চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় লকডাউনের আওতায় আরও ৯টি গ্রাম
জেলা প্রতিনিধিঃ চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার সাতটি গ্রামে চার দিন ধরে অনির্দিষ্টকালের লকডাউন অব্যাহত রয়েছে। আজ শনিবার লকডাউনের তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে পাশের কুড়ুলগাছি ও পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম। এই ৯ গ্রামে আজ থেকে ১৪ দিনের জন্য লকডাউন করা হয়েছে।
দামুড়হুদার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত কুমার সিংহের সভাপতিত্বে শনিবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত উপজেলা করোনা প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়। প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী আজগার টগর সভায় উপস্থিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন ৯টি গ্রামকে লকডাউনের আওতায় আনার পরামর্শ দেন। এরপর উপজেলা প্রশাসন থেকে লকডাউন ঘোষণাসহ তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়।
শনিবারের এই জরুরি সভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল, দর্শনা পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমান, দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল খালেক, দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান এবং উপজেলাধীন সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত থেকে নিজ নিজ এলাকার সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
এই নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট ১৬টি গ্রামকে লকডাউনের আওতায় আনা হলো। নতুন করে লকডাউনের আওতায় আনা ৯টি গ্রাম হচ্ছে কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ফুলবাড়ি, চাকুলিয়া ও ঠাকুরপুর এবং পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ঝাঁঝাডাঙ্গা, কামারপাড়া, বারাদী, নাস্তিপুর, ছোট বলদিয়া, বড় বলদিয়া ও মদনা। এর আগে ২ জুন কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের শিবনগর, হরিরামপুর, জাহাজপোতা, পীরপুরকুল্লা, মুন্সীপুর, কুতুবপুর ও হুদাপাড়া গ্রামে লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসন।
এদিকে, লকডাউন কার্যকরের পরও মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না। নানা অজুহাতে তাঁরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন। চায়ের দোকানসহ মাচায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের লকডাউন ঘোষিত সাতটি গ্রামে গত ৪ দিনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৭৯ জনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। নতুন করে লকডাউন দেওয়া ৯টি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। অনেকেরই দাবি, ওই ৯টি গ্রামে এখনো লকডাউন দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিত তৈরি হয়নি।
সাংসদ আলী আজগার জানান, লকডাউনে আটকে পড়া সাত গ্রামের করোনা আক্রান্ত লোকেরা কারণে-অকারণে বিকল্প পথ হিসেবে কুড়ুলগাছি ও পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের এই ৯ গ্রামের রাস্তাকে ব্যবহার করছেন। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে ওই ৯ গ্রামে লকডাউন দিতে হলো। তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত মানুষগুলোকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও খাদ্যসহায়তার পাশাপাশি লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে। এ জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলারা রহমান বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে সড়কে প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি মানুষের চলাচল ঠেকাতে পুলিশ, গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ২ জন
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় দুজনসহ এ পর্যন্ত ৭০ জন করোনায় মারা গেছেন। এ সময়ে মোট ৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সাতজনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৪ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতির দিকে। বর্তমানে জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৬৮ জন। যার মধ্যে ১৩২ জনই হোম আইসোলেশনে আছেন। এ ছাড়া ভারতফেরত ৭ জনসহ করোনা আক্রান্ত ২৪ জন ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের রেড জোনে চিকিৎসাধীন এবং চারজনকে অন্যত্র রেফার করা হয়েছে।
রেড জোনে চিকিৎসাধীন রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে অক্সিজেন নিয়ে প্রায়ই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। চিকিৎসাধীন এক রোগীর আত্মীয় পাপিয়া আকতার অভিযোগ বলেন, মাঝে মাঝেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফাতেহ আকরাম বলেন, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থায় সিলিন্ডার থেকে পাইপলাইনে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সিলিন্ডার অক্সিজেনশূন্য হয়ে পড়লে তা পরিবর্তনে আধা ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লাগে। এ কারণে সরবরাহ সাময়িক বন্ধ থাকতে পারে।