বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন মাইলফলক অতিক্রম করেছে। গত বুধবার রিজার্ভের পরিমাণ ৪১ বিলিয়ন বা চার হাজার ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে ৯ মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। গত মার্চে বাংলাদেশে করোনার প্রভাব শুরুর পর থেকে এই নিয়ে রিজার্ভে যুক্ত হলো ৮৬৫ কোটি ডলার। মূলত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের তুলনায় আয় বৃদ্ধির ফলে করোনা সঙ্কটের মধ্যেও রিজার্ভে একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি কমলেও রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ছে। আবার করোনা সঙ্কটের মধ্যে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা থেকে প্রচুর ঋণ পাচ্ছে সরকার। আবার করোনার কারণে বেসরকারি খাতে আগে নেওয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়েছে। ফলে রিজার্ভ হু হু করে বাড়ছে।
গত ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪০ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে প্রবাসী আয় কমেছিল। এরপর থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স ব্যাপকভাবে বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসীরা ৬৭১ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২১৯ কোটি ডলার বা ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের অর্থনীতি ‘ছাই থেকে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে এসেছে’
এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় যা ১৭৯ কোটি ডলার বা ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এক হাজার ২৬৯ কোটি ডলারের আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম। অথচ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে রপ্তানি আয় ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়ে ৯৯০ কোটি ডলার হয়েছে। আবার বিদেশ থেকে প্রচুর ঋণও পাচ্ছে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের মতো প্রবাসীদেরও অনেকে চাকরি হারিয়েছেন বা আয় কমেছে। এর মধ্যেও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হুন্ডির চাহিদা একেবারে কমে যাওয়া। আবার সরকারের ২ শতাংশ হারে প্রণোদনার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে ভালো দাম মিলছে। এর বাইরে একটা শ্রেণী জমানো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আবার বিমান চলাচল সীমিত হয়ে যাওয়ায় সঙ্গে ডলার আনার প্রবণতা কমেছে। এসব কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়ের বেশিরভাগই এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে। যদিও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির এ ধারা কতোদিন থাকবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।