তথ্য যোগাযোগে ইন্টারনেট ব্যবহার বর্তমানে স্থান করে নিয়েছে সর্বত্র। অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সড়ক-আকাশ-নৌবন্দর সবক্ষেত্রেই হচ্ছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। বাসা-বাড়িতেও এর ব্যবহার কম নয়। শিশু, বৃদ্ধসহ সবার কাছে পুরো বিশ্বকে হাতের মুঠোয় আনতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ইন্টারনেটের ব্যবহার।
বাসা কিংবা অফিসে যেকোনও স্থানেই হাতের মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার সহজ করে দিচ্ছে রাউটার। ওয়াইফাই রাউটার জনপ্রিয় এক ডিভাইস এখন। সংযোগ নেওয়া ইন্টেরনেট সবার সঙ্গে ভাগ করার সুবিদার্থে এই যন্ত্রটি ব্যবহার হয়। তবে সুবিধার সঙ্গে আছে বিড়ম্বনাও।
আপনার মুল্যবান ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে এই ডিভাইসের মাধ্যমে। যা নিশ্চয়ই আপনার জন্যও বিব্রতকর। সঠিকভাবে যন্ত্রটির পরিচালনা পদ্ধতি নির্ধারণ না হলে ঝুঁকি রয়ে যায়। চলুন দেখে নেওয়া যাক, ওয়াইফাই রাউটার ব্যবহার করেও কিভাবে তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।
সঙ্কেত শব্দ (পাস-ওয়ার্ড)
রাউটার এ দুই ধরনের পাস-ওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়ঃ
১. রাউটার পাস-ওয়ার্ড: নতুন রাউটারে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একটি পাস-ওয়ার্ড দেওয়া থাকে। যার মাধ্যমে যন্ত্রে প্রবেশ করা যায়। যন্ত্র স্থাপনের শুরুতেই এই পাস-ওয়ার্ডটি বদলে নিন।
২. ওয়াই-ফাই পাস-ওয়ার্ড: এই পাস-ওয়ার্ড সে সব যন্ত্রপাতির জন্য যেগুলো আপনার রাউটার থেকে ইন্টারনেট সংযোগ নিবে। উভয়ক্ষেত্রে অবশ্যই লম্বা জটিল পাস-ওয়ার্ড নির্বাচন করুন।
যন্ত্রের পরিচালনা (ফার্ম ওয়্যার)
রাউটারের একটি অপারেটিং সফটওয়্যার থাকে যাকে ফার্ম ওয়্যার বলে। রাউটারটি আরো নিরাপদ করতে চাইলে এই ফার্ম ওয়্যারটি নিয়মিত আপডেট করুন।
যন্ত্রের নাম (এসএসআইডি)
আপনার রাউটার খুঁজে নেবার জন্য একটি নাম নির্বাচন করুন। এক্ষেত্রে আপনার পরিচিতি বা অবস্থান প্রকাশ পায়, এমন নাম দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
উপাত্ত অবিন্যাস্ত পদ্ধতি (ডাটা এনক্রিপশন)
ইন্টারনেট ও ব্যবহারকারী থেকে পাওয়া তথ্য রাউটার এনক্রিপ্ট করে আদান প্রদান করে। ডাটা এনক্রিপশনের জন্য একটি ভালো পদ্ধতি নির্বাচন করুন। এক্ষেত্রে Wi-Fi Protected Access 2 (WPA2) এর সাথে Advanced Encryption Standard (AES) নির্বাচন করে দিন। অবশ্যই Wired Equivalent Privacy (WEP) বন্ধ রাখুন।
অগ্নি দেয়াল (ফায়ার ওয়াল)
ফায়ার ওয়াল অপশনটি রাউটারের মাধ্যমে আগত এবং বহির্গামী যেকোনও উপাত্তকে পর্যবেক্ষণ করে। নির্দিষ্ট উপাত্তকে অনুমতি দেয় বা অবরুদ্ধ করে। আপনার নেটওয়ার্ক এবং যন্ত্রপাতির সুরক্ষার জন্য রাউটারের ফায়ার ওয়ালটি চালু রাখুন।
যন্ত্র নিয়ন্ত্রণের অনুমতি
রাউটারটি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য একটি কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন নির্দিষ্ট করে দিন।
ম্যাক ও আইপি অ্যাড্রেস নির্দিষ্টকরণ
রাউটারে সংযুক্ত প্রতিটি যন্ত্রকে আলাদা আলাদাভাবে সনাক্তের জন্য ক্রমিক সংখ্যা দেওয়া হয়। যাকে মিডিয়া এক্সেস কন্ট্রোল বা ম্যাক বলে। তথ্য ধারক ও আদান প্রদানের ঠিকানাকে বলে ইন্টারনেট প্রোটকল অ্যাড্রেস। আপনার ব্যবহৃত ইন্টারনেট নির্ভর যন্ত্রপাতির সংখ্যা অনুযায়ী এই ম্যাক ও আইপি অ্যাড্রেস নির্দিষ্ট করে দিন। ফলে আপনার সকল যন্ত্রের বাইরে অন্য কোন যন্ত্র রাউটার থেকে ম্যাক বা আইপি অ্যাড্রেস পাবে না।
উপরের সব পদ্ধতি সংরক্ষণ
রাউটারটির সুবিধা অনুযায়ী বিন্যাস করলেন, কিন্তু অসাবধানতায় সবকিছু আগের অবস্থায় চলে গেল। তাই আপনার বিন্যাসটি সংরক্ষণ করুন। যেন আপনার পছন্দের বিন্যাসটি পুনরায় ব্যবহার করা যায়।
তথ্য চোরেরা (হ্যাকার) কিন্তু অন্যসব চোর ডাকাতের মতোই। এক্ষেত্রে তারা ব্যক্তিগত তথ্য চুরির আশায় নানারকম কৌশল যেমন ফিশিং, গুপ্তচর সফটওয়্যার ইত্যাদি দিয়ে আপনার ইন্টারনেট রাওউটারকে আক্রমণ করে। উপরে আলোচনা করা রাউটারের নিরাপত্তা কৌশল অনুসরণ করে আপনার তথ্য নিরাপদ রাখতে এখনই সচেষ্ট হবেন।