মোঃ বেল্লাল হোসেন নাঈম, নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে স্বামীকে বেঁধে রেখে নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় রবিবার রাতে নয়জনকে আসামি একটি মামলা হয়েছে। এছাড়া ভিকটিমের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অপরাধে পর্নোগ্রাফি আইনে আরেকটি মামলাসহ বেগমগঞ্জ মডেল থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন ওই নারী।
রবিবার রাত ১১টায় এলাকার মোহর আলী মুন্সি বাড়ির মৃত আ. রহিমের ছেলে রহমত উল্লাকে (৪০) গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে বিকালে একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার হারাধন ভুঁইয়া বাড়ির শেখ আহমদ দুলালের ছেলে আ. রহিমকে (২০) গ্রেফতার করা হয়।এছাড়া সোমবার সকালে প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা কামরাঙ্গীরচর এবং দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
এ নিয়ে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ জনে।এদিকে ঘটনার প্রধান হোতা যুবলীগ নেতা দেলোয়ারকে মামলার এজাহারে নাম না থাকায় এলাকার সর্বত্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।অপরদিকে, গ্রেফতারকৃত আবদুর রহিম ও রহমত উল্যাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।তাদের ২ জনকে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে বেগমগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে। তাদের দুইজনের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এ ঘটনায় জড়িতদের সকলকে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে নোয়াখালী প্রেসক্লাব ও ডিসি অফিসের সামনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও এনজিও প্রতিষ্ঠান। প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসো গড়ি উন্নয়ন সংস্থা, এনআরডিএস, নারী অধিকার জোট, এফপিএবিসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।এ ছাড়াও নোয়াখালীর চাটখিল, সোনাইমুড়ী, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সূর্বনচর, হাতিয়া, বসুরহাট উপজেলা বিভিন্ন সংগঠনে বিবস্ত্র নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে মিছিল মানববন্ধন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছে।
এলাকাবাসী ঘটনার মূলহোতা মাদকব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।জানা যায়, উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার মেয়ের সাথে স্বামীর মনোমালিন্য ছিলো দীর্ঘদিন। এ সুযোগে স্থানীয় বাদল ও মাদক সম্রাট দেলোয়ারের নেতৃত্বে এলাকার, রহিম, কালাম ও তাদের সহযোগীরা ওই নারীকে কু প্রস্তাব ও মাদক বিক্রিতে বাধ্য করতে চেয়েছিল।
সে রাজি না হওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। উল্লেখ্য, ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই গৃহবধূর স্বামী শ্বশুর বাড়িতে আসে। তারা ঘরে অবস্থান করা কালে স্বামীসহ গৃহবধূকে অপবাদ দিয়ে আটক করে বিবস্ত্র করে ব্যাপক নির্যাতন চালায়।তারা স্বামীকে বেঁধে রেখে অবৈধ সম্পর্কের কথা বলে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে। এ সময় তার বিবস্ত্র ভিডিও ধারন করে রাখে নির্যাতনকারীরা। ঘটনার ৩২ দিন পর ৪ অক্টোবর ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ভিডিও ভাইরাল হলে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের। দিনভর পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়।
মামলার আসামিরা হলোঃ ১) মধ্যম একলাস পুরের রহমত উল্যার ছেলে বাদল(২২), ২) জয়কৃষ্ণ পুরের শেখ আহমদের ছেলে রহিম(২০), ৩) খালপাড় এলাকার জুলফিকার আলীর ছেলে আবদুল কালাম(২২),৪) মধ্যম একলাস পুরের আমিন উল্যার ছেলে ইস্রাফিল হোসেন(২০), ৫) পূর্ব একলাস পুরের লোকমান মিয়ার ছেলে সাজু (২১), ৬) একই গ্রামের নেয়ামত উল্যার ছেলে শামছুদ্দিন সুমন(৩৯), ৭) খালপাড়ের আবদুল জলিলের ছেলে আবদুর রব ওরফে চৌধুরী(৪৮), ৮) একইগ্রামের মৃত মোস্তফা মিয়ার ছেলে আরিফ (১৮) ৯) একই গ্রামের মৃত আবদুল করিমের ছেলে রহমত উল্যা(৪১)।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করে। অন্যদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।