আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপি নেতাদের তালিকা ধরে বিভিন্ন মামলার পলাতক ও ওয়ারেন্টভুক্তদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা কে কোথায় অবস্থান করেন তার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের তালিকা ধরে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) একদিনেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ২২৯ নেতাকর্মীকে।
বসবে তল্লাশি চৌকি : এদিকে, বিএনপি নেতাদের সমাবেশে আসা ঠেকাতে ঢাকার প্রবেশমুখে আগের মতোই তল্লাশি চৌকি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ডিএমপির সব পর্যায়ের পুলিশকে ছুটির নেওয়ার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের পর সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীরা যাতে অবস্থান (বসে পড়া) করতে না পারে সেজন্য পুলিশ বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে। সহিংসতা করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে ডিএমপির ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তিন স্তরের প্রস্তুতি : ডিএমপির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সমাবেশ ঘিরে তিন স্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সমাবেশের আগে বিএনপি ও জামায়াতের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিশেষ করে এসব নেতার রাতের অবস্থান তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে চিহ্নিত করছে পুলিশ। বিএনপি-জামায়াতের মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় নেতাদের তালিকা ধরে গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সমাবেশের আগের দিন থেকে ঢাকায় প্রবেশের সময় তল্লাশি জোরদার করা হবে। এখন থেকেই ঢাকার প্রতিটি হোটেল ও মেসে নিয়মিত তল্লাশি চালাবে পুলিশ। সর্বশেষ সমাবেশের দিন সহিংসতা প্রতিরোধসহ ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের শাপলা চত্বরের মতো যাতে নেতাকর্মীরা বসে যেতে না পারে সেদিক বিবেচনা করে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বসে পড়ার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।
রাজনৈতিক মামলার আসামি গ্রেপ্তার : ঢাকার একাধিক থানার ওসিরা জানিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মামলায় যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তালিকা ধরে ধরে অভিযান শুরু হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১-২ দিনের মধ্যে অভিযানের মাত্রা ও পরিধি আরও বাড়বে। এছাড়া আবাসিক হোটেল ও মেসে অভিযান চালানো হচ্ছে।
নাশকতার শঙ্কা ‘নেই’ : ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর কোনও নাশকতার আশঙ্কা নেই। আমরা আশা করি কোনও কিছু ঘটবে না। তবে ডিএমপি কমিশনারের অনুমোদিত সমাবেশে আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেবো। আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, ঢাকায় আমাদের চেকপোস্ট চলবে, অভিযান চলবে, পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তারে আমাদের রুটিন কাজও চলমান থাকবে।
চেকপোস্ট স্থাপনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ঢাকায় প্রতিদিন অনেক ‘বহিরাগত’ এসে নানা অপরাধ করে। রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা বা কেপিআইভুক্ত স্থাপনা রয়েছে। সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং কেউ যাতে নাশকতা না করতে পারে সেজন্য চেকপোস্ট বসানো হয়। এটা পুলিশের রুটিন কাজ।
তালিকা সংগ্রহ করে নজরদারি : পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার বিএনপি-জামায়াতের ওয়ার্ড ও থানাভিত্তিক কমিটির তালিকা সংগ্রহ করে নজরদারি করা হচ্ছে। স্থানীয় সোর্স ও প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের পরিকল্পনা জানার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একইসঙ্গে বিভিন্ন সময়ে দায়ের হওয়া রাজনৈতিক মামলাগুলোর পলাতক আসামিদের তালিকা করে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হবে। বিশেষ করে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া রাজনৈতিক মামলাগুলোর পলাতক আসামিদের ধরতেও সাঁড়াশি অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার পাশাপাশি আশপাশের জেলা পুলিশও সমাবেশকে ঘিরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে তারা তৎপরতা চালাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২৮ অক্টোবর ঘিরে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এরমধ্যে গত মঙ্গলবার এক রাতেই বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ বিএনপি-জামায়াতের ২২৯ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা ঢাকার ৪২টি থানার পুরোনো মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ১১ জনকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এর আগে গত ১০ অক্টোবর বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তালিকা ধরে ধরে মামলার আসামি ও ওয়ারেন্টভুক্ত বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের প্রতিদিনই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
পর্যবেক্ষণে জামায়াতের গতিবিধি : ডিএমপির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে জামায়াতে ইসলামী সহিংস হয়ে উঠতে পারে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। ২৮ অক্টোবরকে (২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার হামলা) জামায়াত বিশেষ দিন হিসেবে পালন করে। এ জন্য তারাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। জামায়াত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে মাঠ পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সমাবেশ শেষে তাদের দাবি আদায়ের জন্য বিএনপির নেতারা বসে পড়তে পারেন বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে বসে পড়লে তারা শক্তি প্রয়োগ করে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। সেক্ষেত্রে হতাহতের পরিমাণ কমিয়ে কীভাবে তাদের তুলে দেওয়া হবে সেই ব্যাপারে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও জলকামান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।