ঢাকা ০৫:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo মানবতার ডাক’-এর মহতী উদ্যোগ: মরণ ফাঁদ রাস্তায় ফেরালো জীবনের চলাচল Logo গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ জাতিসংঘ আদালতের Logo মাটিরাঙ্গায় গনধর্ষণের শিকার কিশোরী: আটক-২ Logo শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় পাহাড়ে কাজ করছে বিজিবি Logo ন্যায্য দাবি আদায়ে দীঘিনালায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি Logo শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা হবে মোট ১৫ শতাংশ, দুই ধাপে দেওয়া হবে Logo দশমিনায় জেলেদের জিম্মি করে ছাত্রদল নেতার চাঁদাবাজি Logo বেনাপোলে কোটি টাকার বকেয়া আদায়ের দাবিতে আমদানিকারকের সংবাদ সম্মেলন Logo মানবতার আলোর পথে: লালন দর্শনের নতুন পাঠ Logo পরিমাপের ক্ষেত্রে মানসম্মত পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম : ড. ইউনূস

প্রমাণের আগে অপরাধী সাব্যস্ত করা নিয়ে কোরআন-হাদিসে যা আছে

Astha DESK
  • আপডেট সময় : ০৯:০৯:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ১৪৮৯ বার পড়া হয়েছে

ইসলামে প্রমাণবিহীন শাস্তি দেওয়া অন্যায়। যেকোনো অপরাধে সন্দেহ হলেই কাউকে অভিযুক্ত করা বা শাস্তি দেওয়া নিয়ে নবীজি উম্মতকে সতর্ক করেছেন। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যার জিনিস চুরি হয়, সে ধারণা ও অনুমান করতে করতে চোরের চেয়েও অগ্রসর হয়ে যায়।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ: ১৩০১)

ইসলাম চৌদ্দশ বছর আগে সন্দেহকে অন্যায় সাব্যস্ত করে সন্দেহ থেকে সৃষ্ট সব অন্যায়ের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক; কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ। (সুরা হুজরাত: ১২)

রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে তোমরা দূরে থাকো। কেননা, মন্দ ধারণা হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা।’ (তিরমিজি: ১৯৮৮) রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন- ‘সব শোনা কথা প্রচার ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৪৯৯২)

অতএব, প্রমাণের আগে কাউকে অপরাধী বলা যাবে না এবং এ বিষয়ে কাউকে পাকড়াও করা যাবে না। এর ফল খুব খারাপ হতে পারে। তাই তো আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সতর্ক করে বলেন, হে ঈমানদারগণ, যদি কোনো ফাসিক তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।’ (সুরা হুজরাত: ৬)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ ও অন্তরের প্রতিটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩৬)

প্রমাণ ছাড়া কাউকে অপরাধী বলা, অনুমানের ওপর ভিত্তি করে কোনো ব্যক্তির সম্মানহানি করা এবং অপবাদে জর্জরিত করা মিথ্যাচার ছাড়া অন্যকিছু নয়। বিশেষ করে কোনো চরিত্রবান নারীর চরিত্রহনন করে অপবাদ দিলে ইসলাম তাকে শাস্তির আওতায় আনতে বলেছে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা সচ্চরিত্রবান-সরলমনা মুমিন নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখেরাতে) রয়েছে মহাশাস্তি।’ (সুরা নুর: ২৩)

আসলে শয়তান মানুষকে প্রবৃত্তির অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে মানুষ সীমা লঙ্ঘন করে বসে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করতে চান, আর যারা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে তোমরা ভীষণভাবে পথচ্যুত হও। আল্লাহ তোমাদের ভার লঘু করতে চান। কেননা মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বলরূপে।’ (সুরা নিসা: ২৭-২৮)

অতএব অপরাধী সাব্যস্ত করা বা শাস্তি দেয়ার আগে প্রমাণ লাগবে। কোনো অপরাধ অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিচারকাজ সম্পাদন করার জন্য ইসলাম উক্ত বিষয়ে নিশ্চিত হতে সাক্ষীর ব্যবস্থা করেছে। কোনোক্ষেত্রে এক, দুই বা তিনজন সাক্ষী নির্ধারণ করেছে। ব্যভিচারের ক্ষেত্রে চারজন সাক্ষীর শর্তরোপ করা হয়েছে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য হতে চারজন সাক্ষী তলব করো।’ (সূরা নিসা: ১৫)

সুতরাং মুসলমানের দায়িত্ব হলো, কারো ব্যাপারে সন্দেহ হলে হুটহাট সিদ্ধান্ত কিংবা আতঙ্ক না ছড়িয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা। কর্তৃপক্ষই তদন্ত করবে বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। নিজের অজান্তে যেন নিজের ও মানুষের ক্ষতি না করি সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

ট্যাগস :

প্রমাণের আগে অপরাধী সাব্যস্ত করা নিয়ে কোরআন-হাদিসে যা আছে

আপডেট সময় : ০৯:০৯:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ইসলামে প্রমাণবিহীন শাস্তি দেওয়া অন্যায়। যেকোনো অপরাধে সন্দেহ হলেই কাউকে অভিযুক্ত করা বা শাস্তি দেওয়া নিয়ে নবীজি উম্মতকে সতর্ক করেছেন। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যার জিনিস চুরি হয়, সে ধারণা ও অনুমান করতে করতে চোরের চেয়েও অগ্রসর হয়ে যায়।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ: ১৩০১)

ইসলাম চৌদ্দশ বছর আগে সন্দেহকে অন্যায় সাব্যস্ত করে সন্দেহ থেকে সৃষ্ট সব অন্যায়ের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক; কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ। (সুরা হুজরাত: ১২)

রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে তোমরা দূরে থাকো। কেননা, মন্দ ধারণা হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা।’ (তিরমিজি: ১৯৮৮) রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন- ‘সব শোনা কথা প্রচার ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৪৯৯২)

অতএব, প্রমাণের আগে কাউকে অপরাধী বলা যাবে না এবং এ বিষয়ে কাউকে পাকড়াও করা যাবে না। এর ফল খুব খারাপ হতে পারে। তাই তো আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সতর্ক করে বলেন, হে ঈমানদারগণ, যদি কোনো ফাসিক তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।’ (সুরা হুজরাত: ৬)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ ও অন্তরের প্রতিটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩৬)

প্রমাণ ছাড়া কাউকে অপরাধী বলা, অনুমানের ওপর ভিত্তি করে কোনো ব্যক্তির সম্মানহানি করা এবং অপবাদে জর্জরিত করা মিথ্যাচার ছাড়া অন্যকিছু নয়। বিশেষ করে কোনো চরিত্রবান নারীর চরিত্রহনন করে অপবাদ দিলে ইসলাম তাকে শাস্তির আওতায় আনতে বলেছে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা সচ্চরিত্রবান-সরলমনা মুমিন নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখেরাতে) রয়েছে মহাশাস্তি।’ (সুরা নুর: ২৩)

আসলে শয়তান মানুষকে প্রবৃত্তির অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে মানুষ সীমা লঙ্ঘন করে বসে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করতে চান, আর যারা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে তোমরা ভীষণভাবে পথচ্যুত হও। আল্লাহ তোমাদের ভার লঘু করতে চান। কেননা মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বলরূপে।’ (সুরা নিসা: ২৭-২৮)

অতএব অপরাধী সাব্যস্ত করা বা শাস্তি দেয়ার আগে প্রমাণ লাগবে। কোনো অপরাধ অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিচারকাজ সম্পাদন করার জন্য ইসলাম উক্ত বিষয়ে নিশ্চিত হতে সাক্ষীর ব্যবস্থা করেছে। কোনোক্ষেত্রে এক, দুই বা তিনজন সাক্ষী নির্ধারণ করেছে। ব্যভিচারের ক্ষেত্রে চারজন সাক্ষীর শর্তরোপ করা হয়েছে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য হতে চারজন সাক্ষী তলব করো।’ (সূরা নিসা: ১৫)

সুতরাং মুসলমানের দায়িত্ব হলো, কারো ব্যাপারে সন্দেহ হলে হুটহাট সিদ্ধান্ত কিংবা আতঙ্ক না ছড়িয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা। কর্তৃপক্ষই তদন্ত করবে বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। নিজের অজান্তে যেন নিজের ও মানুষের ক্ষতি না করি সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।