৪২-এ পা দিলেন ভারতীয় বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা বিশ্বনাথ বসু। কমেডিয়ান হিসেবে ইতিমধ্যেই তিনি স্থান করে নিয়েছেন দুই বাংলার দর্শকদের হৃদয়ে। জন্মদিনে তার বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। দৈনিক আস্থা পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি হুবহু প্রকাশ করা হলো-
প্রশ্ন: ৪০ পেরিয়ে আরও দু’ঘর এগিয়ে। মনখারাপ, বুড়ো হয়ে যাওয়ার ভয়?
বিশ্বনাথ: ধুররর! জীবনের এই তো শুরু। আরও কত কিছু পাওনা আছে। দেখার আছে। ছেলে দুটো বড় হচ্ছে। ওদের থিতু হতে দেখব না! কত অভিজ্ঞতা ঝুলিতে। এগুলো কি অল্প বয়স দিতে পারবে? ওই জন্যেই তো জন্মদিনের ছবির ট্যাগলাইন, ‘বিপ্লব এবার হবেই হবে- ৪২ বলে কথা’!
প্রশ্ন: রাতে ডাবল কেক কেটে সেলিব্রেশন! সকালের ফ্লাইটে মুম্বই। আড়বালিয়ার বিশ্বনাথ ‘সেলিব্রেটি’ হলেন?
বিশ্বনাথ: সেলিব্রেটি-টেলেব্রেটি কিচ্ছু না। দুনিয়া যতই ওলটপালট হোক, আমি বছরে তিনবার ঘুরতে বের হবই- ছেলেদের স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটিতে, পুজোর পর আর শীতে।
করোনার দাক্ষিণ্যে প্রথম বেড়ানোয় কাটা চিহ্ন পড়েছে। জুলাইয়ে অবশ্য পুষিয়ে নিয়েছি মন্দারমণি, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া গিয়ে। এটা দ্বিতীয় দফা। এক ঢিলে দুই পাখি। জন্মদিন উদযাপন এবং পুজোর পরের বেড়াতে যাওয়া। তা ছাড়া, মুম্বইয়ের একটা আলাদা ‘ভাইবস’ আছে। ওটাও অনেকদিন ধরেই টানছিল।
প্রশ্ন: ঘুম ভেঙে আজ প্রথমেই কী মনে হল?
বিশ্বনাথ: গ্রামের ছেলের শহরে পা রাখার ছবিটা দেখতে পেলাম আবার। সেখান থেকে আজকের বিশ্বনাথ বসু। যাকে বাংলা ভালবাসে। যার জন্মদিন সেলিব্রেশন সোশ্যাল পেজে পোস্ট হলে লাইক বাড়ে হু হু করে।
প্রশ্ন: উদযাপনের তালিকায় কী কী আছে?
বিশ্বনাথ: অবশ্যই খাওয়া। দুপুরে ভাত তার সঙ্গে ভাল-মন্দ পদ। রাতে ছেলে আর ছেলেদের মায়ের আবদারে চাইনিজ হবে। স্ত্রী টিপ্পনি কাটে সারাক্ষণ, “কী সব সময় ভাত ভাত করো!” আর অল্পস্বল্প ঘুরব।
প্রশ্ন: খেতে ভালবাসেন। সুস্বাস্থ্য আপনার। নামটাও তারকাসুলভ নয়। তারপরেও অভিনয়ে। ঝোঁক না ঝুঁকি?
বিশ্বনাথ: স্বপ্ন বলতে পারেন। কলেজ শেষ করেই টলিউড পাড়ায় ঘাঁটি গেড়েছি। আপনি যে তিনটে দিক দেখালেন, আমিও জানতাম। ওগুলো নিয়েই আদাজল খেয়ে লেগে পড়েছিলাম। অনেকেই বলেছেন, নামটা বদলাও। কারোর কটাক্ষে কখনও খাওয়া ফেলে টোনড ফিগার বানাতে যাইনি। আমি যেমন তেমন থেকেই বীজ মন্ত্র আউড়েছি, অভিনয়ে নিংড়ে দিতে হবে। বরাবরই আমার আইডল তাই তরুণ কুমার, পরেশ রাওয়াল।
প্রশ্ন: শুরুতে শহর কলকাতা, টলিউড আপন করেছিল? না আজও ‘বহিরাগত’ই?
বিশ্বনাথ: অভিনয় থেকে অ্যাঙ্করিং– যা করেছি সব সাদরে গ্রহণ করেছেন সবাই। আমার ইন্ডাস্ট্রিও। কখনও কেউ গ্রামবাংলার ছেলে বলে দূরে রাখেননি। সেই জোরেই তো গান, নাচ, অভিনয়, বড় বড় অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার ডাক পাই, পাচ্ছিও। স্রোতে ভাসতে ভাসতে শ্যাওলা, কচুরিপানা পায়ে ঠেকে। সে সব আবার বাধা নাকি! এগুলো সরিয়েই এগতে হয়।
প্রশ্ন: বিশ্বনাথ বসু দাপুটে অভিনেতা নিঃসন্দেহে। তথাকথিত ‘হিরো’ নন। ৪২-এর আফসোস?
বিশ্বনাথ: আমাকে কেন্দ্র করে ছবি হয়েছে। ‘বিলের ডায়েরি’তে ‘মহারাজ’-এর চরিত্র করেছি। ‘মুখার্জিদা-র বউ’-তে ‘মুখার্জিদা’ হয়েছি। ‘অদ্ভুত’, ‘হঠাৎ একদিন’ দুটো ছবিতেই লিড কাস্ট। হ্যাঁ, গাছের ডাল ধরে নাচাগানা, প্রেম, মারপিট করা হিরো হইনি। আফসোসও নেই। আমি জানি, খাওয়া ছেড়ে বাঁচতে পারব না। তাই ভাল অভিনেতা হতে চেয়েছিলাম। হয়েছি। সবার জন্য কি সব কিছু থাকে?
প্রশ্ন: তা হলে ‘বিপ্লব’ করবেন কী নিয়ে?
বিশ্বনাথ: ৪২-এও নতুন কিছু করা যায়, সেইটা দেখাতে। যেমন, ‘মাসিমা মালপোয়া খামু’ ফুড শো করলাম। শুধুই এক বৃত্তে ঘুরতে কাঁহাতক ভাল লাগে! এ রকম আরও নতুন কিছু করতে চাই।
প্রশ্ন: তার সন্ধানেই মুম্বাইতে?
বিশ্বনাথ: এবারেরটা নিছকই বেড়ানো। আগামী দিনের লক্ষ্য অবশ্যই মুম্বই। সর্বভারতীয় হতে কার না ইচ্ছে করে? মাঝেমধ্যেই ডাক পাই। অডিশন দিয়ে যাই। সুযোগ পেলে অবশ্যই লাক ট্রাই করব।
প্রশ্ন: যেসব বিষয় নিয়ে এখন সময় কাটবে?
বিশ্বনাথ: কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় বিখ্যাত নাটক ‘জয় মা কালী’ বোর্ডিং আসছে স্টার জলসায়। প্রযোজনায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের আইডিয়াজ ক্রিয়েশন। আমাকে দেখা যাবে ‘দিলীপ’ চরিত্রে। সঙ্গে থাকছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী, শ্যামাশিস পাহাড়ি, আরও অনেকে। রিহার্সাল, শ্যুটিং নভেম্বরের ৩, ৪, ৫ তারিখে।
প্রশ্ন: টেলিপাড়ায় করোনাভাইরাস মহামারী ভালই ছড়িয়েছে। কাজে যেতে ভয় করছে না?
বিশ্বনাথ: জানি, শুনেছি। কিন্তু বসে থাকলে কি পেট চলবে? আজ না হয় কাল, কাজে নামতেই হবে। বাড়তি সতর্কতা নেব ব্যক্তিগত ভাবে। স্টুডিয়োতেও নিশ্চয়ই সে সবের ব্যবস্থা থাকবে।
প্রশ্ন: মহামারী আপনার পুজোর আনন্দ কমাতে পারেনি। কাঁধে করে প্রতিমা বয়ে এনেছেন, বিসর্জন দিয়েছেন…
বিশ্বনাথ: সমস্ত সতর্কতা মেনে। দালানে এই প্রথম সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো পুজোয় লোকের ভিড় হয়নি। আমি সেলফি তুলিনি কারওর সঙ্গে। পুজোর আগেও টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম। লন্ডনে ‘বাজি’ শ্যুট সেরে, সমস্ত নিয়ম মেনে পুজোয় যোগ দিতে পারব তো! দুগ্গা মা দেখলাম সব গুছিয়ে সামলে দিলেন নিজেই। ভাত, ডাল, সুক্তো, মাছ জমিয়ে খেয়েছি। গত কাল বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণে ছিল পরোটা, হাঁসের মাংস।
প্রশ্ন: সব বললেন। আজকের দিনে ক’জন ‘প্রাক্তন’ উইশ করলেন, বললেন না?
বিশ্বনাথ: (লাজুক গলায়) বড় ছেলে ১০-১২ বছরের। এখন আবার এসব কেন? (অস্বস্তি সরিয়ে) যোগাযোগ আছে কয়েক জনের সঙ্গে। ন’মাসে ছ’মাসে হোয়াটসঅ্যাপ করে। কোনও কালেই উদ্দাম ছিলাম না। এখনও সবই আছে সংযত ভাবে।(তারপরেই সতর্ক) এই রে, আজ আমার কপালে দুঃখ নাচছে!
প্রশ্ন: ৪২ বছর রিওয়াইন্ড করে ফিরিয়ে আনলে কোনটা মুছতে চাইবেন?
বিশ্বনাথ: বাবাকে ফিরিয়ে আনব। নীরবে আগলাতে আগলাতে দুম করে চলে গেলেন। আমার অনেক কিছুই দেখে গেলেন না। থাকতে বুঝিনি। হারিয়ে অনুভব করছি। বড়, পাকা বাড়ি হয়েছে আমার, মাথার উপরে ছাদটাই ভ্যানিশ!