হৃদয় সরকার: গোপালগঞ্জে জাতির জনকের নামাঙ্কিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) প্রাক্তন ভিসি নাসিরউদ্দীনের দায়িত্বে অবহেলার কথা জানালেন নবনিযুক্ত ভিসি ড. এ কিউ এম মাহবুর।
তিনি এক প্রতিবেদনে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি উন্মুক্ত পরিবেশের জায়গা। যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় সকল জিনিসের চাহিদা পূরণ করতে পারবে। যেখানে থাকবে প্রয়োজনীয় আবাসিক সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু জাতির পিতার নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোন সুযোগ-সুবিধা, তার কোন ম্যুরাল নেই, নেই কোন টিএসসি চত্ত্বর।
আরও পড়ুনঃ বশেমুরবিপ্রবিতে কম্পিউটার চুরির মহোৎসব!
গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে নাসির উদ্দীন ভিসি পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়, তারপর ৬মাসের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার কিন্তু আজ ১ বছর হয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুবন্ধু ম্যুরাল তৈরি করা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত ভিসি চেষ্টা করলে ম্যুরালটি তৈরি করতে পারতেন। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’টি তৈরি করা হতো এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিজস্ব একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করা যেত। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব ফান্ড আছে কিন্তু সেটিও করা হয়নি।
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় একটি পরিচয় হলো তার প্রবেশ গেইট কিন্তু সেটাও করা হয়নি। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যাধিক বেঞ্চ তৈরি করা হয়েছে যেগুলো আজ সংরক্ষণের অভাবে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের জায়গার অভাবে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ আজ নষ্ট হচ্ছে।
অযথা ভাবে সরকারি টাকা খরচ না করে চাইলেই সেগুলো দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোন দিকে উন্নয়ন করা যেত। এতে করে জাতির পিতার নামে বিশ্ববিদ্যালয়টির সুনাম বৃদ্ধি পেত। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি চত্ত্বর আছে কিন্তু এখানে সেটি নেই। সরকারতো প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা করে কোটি কোটি টাকা বাজেট দিচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারে অনেক টাকা জমা আছে, চাইলে সেগুলো দিয়ে টিএসসি চত্ত্বর করা যেত কিন্তু সেটিও করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন বাস রাখার জন্য গ্যারেজ তৈরি করা হয়েছে কিন্তু আজ সেটি পরিত্যক্ত। গ্যারেজে বাস না রেখে সেগুলো অন্যত্র রাখা হচ্ছে যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেদিকে কোন লক্ষ্যই রাখেননি। মূলত দায়িত্ব অবহেলার কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনটি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কম্পিউটার চুরি সম্পর্কিত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ২৭জন নিরাপত্তা কর্মীর মধ্যে বিনা নোটিশে ২০জনই দায়িত্ব অবহেলা করে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করে। যার কারনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবছর ৪৯ টি কম্পিউটার সহ গত ৫বছরে ১৩৯ টি কম্পিউটার চুরি হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্বরত সিকিউরিটি কর্মীদের প্রতিবার দায়িত্ব অবহেলার কারনে এমনটি ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে প্রতিবার কম্পিউটার চুরি হতোনা বলে মনে করেন তিনি। এতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি ইঙ্গিত করেন । তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের নিচতলায় অনিরাপত্তার মধ্যে ১৫০ টি কম্পিউটার রাখা হয়েছে, চোর চাইলে যেকোন সময় সেগুলো নিয়ে যেতে পারে কিন্তু এসব বিষয়ে প্রাক্তন ভিসি কোন দায়িত্ব নেন নি। কিন্তু আজ সেগুলো ভবনের উপরের তলায় রাখা হয়েছে।
পূর্বকৃত কম্পিউটার চুরির তদন্ত কমিটি সম্পর্কে তিনি জানায়, গত ৫বছর যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনবরত একের পর এক কম্পিউটার চুরি হয়ে যায়। এতে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয় কিন্তু দিন শেষে ফলাফল শুন্য আসে। প্রাক্তন ভিসি নাসির উদ্দীন চেষ্টা করলে প্রতিটা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী চোরদের আইনের আওতায় আনতে পারতো বলে মনে করেন তিনি। বশেমুরবিপ্রবিতে শুধু এসব সমস্যাকেই তিনি বড় মনে করছেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ে আভ্যন্তরীন অনেক সমস্যা রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্বরত কর্মীরা তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেনি এবং বর্তমানেও করছেনা। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।