ভারতীয় নাগরিক সেজে তাস খেলার নামে অভিনব প্রতারণা। রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে চক্রের বিলাসবহুল অফিস। জুয়াড়ি ও মদ্যপ ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তাদের খপ্পরে পড়ে সাবেক এক সচিব একাই হারিয়েছেন ২ কোটি ৫ লাখ টাকা।
কখনো বাড়ি ভাড়া, কখনো ব্যবসায় বিনিয়োগের লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা হয় চক্রের অফিসে। জুয়া খেলেন, মদের বারে নিয়মিত যাতায়াত কিংবা অনেক টাকার মালিক। এমন ব্যক্তিরা হন টার্গেট। তারপর তাস খেলার আমন্ত্রণ। যেটাকে বলা হয় থ্রি কার্ড। শুরুতে জিতিয়ে দেয়া হয়। পরে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে খেলতে গেলেই কৌশলে হারিয়ে দিয়ে, সব টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
অভিনব এ প্রতারণার নাম দেয়া হয় আরসিডি বা রয়েল চিট ডিভিশন। মূলহোতা মাসুদ ভারতীয় নাগরিক সেজে হিন্দি ও ইংলিশে কথা বলেন।
মুসলিম হয়েও গীতা-বাইবেল পড়েছি
মূলহোতা মাসুদসহ অন্যরা বলেন, অফিসে নিয়ে আসার পরে আমাকে যখন পরিচয় করে তখন আমি বলি নামাস্তে, কিয়া কে সামান হে আপকো পাস। কার্ড চুরি করে উনাকে ঠাকি দেই আর উনি ঠকে যায়।
ফাঁদে পড়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক এক সদস্য। ধানমন্ডির একটি বাড়ি ভাড়া দেয়ার জন্য টু-লেট দিয়েছিলেন তিনি। ভাড়া নেয়ার কথা বলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন চক্রের এক সদস্য। তারপর নানা কৌশলে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর নিকুঞ্জে। মাত্র সপ্তাহখানেকের সম্পর্কে, লোভে পড়ে স্ত্রীর জমি বিক্রি করে, ২ কোটি ৫ লাখ টাকা তুলে দেন প্রতারকদের হাতে।
সাবেক সচিব ফোনে বলেন, যখন আমি গেলাম তখন তারা খেলা দেখাতে আগ্রহ দেখালো। ১০ কোটি টাকা আমি জিতে গেছি। সে টাকা নিতে হলে আমার কাছে যে ১০ কোটি টাকা আছে সেটা শো করতে হবে। তখন আমি জরুরি ভিত্তিতে জমি বিক্রি করে তাদের টাকা দেই। তারা টাকাগুলো নিয়ে গাড়িতে করে চলে যায়।
রাজধানীর অভিজাত এলাকায় অফিস ভাড়া নেয় চক্রটি। নান্দনিক পরিবেশ, দামি আসবাবপত্র, মূল্যবান সামগ্রী দেখে অল্প সময়ে অনেকেই তাদের বিশ্বাস করেন। ধরা পড়ার আশঙ্কায় এক/দুই মাস পর পর করেন ঠিকানা পরিবর্তন।
চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদেরও আটকের তৎপরতা চালাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগের উপ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, যারা নানাভাবে অনেক টাকার মালিক হয়ছেন এ রকম বয়োজ্যেষ্ঠ মুরব্বিদের তারা টার্গেট করেন। ক্যাসিনো না হলেও মদ পান বা বারে যাওয়ার সম্পর্ক আছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে পেয়েছি।
প্রতারকরা ধরা পড়ছেন বটে। তবে একই ব্যক্তির কয়েকটি মোবাইল সিম ব্যবহার ও বাড়ি ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে রয়ে গেছে প্রশ্ন।