মারা গেছেন “ভাদাইম্যা খ্যাত” কৌতুক অভিনেতা আহসান
এম এইচ ইলিয়াছঃ
দীর্ঘ ১০ বছর ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেছেন অভিনেতা আহসান আলী। দেশের দর্শকের কাছে ‘ভাদাইম্যা’ নামে পরিচিতি। ক্যানসার নিয়েও করেছেন অভিনয়। এসময় এই অভিনেতার মনোবল অটুট ছিল। চিকিৎসা শেষে শুটিং করতেন।
জীবনের শেষ সময়েও দর্শকদের হাসিয়ে গেছেন। অনেক স্বপ্ন ছিল আবার সুস্থ হয়ে দর্শকদের হাসাবেন। শুটিংয়ের পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু না আজ রোববার (২২মে) গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেছেন।
তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন।
আফজাল হোসেন বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর আহসান আলী ভাই ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। এরপর থেকে প্রতি দুই মাসে একবার রক্ত পরিবর্তন করতে হতো। চিকিৎসা নিয়ে আবার গ্রামে ফিরে অভিনয় করতেন। তাঁর একটি দল ছিল। তিনি অসুস্থ হলেও মনোবল শক্ত ছিল। তাঁকে দেখে বোঝা যেত না তিনি অসুস্থ।
তিনি আরো বলেন, হঠাৎ দুই সপ্তাহ হবে তাঁর অসুস্থতা বেশি হয়। সে সময়েই তিনি ঢাকায় যান। আজ সকালে শুনলাম তাঁর অবস্থা সিরিয়াস। আজই হাসানোর মানুষটি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তিনি খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। গ্রামে মানুষের কাছে ‘জোকার ভাই’ নামে পরিচিত ছিলেন। সবার পছন্দের মানুষ ছিলেন তিনি।
এক সময় গ্রামে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন আহসান আলী। পরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কমেডি অভিনয় দেখে তাঁর মধ্যে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। নব্বই দশকের শেষের দিকে গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দল নিয়ে কালি মেখে অভিনয় করতেন। এভাবে তাঁর মধ্যে অভিনয়টা জেঁকে বসে। গ্রামেই সে সময়েই মুখে মুখে ছিল তাঁর নাম। সব অনুষ্ঠানে তাঁর ডাক পড়ত। পরে অডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেন। গ্রাম ছাড়িয়ে জেলা, পরে দেশের একজন কৌতুক অভিনেতা হয়ে ওঠেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সারা দেশের দর্শকের কাছে টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষায় জনপ্রিয় হতে থাকেন।
দোকানে ও গ্রামে তাঁর অ্যালবামের ভালো চাহিদা ছিল। পরে অডিও দাপট কমে যেতে থাকলে ভিডিও বানিয়েও সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেন ‘ভাদাইম্যা’খ্যাত এই অভিনেতা।
প্রায় দুই যুগের ক্যারিয়ারে ‘ভাদাইম্যা এখন চাপড়া নেতা’, ‘শীতের রিকশাওয়ালা’, ‘ভাদাইম্যার বিয়া’, ‘চাপাবাজ’, ‘কিপটা সোনামিয়া’, ‘শ্বশুরের টাকায় ফুটানি’—এমন অসংখ্য ভিডিওতে দর্শকদের হাসিয়েছেন আহসান আলী।
টাঙ্গাইলের ভাষায় তাঁর ভিডিওতে ফুটে তুলেছেন দেশের গ্রাম্য অনেক সংস্কৃতি, ঐতিহ্য। অভিনয় দর্শকদের এতটাই ছুঁয়েছিল যে নামকে ছাপিয়ে তিনি দর্শকদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন ‘ভাদাইম্যা’খ্যাত অভিনেতা। দর্শককে আর হাসাবেন না এই অভিনেতা। মাত্র ৫০ বছর বয়সেই তিনি চিরবিদায় নিলেন। মৃত্যুর সময় স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন। দাইন্যা ইউনিয়নের দাইন্যা রামপাল গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন আহসান আলী।