DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশনিবার ৪ঠা মে ২০২৪
ঢাকাশনিবার ৪ঠা মে ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাবরি মসজিদ মামলা: ভারতের আদালতের লজ্জাজনক রায়!

News Editor
সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০ ১০:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ভারতের লখনউ’র বিশেষ আদালত জানিয়েছেন, ১৯৯২ সালে ১৬ শতকের ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদ হিন্দু বিক্ষোভকারীরা পরিকল্পনা করে ধ্বংস করেনি। পরিকল্পিত ধ্বংসের প্রমাণ না পেয়ে অভিযুক্ত ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতাদের খালাস দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) বিচারিক আদালত ২৮ বছর পুরোনা মামলার রায় ঘোষণা করেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরন্দ্রে মোদির এক সময়কার রাজনৈতিক গুরু সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানিসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল।

৩২ জনের বিরুদ্ধে ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা শহরের মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী বাররি মসজিদ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র, বিক্ষোভকারীদের উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। রাজ্যের রাজধানী লকনউ থেকে অযোধ্যার দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটার। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জেরে ভারতজুড়ে জাতিগত সংঘাতে ২ হাজারের মতো মানুষ নিহত হয়। যাদের অধিকাংশ মুসলমান।

এদিন অভিযোগ থেকে যাদের খালাস দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতারা হলেন, লাল কৃষ্ণ আদভানি, সাবেক মন্ত্রী মুরলি মনোহর জোশি, উমা ভারতী, বিনয় কাটিয়ার এবং উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহ।

আরও পড়ুন: রিফাত হত্যার পর মিন্নিকে শেষ বার্তায় যা বলেছিল নয়ন বন্ড

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর দেয়া রায়ে আদালত জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরাসরি সংঘাতে জড়িত থাকার পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিবাদী পক্ষের আইনজীবী মানিশ কুমার ত্রিপাঠি এ তথ্য জানিয়েছেন। আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, শক্তিশালী কোনো প্রমাণ উত্থাপন করতে পারিনি বিপরীত পক্ষ। এ কারণে আদালত তাদের প্রমাণ গ্রহণ করেননি।

বিবাদী পক্ষের আরেক আইনজীবী আই.বি সিংহ বলেন, তদন্তকারীরা আদালতে বা বিচারকের সামনে অডিও-ভিডিও রেকর্ডসহ যেসব তথ্য প্রমাণ হাজির করেছে; তাতে প্রমাণ হয়নি যে অভিযুক্তরা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে জড়িত।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রুচিরা গুপ্তা ২৮ বছরের আগের ওই ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিচারপতি মনমোহন সিংহ লিবারহানের নেতৃত্বে গঠিত সরকারি তদন্ত কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি। ১৭ বছর পর কমিশন বিজেপি’র জ্যেষ্ঠ নেতাদের অভিযুক্ত করে আদালতে সেই প্রতিবেদন দাখিল করে।

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, বাবরি ধ্বংসের দিন যা কিছু ঘটেছে সব কিছু নিজের চোখে দেখেছি আমি। লাল কৃষ্ণ আদভানি, উমা ভারতী, মুরলি মহোন জোশি, মোহন ভাগওয়াতসহ বিজেপি এবং আরএসএসের অনেক নেতার সঙ্গে আমি একই মঞ্চে ছিলাম।

‘তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মসজিদ ধ্বংসের জন্য বিক্ষোভকারীদের উৎসাহী করছিল। একটা স্লোগান তারা বারবার দিচ্ছিল-এক ধাক্কা দাও; মসজিদ গুড়িয়ে দাও। এটা কী ইচ্ছাকৃত নয়? মসজিদ ধ্বংসের জন্য স্লোগান দেয়া হয়েছে-এতে কোনো সন্দেহ নেই।

‘মসজিদ ধ্বংসের দিন আদভানি মাইক্রোফোনে ঘোষণা করছিলেন- মসজিদের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীকে কোনোভাবেই ঘেঁষতে দেয়া যাবে না। এটা কি মসজিদ ধ্বংসের উদ্দেশ্যে করা হয়নি?’ মসজিদ ধ্বংসের সময় সেখানে উপস্থিত থাকা ফটোসাংবাদিক পারভিন জৈন আরো বলেন, মসজিদ ধ্বংসের আগে তারা উন্মুক্ত মহাড়ায়ও দিয়েছে। লিবারহান কমিশনের কাছে আমি সাক্ষ্য দিয়েছি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়-সিবিআই আমাকে সাক্ষ্যের জন্যও ডাকেনি। তার অর্থ দাঁড়ায়; রায় কি হবে-তা তারা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আদভানি বলেন, আমাদের সবার জন্য খুশির মুহূর্ত এটি। জোশি বলেন, সত্যের জয় হয়েছে।

আরও পড়ুন: দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে মিন্নির ফাঁসি কার্যকর হবে!

খালাস পাওয়া আরেক অভিযুক্ত জয় ভগবান গোয়াল বলেন, আমরা ভুল কিছুই করিনি। আজ সমগ্র ভারত আনন্দিত। রাম মন্দির অযোধ্যায় ফিরেছে।

‘আমরা আপিল করবো’

খালাস পাওয়া বিজেপি নেতা-আদভানি, জোশি, ভারতী এবং সিং বলেন, ক্ষুব্ধ হিন্দু বিক্ষোভকারীদের স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে।

আদালতের রায়কে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি নিউজ চ্যানেল জানায়, উগ্র-অসামাজিক ব্যক্তিরা মসজিদ ধ্বংসের চেষ্টা করেছে। অভিযুক্ত নেতারা তাদের থামানোর চেষ্টা করেছিলেন।

আপিল আদালতে খালাসের রায় চ্যালেঞ্জের ঘোষণা দিয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়।

অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল বোর্ডের আইনজীবী জাফারইয়াব জিলানি বলেন, বুধবারের রায়ে আদালত সব তথ্য প্রমাণ অগ্রাহ্য করেছে।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, এটি একটি ভুল বিচার। যা তথ্য প্রমাণ এবং আইনবিরোধী। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো।

গেলো বছর ভারতের সুপ্রিমকোর্ট একতরফাভাবে মসজিদের জায়গা মন্দির নির্মাণের জন্য দিয়ে দেয়। বিজেপি’র হাতে একটি বিজয় তুলে দেয়া হয়; যাতে তারা ভারতজুড়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারে।

আরও পড়ুন: দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে মিন্নির ফাঁসি কার্যকর হবে!

গেলো নভেম্বরের রায়ে শীর্ষ আদালত, বিতর্কিত ২ দশমিক ৭৭ একর ভূমির পুরোটা মন্দির নির্মাণের জন্য হিন্দুদের দিয়ে দেয়।

এ ভূমিতে মুসলমানদের দাবি রয়েছে। কিন্তু আদালতের রায়ে তাদের হারতে হয়। আদালত জানায়, মসজিদ ধ্বংস করা অপরাধ কার্যক্রম। হারানো জায়গার পরিবর্তে মুসলমানদের অন্যত্র ৫ একর জায়গা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় আদালত।

গেলো মাসে বাবরি মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মাণের উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যার মাধ্যমে ১৯৮০ সালে বিজেপির প্রতিষ্ঠাকালীন প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়। সে সময় মন্দির আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে পরিচিতি পায় ভারতীয় জনতা পার্টি।

অনেক হিন্দু বিশ্বাস করেন, ১৬ শতকে মুঘল সম্রাট বাবরের নামে নির্মিত বাবরি মসজিদ, অযোধ্যার রামের জন্মভূমিতে তৈরি হয়েছে। যদিও তার কোনো ভিত্তি নেই। নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে রায়ে বলা হয়েছে, মসজিদের ধ্বংসাবশেষের নিচে মন্দিরের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

বুধবারে রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর লক্ষাধিক হিন্দু বাবরি মসজিদ চত্বরে হাজির হয়। তাদের একটি দল মসজিদের গম্বুজে উঠে। কুঠার, হাতুড়ি দিয়ে মসজিদটি গুড়িয়ে দেয়।

রায়কে স্বাগত জানিয়ে আল জাজিরাকে বিজেপির মুখপাত্র সৈয়দ জাফার ইসলাম বলেন, আদালত তথ্য প্রমাণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছেন, এটি পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র নয়। বিজেপি নেতারা কোনো অপরাধ করেননি।

আরও পড়ুন: দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে মিন্নির ফাঁসি কার্যকর হবে!

‘অতীতে বিজেপি নেতাদের অভিযুক্ত করার জন্য রাজনৈতিক চাপ ছিল। যদিও সে অভিযোগ তারা বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন। আজ আবারও তা প্রমাণ হলো।’

এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আদালতের দেয়া খালাসের রায়কে লজ্জাজনক আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, চরমপন্থী বিজেপি-আরএসএস সরকারে অধীনে ভারতের বিচার বিভাগ কতোটা স্বচ্ছ এ রায় তার আরেকটি প্রমাণ। বিচারের সমস্ত রীতিনীতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিবর্তে চরমপন্থা এবং হিন্দুত্ববাদ বিজেপি-আরএসএসের কাছে সবার আগে।

সূত্র: আল জাজিরা।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:০২
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৬:৩১
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:০৭
  • ১১:৫৯
  • ৪:৩১
  • ৬:৩১
  • ৭:৫০
  • ৫:২৪