মোবাইল ফোন কেনার সময় নানা সুবিধার সঙ্গে ব্যাটারির সক্ষমতাও দেখে নেয়া জরুরি। বাজারের প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সক্ষমতার ব্যাটারির অফার দিয়ে থাকে। যার উপর মোবাইল ফোনের মূল্যেরও তারতম্য হয়। ব্যাটারির যতই ভালো হোক না কেন প্রতিদিন ব্যবহারে এক সময় এর সক্ষমতা কমে আসে। কিন্তু যত্ন করে ব্যবহার করলে বা সঠিক ব্যবহারটি জানলে সক্ষমতা দীর্ঘ সময় ধরে রাখা সম্ভব।
ব্যাটারির সক্ষমতা দীর্ঘ সময় ধরে রাখার কিছু কৌশল জানবো এই আয়োজনে_
পাওয়ার সেভিং
মোবাইল ফোনে পাওয়ার সেভার অপশনটি সবসময় চালু রাখুন। তবে এরজন্য নতুন করে কোনও ব্যাটারি সেভার অ্যাপ ব্যবহার না করাই ভালো। বর্তমানে প্রতিটি মোবাইল ফোনেই পাওয়ার সেভার সেবাটি থাকে। এই অপশনটি ফোনের প্রয়োজনীয় ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে ব্যাটারির শক্তি বেশি সময় ধরে রাখে।
মোবাইল ইন্টারনেট ডাটা
মোবাইল ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহারে ব্যাটারির শক্তি বেশি ক্ষয় হয়। সম্ভব হলে সর্বদা ওয়াই-ফাই ডাটা ব্যবহার করুন। যেহেতু ওয়াই-ফাই রাউটার কাছাকাছি থাকে তাই ব্যাটারির শক্তি কম খরচ হয়। যদি ওয়াই-ফাই কানেকশন না থাকে সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময়ই ডাটা অপশনটি চালু রাখুন। অন্য সময় বন্ধ রাখতে পারেন। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মোবাইল ডাটা এবং ওয়াই-ফাই অপশন দুটিই বন্ধ রাখুন।
ডার্ক মুড
আধুনিক মোবাইল ফোনে স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ডার্ক মুডের অংশগুলো বন্ধ থাকে। এতে ব্যাটারির ক্ষয় হয় দ্রুত। ফোনের ডার্ক মুড অপশনটি ব্যবহার করলে এ পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাটারির শক্তিও দীর্ঘ সময় থাকে। কিছু অ্যাপেরও ডার্ক মুড থাকে সেগুলোও চালু রাখুন।
অ্যাক্টিভ ট্র্যাকিং
কিছু অ্যাপ প্রয়োজনে অ্যাক্টিভ ট্র্যাকিং ও পজিশনিং চালু রাখে। যা ব্যাটারির শক্তি দ্রুত ক্ষয় করে। এ সব অ্যাপ ব্যবহারের পর অ্যক্টিভ ট্র্যাকিং ও পজিশনিং অপশন বন্ধ করে দিন।
স্ক্রিনের ব্রাইটনেস
আধুনিক মোবাইল ফোনগুলো বাইরের আলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য অনুযায়ী স্ক্রিনের উজ্জলতাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। আবার অনেক ব্যবহারকারী স্ক্রিনের আলো অতিরিক্ত বাড়িয়ে রাখে। যা চোখের জন্যও ক্ষতিকর। ব্যাটারির উপরও প্রভাব ফেলে। ব্যাটারির শক্তি দীর্ঘসময় ধরে রাখতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্রিনের উজ্জলতা বৃদ্ধির অপশনটি বন্ধ রাখুন। আর যতখানি সম্ভব উজ্জলতাও কমিয়ে রাখুন।
ভাইব্রেশন বা কম্পন
ক্ষনে ক্ষনে নানা বিজ্ঞাপন বিজ্ঞপ্তি ফোনটিকে বাজাচ্ছে, আবার অনেকে রিং টোনের সঙ্গে ভাইব্রেশন চালু রাখেন। ব্যাটারির শক্তি বাঁচাতে নোটিফিকেশন মিউট রাখুন এবং অপ্রয়োজনে ভাইব্রেশন বন্ধ রাখুন।
ব্যাকগ্রাউন্ডে অ্যাপ-ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ
মোবাইল ফোনে কত অ্যাপের ব্যবহার হচ্ছে। একবার ব্যবহারের পর অ্যাপটি ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থেকে যায়। এতে ব্যাটারির শক্তি ক্ষয় হয়। এক্ষেত্রে অ্যাপ ম্যানেজার ব্যবহার করে প্রয়োজন শেষে অ্যাপগুলো বন্ধ রাখুন।
ওয়াল পেপার
আমরা অনেকে নানা ধরনের ওয়াল পেপার ব্যবহার করি। অনেকে আবার ওয়াল পেপারে থ্রি ডি কিংবা ভিডিও ব্যবহার করেন। যা ব্যাটারির শক্তি দ্রুত শেষ করে দেয়। তাই ব্যাটারি ক্ষমতা দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে ওয়াল পেপার যত হালকা হবে ততই ভালো।
অনুষঙ্গ (উইজেট)
দৈনন্দিন কাজের সুবিধার্থে নানা রকম উইজেট ব্যবহার করি। এগুলো কিন্তু ব্যাটারি দ্রুত শেষ করে দেয়।
ব্যাটারির চার্জ
ব্যাটারির সক্ষমতা ধরে রাখতে চার্জ দেওয়ার সঠিক নিয়মটিও জানতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফোন কেনার পর অবশ্যই ব্যাটারি সম্পুর্ণ ১০০ ভাগ চার্জ দিতে হবে। তবে পরবর্তীতে ব্যাটারির শক্তি ২০ ভাগে নেমে এলেই চার্জ দিতে হবে এবং অন্তত ৮০-৯০ ভাগ চার্জ করে নিতে হবে। ২০ ভাগের কম বা ৮০-৯০ ভাগের বেশি চার্জ দিলে ব্যাটারির সক্ষমতা কমে যায়। সপ্তাহে একবার ব্যাটারি সম্পূর্ণ শেষ করুন এবং ১০০ ভাগ চার্জ করে নিন। এটি ব্যাটারির আয়ুষ্কাল ধরে রাখতে সহায়ক। তবে কখনই ঘুমাতে যাবার আগে ফোন চার্জে দিবে না।
অরিজিনাল চার্জার
মোবাইল ফোনটির সঙ্গে দেওয়া চার্জারটি ব্যবহার করুন। সস্তা চার্জার, কম্পিউটার বা পাওয়ার ব্যাঙ্ক ব্যবহার করবেন না। কিছু ফোন ফাস্ট চার্জার ব্যবহারে অনুমতি দিলেও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চার্জ দেওয়া ভালো। কাজেই মোবাইল ফোনের সঙ্গে দেওয়া অরিজিনাল চার্জার ছাড়া অন্য কোনভাবে চার্জ দিলে ফোনের ব্যাটারি সক্ষমতা হারাবে।
ফোনের ব্যাক কাভার
অনেক প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান ফোনের সঙ্গে ব্যাক কাভার দিয়ে থাকে। প্রিয় ফোনটির যত্ন এবং সৌখিনতার জন্যও নিজেও ব্যাক কাভার কিনে নিচ্ছেন। যা সবসময় ব্যবহার করা উচিত নয়। মোবাইল ফোনের পেছন দিকটায় যন্ত্রপাতি এবং ব্যাটারি থাকে। ফোনটি ব্যবহার ও চার্জের সময় গরম হয়ে যেতে পারে। যা আপনার ফোন এবং ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর। তাই মোবাইল ফোন ও ব্যাটারির সুরক্ষার জন্য ব্যাক কাভারটি মাঝে মধ্যে খুলে রাখুন। তবে এক্ষেত্রে কাভার ব্যবহার না করাই পরামর্শ থাকছে।