গোনাহ এমন একটি বিষয়, যা একের পর এক করতে থাকলে মুমিন নারী-পুরুষের ঈমানি নূর নিভে যেতে থাকে। যা এক সময় তাকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করে।
আর শয়তান সেটাই চায়। সে চায় আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাকে দ্বীনের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে তার পথে পরিচালিত করতে। এজন্য সে সদা এ কাজে নিয়োজিত থাকে। এর সঙ্গে আছে তার দোসর ও অসংখ্য মানবরূপী শয়তান, যারা আল্লাহর দেয়া শরীয়ত ও তাঁর আদেশ-নিষেধকে সর্বাবস্থায় অমান্য করতে থাকে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে? ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর পাকড়াও থেকে কেউই নিরাপদ হতে পারে না’ (সূরা: আ‘রাফ, আয়াত: ৯৯)
রাসূলুল্লাহ (সা.) পাপের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন, إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإِنَّهُنَّ يَجْتَمِعْنَ عَلَى الرَّجُلِ حَتَّى يُهْلِكْنَهُ ‘তোমরা তুচ্ছ-নগণ্য পাপ থেকেও বেঁচে থাক। কেননা তা যার মধ্যে একত্রিত হতে থাকবে তা তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে।’ (মুসনাদে আহমাদ; সহিহুল জামে‘ হা/২৬৮৭)
ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১ হিঃ) পাপের অশুভ পরিণতি ও তার বহুবিধ ক্ষতিকর দিক বর্ণনা করেছেন, যা প্রত্যেক মুসলমানের জানা দরকার। যা পাপকর্ম থেকে বেঁচে থাকতে সহায়ক হবে।
পাপ মোচনকারী আমলসমূহের আজ থাকছে শেষ পর্ব-
মুসাফাহা করা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلاَّ غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا ‘যে দু’জন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করে তাদের আলাদা হবার পূর্বেই তাদের (সগীরা) গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ (আবু দাউদ হা/৫২১২; তিরমিযী, হা/২৭২৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৭০৩; মিশকাত হা/৪৬৭৯, সনদ সহিহ)
আরো পড়ুন: পাপ মোচনকারী আমলসমূহ ২য় পর্ব
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِى بِطَرِيْقٍ، وَجَدَ غُصْنَ شَوْكٍ فَأَخَذَهُ، فَشَكَرَ اللهُ لَهُ، فَغَفَرَ لَهُ ‘এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় কাঁটাদার গাছের একটি ডাল রাস্তায় পেল এবং সেটাকে রাস্তা হতে অপসারণ করল, আল্লাহ তার এ কাজকে কবুল করলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন।’ (বুখারি হা/২৪৭২)
আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির প্রতি সদয় হওয়া
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা লাগল। সে কূপে নেমে পানি পান করল। এরপর সে বের হয়ে দেখতে পেল যে, একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল কুকুরটারও আমার মতো পিপাসা লেগেছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তায়ালা তার আমল কবুল করলেন এবং তার গোনাহ মাফ করে দিলেন। রাসূল (সা.) বললেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেই নেকি রয়েছে।’ (বুখারি হা/২৩৬৩)
মন্দ কাজের পরেই ভালো কাজ করা
আল্লাহ তায়ালা বলেন, إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ‘নিঃসন্দেহে সৎকার্যাবলী মুছে ফেলে মন্দ কার্য সমূহকে’ (সূরা: হূদ, আয়াত: ১১৪)
রাসূলুল্লাহ (সা.) আবু যারকে বলেন, اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ ‘তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর। মন্দ কাজের পরপরই ভালো কাজ কর, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ কর।’ (সহিহহ আত-তিরমিযী, হা/১৯৮৭ হাদিস হাসান)
ধৈর্য ধারণ করা
আল্লাহ তায়ালা বলেন, إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ ‘ধৈর্যশীলদেরকে অপরিসীম পুরস্কার দেয়া হবে।’ (সূরা: যুমার, আয়াত: ১০)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلاَءِ وَإِنَّ اللهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ فَمَنْ رَضِىَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ ‘নিশ্চয়ই বড় পরীক্ষায় বড় পুরস্কার। আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো জাতিকে ভালোবাসেন, তখন তাদেরকে পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য (আল্লাহ তায়ালার) সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে লোক তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহ তায়ালার) অসন্তুষ্টি বিদ্যমান।’ (তিরমিযী, হা/২৩৯৬; ইবনু মাজাহ, হা/৪০৩১ হাদিস হাসান)
মুছ‘আব ইবনু সা‘দ (রা.) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (সা‘দ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! মানুষের মাঝে কার পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেন, নবীদের পরীক্ষা। মানুষকে তার দ্বীন অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। যে লোক বেশি ধার্মিক তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দ্বীনের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে থাকে, তাহলে তাকে সে মোতাবিক পরীক্ষা করা হয়। অতএব, বান্দার উপর বিপদাপদ লেগেই থাকে। অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে জমিনে চলাফেরা করে অথচ তার কোনো গোনাহ থাকে না’। (তিরমিযী, হা/২৩৯৮; ইবনু মাজাহ হা/৪০২৩, হাদিস হাসান সহিহ)
অন্যত্র তিনি বলেন, مَا يَزَالُ الْبَلاَءُ بِالْمُؤْمِنِ وَالْمُؤْمِنَةِ فِى نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللهَ وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ ‘মুমিন নারী-পুরুষের উপর, তাদের সন্তানের উপর ও তার ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। অবশেষে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সে গোনাহহীন অবস্থায় মিলিত হয়।’ (তিরমিযী, হা/২৩৯৯, হাদিস হাসান সহিহ, সহিহাহ হা/২২৮০)
খাবার শেষে ও কাপড় পরিধানের পর দোয়া পড়া
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি খাবার পর বলবে, الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِى أَطْعَمَنِىْ هَذَا الطَّعَامَ وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّى وَلاَ قُوَّةٍ ‘সেই আল্লাহর জন্য সব প্রশংসা, যিনি আমাকে আমার ক্ষমতা ও শক্তি ছাড়াই এই খাবার খাইয়েছেন এবং এই রূযী দান করেছেন, তাহলে তার বিগত সব গোনাহ মাফ করা হবে।’ (তিরমিযী হা/৩৪৫৮; আবুদাঊদ হা/৪০২৩; মিশকাত হা/৪৩৪৩, সনদ সহিহ)
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাপড় পরিধানের পর বলবে, الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِى كَسَانِى هَذَا الثَّوْبَ وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّى وَلاَ قُوَّةٍ ‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি আমার কোনো ক্ষমতা ও শক্তি ছাড়াই আমাকে এই কাপড় পরিধান করিয়েছেন, তাহলে তার আগে-পিছের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (আবূদাঊদ হা/৪০২৩, সহিহুল জামে‘ হা/৬০৮৬; মিশকাত হা/৪৩৪৩)
হাট-বাজারে প্রবেশের সময় দোয়া করা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, مَنْ دَخَلَ السُّوقَ فَقَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكُ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ كَتَبَ اللهُ لَهُ أَلْفَ أَلْفِ حَسَنَةٍ وَمَحَا عَنْهُ أَلْفَ أَلْفِ سَيِّئَةٍ وَرَفَعَ لَهُ أَلْفَ أَلْفِ دَرَجَةٍ ‘যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশের সময় বলবে, ‘আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কোনো মাবূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, সব ক্ষমতা তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য, তিনি প্রাণ দান করেন ও মৃত্যু দেন। তিনি চিরজীবি, তিনি কখনো মৃত্যু বরণ করবেন না। তার হাতেই মঙ্গল এবং তিনিই সবসময় প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতার অধিকারী, তাহলে তার জন্য আল্লাহ তায়ালা দশ লাখ নেকি বরাদ্দ করেন, তার দশ লাখ গোনাহ মাফ করেন এবং তার দশ লাখ গুণ সম্মান বৃদ্ধি করেন’। (তিরমিযী হা/৩৪২৮; ইবনু মাজাহ হা/২২৩৫; মিশকাত হা/২৩১৮, সনদ হাসান)
আরো পড়ুন: কাউকে সহযোগিতা করে খোটা দেয়া কবিরা গুনাহ
সালাতের উদ্দেশ্যে আযজান দেয়া
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মুয়াজজিনের কণ্ঠস্বর যতদূর পর্যন্ত যায়, তাকে ততদূর ক্ষমা করে দেয়া হয়। তাজা ও শুষ্ক প্রতিটি (জিনিসই কেয়ামতের দিন) তার জন্য সাক্ষী হয়ে যাবে। আর কেউ জামাতে হাজির হলে তার জন্য পঁচিশ ওয়াক্ত সালাতের সওয়াব লিখা হয় এবং এক সালাত হতে আরেক সালাতের মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (আবূদাঊদ হা/৫১৫; ইবনু মাজাহ হা/৭২৪; আহমাদ হা/৭৬১১; সহিহুল জামে‘ হা/১৯২৯; মিশকাত হা/৬৬৭)
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘ইমাম হচ্ছেন (মুসল্লীদের সালাতের) যামিন এবং মুয়াজজিন হলো (তাদের সালাতের) আমানতদার। হে আল্লাহ! ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন ও মুয়াজজিনদের ক্ষমা করে দিন।’ (আবু দাঊদ হা/৫১৭; তিরমিযী হা/২০৭; আহমাদ হা/৭১৬৯; ইরওয়া হা/২১৭; মিশকাত হা/৬৬৩)
আল্লাহর পথে জিহাদ করা
রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, يُغْفَرُ لِلشَّهِيْدِ كُلُّ ذَنْبٍ إِلاَّ الدَّيْنَ ‘শহিদের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় ঋণ ব্যতীত।’ (মুসলিম হা/১৮৮৬; আহমাদ হা/২২৫৮৫; তিরমিযী হা/১৬৪০; ইরওয়া হা/১১৯৬; মিশকাত হা/৩৮০৬)
তিনি আরো বলেন, لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللهِ سِتُّ خِصَالٍ يُغْفَرُ لَهُ فِى أَوَّلِ دَفْعَةٍ مِنْ دَمِهِ وَيُرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزَعِ الأَكْبَرِ وَيُحَلَّى حُلَّةَ الإِيمَانِ وَيُزَوَّجُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ وَيُشَفَّعُ فِى سَبْعِينَ إِنْسَانًا مِنْ أَقَارِبِهِ ‘আল্লাহর নিকট শহিদের জন্য ছয়টি বিশেষ পুরস্কার রয়েছে।
তা হলো ১. তার রক্তবিন্দু মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং জান বের হওয়ার প্রাক্কালেই জান্নাতে তার বাসস্থানটি দেখানো হয়। ২. তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করা হয়। ৩. কেয়ামত দিবসের ভয়াবহতা হতে তাকে নিরাপদে রাখা হয়। ৪. সেদিন তার মাথায় সম্মানের মুকুট পরানো হবে, যার একটি মুক্তা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম। ৫. তাকে ৭২ জন সুন্দর চক্ষু বিশিষ্ট হূরের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হবে। ৬. তার ৭০ জন নিকটাত্মীয়ের জন্য তার সুপারিশ কবুল হবে।’ (তিরমিযী হা/১৬৬৩; ইবনু মাজাহ হা/২৭৯৯; মিশকাত হা/৩৮৩৪, সনদ সহিহ)
আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিয়তে জিকির ও দ্বীনি আলোচনার বৈঠকে হাজির হওয়া
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মানুষের আমল লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতাগণ ছাড়া আল্লাহ তায়ালার আরো কিছু ফেরেশতা আছেন যারা দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ান। তারা আল্লাহ তায়ালার জিকিরে মশগুল ব্যক্তিদের পেয়ে গেলে একে অন্যকে ডেকে বলেন, নিজেদের উদ্দেশ্যে তোমরা এদিকে চলে এসো। অতএব তারা সেদিকেই ছুটে আসেন এবং জিকিরে রত লোকদের পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশ পর্যন্ত পরিবেষ্টন করে রাখেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা সে সময় (ফেরেশতাদের) বলেন, আমার বান্দাদের তোমরা কি কাজে লিপ্ত অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? ফেরেশতারা বলেন, আমরা তাদেরকে আপনার প্রশংসারত, আপনার মর্যাদা বর্ণনারত এবং আপনার জিকিরে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তারা আমাকে দেখেছে কি? তারা বলেন, না।
নবী করিম (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা পুনরায় প্রশ্ন করেন, তারা আমাকে দেখলে কেমন হত? ফেরেশতারা বলেন, তারা আপনার দর্শন পেলে আপনার অনেক বেশি প্রশংসাকারী, অধিক মাহাত্ম্য বর্ণনাকারী এবং অধিক জিকিরকারী হত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের আবারো বলেন, আমার কাছে তারা কি চায়? ফেরেশতারা বলেন, আপনার নিকট তারা জান্নাত পেতে চায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা প্রশ্ন করেন, তারা জান্নাত দেখেছে কি? ফেরেশতারা বলেন, না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে প্রশ্ন করেন, তারা তা প্রত্যক্ষ করলে কেমন হত? রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ফেরেশতাগণ বলেন, তারা জান্নাতের দর্শন পেলে তা পাওয়ার জন্য আরো অধিক প্রার্থনা করত, আরো বেশি আকাঙ্ক্ষা করত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা আবারও প্রশ্ন করবেন, তারা কোন বস্তু থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে? ফেরেশতারা বলেন, তারা জাহান্নাম হতে আশ্রয় প্রার্থনা করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা তা দেখেছে কি? ফেরেশতারা বলেন, না। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা তা প্রত্যক্ষ করলে কেমন হত? ফেরেশতারা বলেন, তারা তা প্রত্যক্ষ করলে তা থেকে আরো অধিক পালিয়ে যেত, আরো অধিক ভয় করত এবং তা থেকে বাঁচার জন্য বেশি বেশি আশ্রয় প্রার্থনা করত। নবী করিম (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমাদেরকে আমি সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তখন ফেরেশতারা বলেন, তাদের মাঝে এমন এক লোক আছে যে, তাদের সঙ্গে একত্র হওয়ার জন্য আসেনি, বরং ভিন্ন কোনো দরকারে এসেছে। সে সময় আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা এরূপ একদল ব্যক্তি যে, তাদের সঙ্গে উপবেশনকারীও বঞ্চিত হয় না।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিযী হা/৩৬০০)
তওবা করা
আল্লাহ তায়ালা বলেন, إِلاَّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلاً صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَحِيْمًا ‘তারা নয়, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের গোনাহ সমূহ পরিবর্তন করে দেবেন নেকি দ্বারা। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সূরা: ফুরক্বান, আয়াত: ৭০)
পরিশেষে বলব, আসুন! উপরোক্ত আমলসমূহ যথাযথভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে আমরা পাপ মোচনের জন্য চেষ্টা করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেক মুমিন নারী-পুরুষের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিন। অধিক হারে নেকি অর্জনের তাওফিক দিন এবং জান্নাতুল ফেরদাউসের পথ সহজ করে দিন। আমিন!