পাহাড়ে সেনাবাহিনীর সমৃদ্ধি বাড়ানো দাবি
- আপডেট সময় : ০৫:১৯:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ১২৮০ বার পড়া হয়েছে
পাহাড়ে সেনাবাহিনীর সমৃদ্ধি বাড়ানো দাবি
স্টাফ রিপোর্টারঃ
খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম। যা বাংলাদেশের ভূখণ্ডের প্রায় ১০ শতাংশ। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধ বায়ো-বৈচিত্র্যের পাশাপাশি এই অঞ্চল দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘ ও দুর্গম সীমান্তসমূহ ঘেঁষে অবস্থিত এই পাহাড়ি এলাকা, কৌশলগত দিক থেকে দেশটির নিরাপত্তার প্রাচীর। সেই কারণে পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সক্ষমতা ও উপস্থিতি বৃদ্ধি করা এখন সময়ের একান্ত প্রয়োজন।
১৯৭৫ সালের পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার দিকে এক বড় ধাপ হলেও, সেই সঙ্গে সেনাবাহিনী এখান থেকে পূর্ণ প্রত্যাহার একটি ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
কারণ সীমান্ত সুরক্ষা, মাদক ও অস্ত্র পাচার, মানবপাচার, সশস্ত্র গোষ্ঠীর অব্যাহত ছড়ানো ও অনিয়মিত তৎপরতা এবং স্থানীয় অস্থিরতা এখনো পুরোপুরি নির্মূল হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ১,০৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের মধ্যে ৮৬৮ কিলোমিটার ভারতের সঙ্গে এবং ২০৯ কিলোমিটার মিয়ানমারের সঙ্গে। এই সীমান্তের বড় অংশ দুর্গম পাহাড়ি বনাঞ্চল হওয়ায় নজরদারি ও সীমান্ত রক্ষা কঠিন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, প্রতিবছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার বেশি মাদক এই সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশের চেষ্টা হয়। আধুনিক ড্রোন, থার্মাল ক্যামেরা ও হেলিকপ্টারসহ উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা সেনাবাহিনীর হাতে থাকলে এই অপরাধ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।
শান্তিচুক্তির পর সেনাবাহিনী শুধু নিরাপত্তা বাহিনী হিসেবে নয়, বরং আঞ্চলিক উন্নয়ন, জনআস্থা গড়ে তোলার মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছে। দুর্গম এলাকায় বিনামূল্যে চিকিৎসা শিবির আয়োজন, শিক্ষা সহায়তা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রমের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে আস্থা ও সেতুবন্ধন গড়ে উঠেছে। সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ইউনিট পাহাড়ি এলাকার অবকাঠামো নির্মাণে দ্রুত ও দক্ষতা প্রদর্শন করেছে।
২০২৩ সালের মধ্যে ৩৫০ কিলোমিটার সড়ক ও ৪২টি সেতু নির্মাণের পাশাপাশি পরিচালনা করছে ২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৫টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এছাড়া প্রতি বছর প্রায় ৪৫টি বিনামূল্যের চিকিৎসা শিবিরে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ সেবা পায়। যা গত কয়েক বছরে শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। দুর্যোগের সময় ভূমিধস ও পাহাড় ধসে দ্রুত উদ্ধার ত্রাণ কাজের সফল উদাহরণ রয়েছে।
মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সক্রিয় হওয়ার আশঙ্কা, এবং প্রতিবেশী দেশে সংঘর্ষের ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি পার্বত্য অঞ্চলের আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে।
এছাড়াও, তিন পার্বত্য জেলায় বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে। শান্তিচুক্তির পরও চাঁদাবাজি ও অস্থিরতা কমেনি, যা সাধারণ মানুষ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে রেখেছে। এসব সমস্যার সুচারু মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর শক্তিশালী উপস্থিতি ও কার্যকর ভূমিকা অপরিহার্য।
তাই সময় এসেছে পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার। আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ড্রোন, স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন ও থার্মাল ইমেজিং ব্যবহার করতে হবে। পাহাড়ি ও সীমান্ত টহলের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। নতুন সেনা ঘাঁটি, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও আবাসন সুবিধা গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় জনগণকে নিরাপত্তা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
পাহাড়ি অঞ্চলের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য সেনাবাহিনীর শক্তিশালী ভূমিকা অপরিহার্য। এটি শুধুমাত্র সামরিক নিরাপত্তার বিষয় নয়, বরং জাতীয় উন্নয়ন ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের সুরক্ষার প্রাচীর। এই প্রাচীরকে মজবুত রাখতে সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি এখন সময়ের সবচেয়ে জরুরি কাজ।