিটা ছিল বেশ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হার্ড মেসেজ ছিল সেনাপ্রধান ও তাঁর বাহিনীর। কিন্তু তেমন হার্ড অ্যাকশনে যেতে হয়নি।

বিভিন্ন এলাকায় কিছু টোকেন অ্যাকশনেই মব পাণ্ডামি অনেকটা দমে গেছে। জায়গা মতো কয়েকটি অ্যাকশনে ঈদুল আজহায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ও দমেছে। সেনা সদর থেকে ব্রিফিংয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা, মানবিক করিডর ও সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সোজা ভাষায় সেনাবাহিনীর চাওয়া ও ভাবনা খোলাসা করে জানানো হয়েছে।

এ সময় দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয় এমন যেকোনো বিষয় কঠোরভাবে প্রতিহত করার কথাও জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো টানাপড়েন নেই, স্পষ্ট করে তা জানিয়ে বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় রটানো বানোয়াট তথ্য থেকে সাবধান থাকতে।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিতে সেনাবাহিনীর দুই সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রমের সুফল মিলছে এখানো। তাদের প্রচেষ্টায় মব জাস্টিস, চাঁদাবাজি, খুন-খারাবির ঘটনা অনেক কমে এসেছে। কিছু হটস্পট চিহ্নিত করে সেগুলোর ওপর নজরদারি ও অ্যাকশন বেশ কাজে দিয়েছে।

অবশেষে ঈদের পূর্বাপর হবিগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় পানিবন্দি গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়ানোর সমান্তরালে এলো—শুধু তাৎক্ষণিক নয়, সবার সুখে-দুঃখে পাশে থাকার বার্তা।

সরকার যখন নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে সচেষ্ট, সেনাবাহিনী রক্তপাত ঠেকাতে বদ্ধপরিকর, তখনো গুজববাজরা দেশে-বিদেশে অপপ্রচারে লিপ্ত। দেশে এবং সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা এই মহলটির খুব কাম্য। নতুন করে বলার অবকাশ নেই, বাংলাদেশ ইতিহাসের একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। যেখানে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এই চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশকে জিততেই হবে। এমন সন্ধিক্ষণেও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের কিছু অপতৎপরতা লক্ষণীয়। সেখানে সেনাবাহিনী জনগণের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে জাতিকে আরেকটি সাহস জুগিয়েছে।

আরো পড়ুন :  তাড়াইলে খেলাফত মজলিসের ঈদ পূনর্মিলনী

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে গেলে বা জনতার পাশে না থাকলে কার লাভ। বাংলাদেশে সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী থাকা মানে কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়, প্রতিবেশীসহ আশপাশের নিরাপত্তার জন্যও ইতিবাচক।

আমাদের সেনাবাহিনী গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে পেশাদার ভূমিকা পালন না করলে বাংলাদেশের অবস্থা কী হতো? আশপাশেরই বা কী দশা হতো? কোথায় গিয়ে পড়ত এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া?

জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়াতে অভ্যস্ত। নতুন করে সফট মেসেজে সেনাবাহিনী তা আরেকবার মনে করিয়ে দিল। চমৎকার চেইন অব কমান্ড থাকায় সব ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার প্রয়োগ না করেও দক্ষতার সঙ্গে মাঠে কাজ করার দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে সেনাবাহিনী।

কোথাও তাদের বিরুদ্ধে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য নেই। ‘দানবীয় লিগ্যাসির নখদন্ত সহসা যায় না’—এই ধারণার বিপরীতে সেনা কমান্ড যে পরিপক্বতার পরিচয় দিয়ে চলছে, তা নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কাছে ব্যতিক্রমী ঘটনা।

সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার সমান্তরালে ঐতিহাসিক সহযোগিতাও করে যাচ্ছে বাহিনীটি। রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করার ওয়াদাও রাখছে। বাড়তি ভূমিকা রাখছে দেশের গণতন্ত্রায়ণে।

গত আগস্টের শুরুতে হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী বাধা দেয়নি। এতে শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়। এনে দেয় জাতীয় ঐক্য ও গণতন্ত্রের বাতাবরণ।

এর মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী ও বাহিনীপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের ভূমিকা শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব ইতিহাসেরও নতুন উপাদানে পরিণত হয়; যা বর্তমানের পাশাপাশি ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ পাঠ-পঠন হয়ে থাকবে। হবে গবেষণাও।

আগস্টে সেনাপ্রধান সেই ভূমিকা না নিলে কেবল আরো প্রাণহানিসহ গৃহযুদ্ধই শুধু নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু ঘটে যেতে পারত। সে সময় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাতের শঙ্কাও ছিল প্রবল।

সেই বিবেচনায় দেশ, জাতি, গণতন্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যের পক্ষে কোরামিনের কাজ করেছেন এই সেনাপ্রধান। এখনো তিনি এবং তাঁর বাহিনী বর্তমান-ভবিষ্যৎ সব সময় দেশ-জনগণের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন।

রক্তপাত থেকে বাঁচিয়ে দেশকে একটি পথরেখা দেওয়া চৌকস সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের ক্ষমতালিপ্সা নেই, তা প্রমাণিত। চাইলে এই লিপ্সা চরিতার্থ করার পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল। এখনো আছে। কিন্তু তিনি সেই পথের পথিক নন।

নির্বাচন আয়োজনে দেরির কারণে নানা কথা রটছে। সেনাপ্রধান ও সরকারপ্রধান দুজনকেই এসব কুকথা হজম করতে হচ্ছে। অনিবার্য এক পরিস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে এখনো মাঠে আছে সেনাবাহিনী।

আর আছে বলেই সম্ভাব্য অনেক বিপদ থেকে রক্ষা পাচ্ছে দেশবাসী। জননিরাপত্তা, অনাকাঙ্ক্ষিত অরাজকতা প্রতিরোধ, সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের কারসাজি রুখে দেওয়া, মিল-কারখানা সচল রাখা, রাষ্ট্রের কেপিআই এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাগুলো রক্ষা, সড়ক-মহাসড়ক বাধামুক্ত রাখা, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তা বিবেকবানরা উপলব্ধি করছেন মর্মে মর্মে।

ঘটা করে এসবের কোনো প্রচার নেই। সেনাবাহিনী আত্মপ্রচারে অভ্যস্তও নয়। মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, বিভিন্ন চিহ্নিত অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতা পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তারের পুলিশি কাজও করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।

ক্ষতবিক্ষত, দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া পুলিশকে কাজে ফেরানো এখনো কঠিন কাজ। অন্যান্য বাহিনী একটু একটু করে পেশাদার হয়ে উঠছে। তাদের স্বাভাবিক করে তুলতে বাড়তি শ্রম দিতে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে।

বিশ্বায়নের যুগে রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি, সমরনীতি, নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্বকে আলাদা করা যায় না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। কখনো কখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেও।

২০২৪ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সেনাবাহিনী যেভাবে অংশীজন হয়েছে, তা সংগত কারণেই বাহিনীটির ওপর প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেনাপ্রধান ওয়াকারের ওপর ভরসার পারদটি তাই উচ্চমুখী। হিরো হয়েও তিনি যে হিরোইজম চর্চা করছেন না, এটিও এক তাৎপর্য।

একটি দায়িত্বশীল ও পেশাদার সেনাবাহিনীর গণতন্ত্রের পক্ষে এমন অবস্থান তাঁকে শুধু জীবন্ত কিংবদন্তিই করেনি, বাহিনীর মর্যাদাও বাড়িয়েছে। তাঁর সঠিক সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে দেশের গণতন্ত্রের পথকে করেছে প্রশস্ত। জনগণের পাশে অবস্থান জানানোর মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী নিঃসন্দেহে আরো উচ্চতায় আসীন।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৩:৪১
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৮:৪৯
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৩:৪৬
  • ১২:০১
  • ১৬:৩৭
  • ১৮:৪৯
  • ২০:১৫
  • ৫:১০