পাটকলের নারী শ্রমিককে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে পাঁচজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ সময় তাদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল সোয়া ৪টায় ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিুজর রহমান এ রায় দেন।
ফরিদপুরের মধুখালি উপজেলায় পাটকলের নারী শ্রমিককে দলবদ্ধ ধর্ষণ পরে হত্যার মামলায় এরায় প্রদান করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে আসামীদের পুলিশ প্রহরায় জেল হাজতে পাঠানো হয়। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, চুন্নু সিকদার, মো. নাজমুল হোসেন তেবেজ, ইসলাম মীর, আতিয়ার মোল্লা ও মো. নাছির খান নয়ন। আসামীদের সকলের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। আদালত ও মামলার বিবরণ সূত্রে জানাযায়, ফরিদপুরে মধুখালী উপজেলার রাজধরপুর প্রাইড জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন নারী শ্রমিক কাজল রেখা। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের ১৫ তারিখে ওভারটাইম ডিউটি করে মিল থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকতেই পথমধ্যে নছিমন চালক চুন্নু সিকদার প্রথমে তাকে রাজধরপুর বাবু মিলিটারির কলাবাগানে নিয়ে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ করার ঘটনাটি দেখে ফেলায় তেবেজ, ইসলাম মীর, আতিয়ার ও নাছিরও একই সাথে নারী শ্রমিককে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনা কাউকে বলে দিলে ধর্ষকদের মানহানি হবে এমনটি ভেবে নিয়ে সকলে মিলে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে কলা বাগানে ফেলে রেখে যায় নারী শ্রমিককে। ঘটনার পরেরদিন সকালে স্থানীয়রা কলাবাগানে মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। হত্যার ঘটনার পরের দিন ১৬ অক্টোবর নারী শ্রমিকের মা বাদী হয়ে মুধখালী থানায় ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মধুখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাহেব আলী ও সাইফুল আলম ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখে মোবাইলের কল লিস্ট যাচাই-বাছাই শেষে ওই পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চুরান্ত চার্জশিট জমা দেন। দীর্ঘ সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে তাদের বিরুদ্ধে আনা অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় আদালতে। আদালত রায়ে প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার পাল আজকের দর্পণকে বলেন, আসামিরা প্রত্যেকে নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের মধ্যে আসামি নয়ন ভিকটিমকে হত্যার পরেও ধর্ষণ করেছিলেন বলে আদালতে জানান। আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(৩) ধারাসহ ৩০২/৩৪ ধারায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ একদিকে সন্তুষ্ট অপরদিকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়ে অপরাধ প্রবণতা অনেক ক্মে থাকবে বলে মনে করেন।