কয়েশ কোটি টাকা আত্মসাত করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া সেই প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) অর্থপাচারের মামলার মুখে নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের হেফাজতে দেশে ফেরার ইচ্ছাপোষণ করলেও এখন তিনি আসবেন না। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) আইনজীবী ই-মেইল করে অ্যাটর্নি জেনারেলেরে কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে পিকে হালদারের এই সিদ্ধান্ত পাল্টানোর কথা জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, পিকে হালদার এখন দেশে ফিরছেন না।
শনিবার অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আইএলএফএসএলের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন জানিয়েছেন যে, পিকে হালদার আসবেন না। দুদক এবং অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে একটা মেইল করেছেন আইনজীবী মিলন। ই-মেইলে তিনি জানিয়েছেন, পিকে হালদার নাকি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, মাহফুজুর রহমার মিলন মেইল করে দুদককে জানিয়েছেন, পিকে হালদার আসছেন না। শারীরিক অসুস্থতা এবং কোভিড-১৯ এর কারণে তিনি আসছেন না। কখন আসবেন পরে জানাবেন।
তবে এ বিষয়ে পিকে হালদারের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে চলতি বছরের শুরুতে বিদেশে পালিয়ে যান পিকে হালদার। বর্তমানে তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন। তবে পিকে হালদার পালিয়ে যাওয়ার পরই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে।
দুদকের এই মামলার মুখে নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে আইএলএফএসএল জানায়, আত্মসাত করা অর্থ ফেরত দিতে জীবনের নিরাপত্তার জন্য আদালতের আশ্রয়ে পিকে হালদার দেশে ফিরতে চাইছেন। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদারের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে আবেদন করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেড (আইএলএফএসএল)।
এ আবেদন গ্রহণ করে বুধবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশে আদালত বলেন, পিকে হালদার বিমান থেকে দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তিনি যাতে ‘নিরাপদে’ দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করতে পারেন সেজন্য পুলিশ প্রধান, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেন আদালত।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। আর আইএলএফএসএলের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন।
আদেশে বিচারক বলেন, পিকে হালদার যদি দেশে আসেন তাহলে কোম্পানি মেটারটা নিষ্পত্তি করা যাবে। সেটা নিষ্পত্তি করার জন্য এ আদালত দেখতে চান যে, তিনি (পিকে হালদার) বিমানযোগে দেশে পা ফেলা মাত্র তাকে যেন গ্রেফতার করা হয় এবং জেলে নেয়া হয়। তাকে যেন বাইরে যেতে না দেয়া হয়। এ কাজটা যদি করা হয় তাহলে তার আবেদন অনুযায়ী তিনি যে মনে করছেন তাকে অপহরণ করা হবে তা আর হবে না।
আদালত আরও বলেন, গ্রেফতার হওয়ার পরও কোম্পানির বিভিন্ন বৈঠকে পি কে হালদার থাকতে পারবেন। প্রয়োজনে তার চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থাও করে দেয়া হবে। এ বিষয়ে ডেসটিনির মামলায় আপিল বিভাগের একটি নির্দেশনা আছে।
গাইবান্ধায় স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষক চাচা গ্রেফতার
আইএলএফএসএলের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে করা আবেদনে বলা হয়- আগামী ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসার জন্য তিনি টিকিট কেটেছেন। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় ফ্লাইটটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার কথা রয়েছে। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর একই বেঞ্চে এ সংক্রান্ত আরেকটি আবেদন করেছিল আইএলএফএসএল। সেদিন আদালত বলেছিলেন, পিকে হালদার কবে, কখন, কোন ফ্লাইটে দেশে ফিরতে চান তা সুনির্দিষ্টভাবে জানালে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ও দুদকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।
জানা গেছে, ২৮ জুন আইএলএফএসএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পিকে হালদার একটি আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়- তার অনুপস্থিতি ও দেশের মধ্যে সৃষ্ট ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে’ ওইসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ‘জটিল আকার’ ধারণ করেছে। তিনি দেশে ফিরলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘সংকট কেটে যাবে’ এবং করোনা মহামারীর সময়ে দেশের অর্থনীতিতে ‘ইতিবাচক ভূমিকা’ রাখতে পারবে। সেজন্য তিনি ‘ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে’ দেশে ফিরতে চান এবং অন্য সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দায়দেনা মিটিয়ে ফেলতে চান। এরপর তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে আবেদন করে আইএলএফএসএল।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান বলে চলতি বছরের শুরুতে খবর আসে। এরপর আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে তাকে অপসারণের পাশাপাশি তার সম্পত্তি জব্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
এর আগে আইএলএফএসএলে রাখা আমানতের টাকা ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে সাতজন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২১ জানুয়ারি পিকে হালদার, তার মা, স্ত্রী, ভাই এবং ওই কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দেয়। তাদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ওই নির্দেশ দেয়া হলেও পিকে হালদার ততদিনে লাপাত্তা হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।