নিজস্ব প্রতিবেদকঃঃ আত্রাইয়ের ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি এখন দেশের বিভিন্ন জেলায়। উত্তর জনপদের মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত স্থান সমুহের মধ্যে নওগাঁর আত্রাইও একটি বিখ্যাত স্থান। প্রতিদিন শতশত টন মাছ আত্রাই থেকে রেল, সড়ক ও নৌ পথে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হয়।
শুঁটকি মাছ মুখরোচক খাবারগুলোর মধ্যে একটি। সে অনুযায়ী শুঁটকি উৎপাদনেও আত্রাইয়ের যথেষ্ট প্রসিদ্ধি রয়েছে।
আর তাই এবারের শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে শুঁটকি তৈরিতে এখন চরম ব্যস্ত সময় কাটছে ব্যবসায়ীদের। এলাকা জুড়ে এখন শুধু শুঁটকি তৈরির যেন ধুম পড়েছে। এ উপজেলায় এবার পরপর দু’বার ও দীর্ঘ সময় বন্যায় বিভিন্ন পুকুর পুস্কনি পানিতে ডুবে যাওয়ায় মাছের বিচরণ অনেক বেশি। তাই জলাশয়গুলোতে ধরা পড়ছে দেশীয় প্রজাতির সব রকম মাছ। আর এ মাছগুলো প্রতিদিন সেই কাকডাকা ভোর থেকে বিক্রি হচ্ছে আত্রাইয়ের ঐতিহ্যবাহি মাছ বাজার রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন মাছের আড়তে। এসব মাছ কিনে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা।
গত বছর এলাকায় বন্যা না হওয়ায় দেশীয় প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এ জন্য শুঁটকি ব্যবসায়ীরা ব্যাপক লোকসানের শিকার হয়ে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে এবার তারা কোমর বেঁধে শুঁটকি তৈরিতে ঝেঁপে পড়েছেন।
জানা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের রংপুর, নিলফামারী, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজুপরসহ দেশের প্রায় ১৫/২০ জেলাতে বাজারজাত করা হয় ঐতিহ্যবাহী খ্যাতি সম্পন্ন আত্রাইয়ের শুঁটকি মাছ। আর এ মাছের শুঁটকি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন উপজেলার প্রায় শতাধিক পরিবার। উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রাম শুঁটকি তৈরীতে বিশেষভাবে খ্যাত।
এ গ্রামের শতাধিক শুঁটকি ব্যবসায়ী এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত। শুধু বর্ষা মৌসুমে শুঁটকি তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করে তারা পরিবারের সারা বছরের ভরণপোষণ নিশ্চিত করেন। এবারে পরপর দু’বার বন্যার কারনে নদী ও খাল বিলে কাঁচা মাছের আমদানী অনেক বেশি। অন্যান্যবার বাজারে মাছ কম কিন্তু মূল্য বেশি হওয়ায় শুঁটকির বাজারে ধস নেমে ছিল। ফলে তাদের অনেক লোকসান গুণতে হচ্ছিল।
আত্রাইয়ের উন্মুক্ত জলাশয়ে হাঁস পালনে স্বাবলম্বী জহুরুল
এবারে আর তাদের গুণতে হচ্ছেনা লোকসান। মাছের ব্যাপক আমদানী, মূল্য কম এবং শুঁটকির বাজার মূল্য বেশি থাকায় তাদের চোখে-মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠছে।
উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের বিশিষ্ট শুঁটকি ব্যবসায়ী মঞ্জুর মোল্লা বলেন, শুটকি ব্যবসার সাথে আমি দীর্ঘদিন থেকে সম্পৃক্ত। শুঁটকি তৈরিতে অর্থ খরচের সাথে সাথে যথেষ্ট শ্রম ব্যয় হয়। সর্বপোরি রৌদ্র বৃষ্টি ও মাছের দুর্গন্ধ সবকিছুকে উপেক্ষা করে পরিবার পরিজন নিয়ে এ পেশা চালিয়ে আসছি।
উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী শ্রী.রামপদ শীল বলেন, পুঁটি, খোলসানী, চাঁন্দা, রাইখর, সাটিসহ বিভিন্ন জাতের দেশি মাছের শুঁটকি আমরা তৈরি করি। এর মধ্যে বিশেষ করে পুঁটি ও সাটি মাছের শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমাদেরকে বিভিন্ন সময় সরকারিভাবে শুঁটকি তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী শুঁটতি তৈরি করি বিধায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্রাইয়ের শুঁটকির চাহিদা আছে। এবারে ব্যবসাটা লাভজনক হবে বলে আমরা আশাবাদি।
শুঁটকি ব্যবসায়ী মাজেদুল, পচু, গেদা ও ছাত্তার বলেন, সর্বপরি আমরা প্রতিটি বর্ষা মৌসুমে রৌদ্র বৃষ্টি ও মাছের দুর্গন্ধ সবকিছুকে উপেক্ষা করে পরিবার পরিজন নিয়ে এ পেশা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্রাইয়ের শুঁটকির চাহিদা ব্যাপক। এবারের ব্যবসাটা লাভজনক হবে বলে আমরা আশাবাদি।
এলাকার সচেতন মহল মনে করেন ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হলে প্রতি বছর প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের শুঁটকি শিল্পে বিপুলসংখ্যক এ উপজেলার বেকার যুবকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে।