দাম্মামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতর পরিবারে শোঁকের মাতম
মামুনুর রশীদ/ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
সৌদি আরবের দাম্মামে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা ছেলে ও মেয়েসহ বাংলাদেশের একই পরিবারের তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু ও গুরুত্বর আহত হয়েছেন ওই পরিবারের স্ত্রী ও বড় মেয়ে। নিহত রেমিটেন্স যোদ্ধা মোবারক হোসেন ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ চরকমলাপুরের বাসিন্দা। মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় নিহতের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
অসুস্থ বৃদ্ধা মা আলেয়া বেগম ছেলেসহ দুই নাতিনের মৃত্যুর খবর শুনার পর থেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। ছেলে ও তার পরিবার প্রবাসে দুর্ঘটনায় নিহত ছেলেসহ তার দুই নাতিনকে শেষবারের মত দেখার ইচ্ছে থাকলেও শেষ সাক্ষাৎ হবে কিনা এনিয়ে চরম অস্থিরতায় দিন কাটাচ্ছেন অসুস্থ বৃদ্ধা মা আলেয়া বেগম পরিবার। সরকারের কাছে তার দাবী অন্তত শেষ বারের মত যেন দেখতে পারেন তার জাদু সোনা মোবারকসহ মৃতদেহগুলো ।
নিহতরা হলেন, মোবারক হোসেন (৪৮), তার দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে তানজিল আব্দুল্লাহ (১৭) ও অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে মাহিয়া মাহি (১৪)। আহতরা হলেন মোবারক হোসেনের স্ত্রী শিখা আক্তার (৪০) ও বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানা মীম (১৯)। স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন বলে জানান তার স্বজনেরা। নিহত ওই সৌদি প্রবাসী মোবারক হোসেন জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার হাজীগঞ্জের গাজিরটেক গ্রামের শেখ মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহন শেখের বড় ছেলে। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তাদের চার ভাই সৌদি প্রবাসী।
স্বজনেরা জানান, মোবারক হোসেন বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) পরিবারের সকলকে নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ওমরাহ পালনের জন্য পবিত্র মক্কার উদ্দেশ্য রওনা হন। ওমরাহ্ পালন শেষে শনিবার (৫ আগস্ট) সৌদি আরব সময় সকাল ১০টার দিকে দাম্মাম শহরের নিজ বাসায় ফিরছিলেন। পথে মধ্যে আল-কাসিম নামক স্থানে পৌঁছালে তাদের গাড়িকে পিছনের অপর একটি গাড়ি সজোরে ধাক্কা দিলে তাদের গাড়ি দুমড়ে- মুচড়ে যায় । এঘটনায় মোবারক হোসেনেসহ পাঁচজনই গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে সৌদি পুলিশ তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তিন জনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অবস্থায় অপর দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান নিহতের স্বজনেরা।
সূত্র মতে আরও জানা যায়, প্রায় দুই যুগ অধীক সময় ধরে পরিবার নিয়ে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে বসবাস করছেন মোবারক হোসেন। গত চার মাস আগেও পরিবার নিয়ে দেশে বেড়াতে এসেছিলেন। নিজস্ব একটি কার রিপিয়ারিং শপ (গাড়ি মেরামতের দোকান) থেকে নিজের দেশের বাড়িতে পরিবার ও স্বজনদের এবং নিজের প্রবাস জীবনের চাহিদা মিটিয়ে আসছিলেন। পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছেনুসারে তাদেরকে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে নিয়ে তুলেন। ইচ্ছে ছিল স্বপরিবারকে সাথে নিয়ে উম্মা পালনের। সেই ইচ্ছে পূরণ করে ঘরে ফেরার পথে ছেলে ও মেয়েসহ তার নিহতের ঘটনায় ফরিদপুরের গ্রামের বাড়িতে কান্নার রোল চলছে আপনজনকে হারানোর বেদনায়। দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে আশেপাশের পরিবেশ। একই পরিবারের তাজা তিনটি প্রিয় মানুষের মৃত্যুতে শুধু ওই বাড়িতে নয় এখবরে গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
নিহতের বাবা শেখ মোহম্মদ আলী ওরফে মোহন শেখ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,গ্রামের বাড়ি চরভদ্রাসন এলাকায় হলেও নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে ফরিদপুর শহরের চর কমলাপুরে বসবাস করছি। আমার বড় নাতনি মিমের কানাডা যাওয়ার প্রস্তুতি শেষ করেছিল তার বাবা। তার আগে পরিবার নিয়ে ওমরাহ করতে যাওয়ার ইচ্ছে হয়। সেই মোতাবেক ওমরাহ করতে গেল আমার বাপজান। কিন্ত সেই ইচ্ছে পূরণ করে ফেরার পথে আমার ছেলে আর দুই নাতির জীবন শেষ হয়ে গেল এই দুর্ঘটনায়। আমি আর কি বলবো আপনাদের-একথা বলে বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। কিছুটা পর বলেন,ফোরম্যানের চাকরি নিয়ে মোবারক সৌদি আরবে গিয়েছিল। প্রবাস জীবন আর দেশের সংসারে ভরন পোষণের ব্যয় সামলাতে সেখানে একটি গাড়ির গ্যারেজ খুলেছিল আমার বাবা। কিন্ত আজ আমার সব শেষ হয়ে গেল বলতেই ছেলে ও তার নাতিনদের জন্য বুকচাপ্রিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
নিহতের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পরিবারের সকলকে নিয়ে ভাই ওমরা করতে যাবে বলে বুধবার রাতে তাদের ফোন করে জানান এবং দোয়া চাইলেন। ভাইয়ের বড় মেয়ের কানাডা যাওয়ার কথা ছিল? বাচ্চাদেরও পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় স্বপরিবারে ওমরায় যাচ্ছেন বলে আমার আর ভাইয়ের মধ্যে একথাগুলো ছিল শেষ কথা।দুর্ঘটনার দুই ঘণ্টা পরে তার পরিবারের লোকজন জানতে পারেন গাড়ি দুর্ঘটনার ঘটনার খবর। মারা গেছেন একথা প্রথমেই তারা কেউ জানতে পারেননি। দাম্মামের সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বাংলাদেশ থেকে বড় ভাইর শ্যালক গেছেন সৌদিআরবে। এছাড়া প্রবাসে থাকা আরও দুই ভাই আহত ও নিহতদের কাছে রয়েছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন তার বড় ভাই ছিলেন এদেশের একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা। তার ভাইর লাশসহ তিনটি লাশ যেন দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এজন্য বাংলাদেশের মমতাময়ী মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এবং বৈদেশিক ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে জোড় আহ্বান জানান তিনি।