ফরিদপুরে মধুমতি নদীর ভাঙন আতঙ্কে শতশত পরিবার
মামুনুর রশীদ/ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
দিন দিন পানি বাড়ছে নদীতে। সেসাথে বাড়ছে নদী তীরবর্তী বসবাসরত পরিবারের মাঝে ভাঙ্গন আতঙ্ক। চোখের সামনে নিমিষে নদীর অতল গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাসীর মাথা গোঁজার শেষ সম্বল। নদী তীরের পাড়ের দুঃখের কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার মধুমতি নদী তীরের বসতি শ্রাবণ মোল্লার পরিবার।
অন্যসকল বসতিরা জানান, পাঁচুড়িয়া ও উত্তর চরনারানদিয়া গ্রামে মধুমতি নদী তীরবর্তী প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে কমপক্ষে সাড়ে তিনশো পরিবার। সংশ্লিষ্ট বিভাগ জরুরীভাবে নদীর ভাঙ্গন রোধের চলমান কাজের পরিধি বাড়িয়ে আরও গুরুত্বের সাথে দেখভাল করে তবেই ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন মধুমতি তীরে বসবাসকারী পরিবারগুলো।
সরেজমিনে জানা যায়, মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভাঙন। উপজেলার দুই গ্রামে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঁশতলা বাজার, বিভিন্ন পাকা সড়ক, দুইটি মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ ও কবরস্থানসহ শত শত বিঘা ফসলি-জমি,গাছ-পালাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
গ্রাম্বাসী জানায়, গত কয়েক দিনে মধুমতিতে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার জায়গা। কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ টি বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বিভিন্ন পরিবার। কেউ কেউ সব হারিয়ে বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে। আবার শেষ সম্বল বলে ঘরবাড়ি, গাছপালা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সাধ্যমতে। ভাঙন ঠেকাতে জরুরী ভিত্তিতে বিভিন্ন পয়েন্টে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্ত সেগুলো প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের ।
উত্তর চরনারানদিয়ার স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন আগে নদীতে বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। আর কিছু বলতে তাদের অনেকের কিছুই নেই। হয়ে গেছেন একেবারে সর্বশান্ত। নদী তীরে অন্যের জমিতে একটি ছাপড়া তুলে কোনমতে বেচে আছেন তারা। সেই ছাপড়া ঘরও যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হওয়ার মতো অবস্থায়। পরিবার পরিজন নিয়ে এরপর যে কোথায় যাবো সে চিন্তায় সারাক্ষণে তারা উদবিঘ্ন।
পাচুড়িয়া এলাকার স্থানীয়রা বলেন, সারাদিন নদীর তীরে বসে থাকি। কখন সবকিছু ভেঙ্গে নিয়ে যায়। রাতেও ঘুম আসে না। কোনমতে ঘুম আসলেও ঘুমের মধ্যে হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি, এই বুঝি আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে যায়।
চরনারানদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইয়াছিন মোল্লা জানান,নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙন বেড়েছে। ভাঙন ঠেকাতে পাউবো জিওব্যাগ ফেলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। প্রয়োজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যবস্থা গ্রহণ যাতে ভাঙন রোধ করা যায়।
ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সন্তোষ কর্মকার আজকের দর্পণকে জানান, মধুমতি নদী ভাঙন এলাকায় বরাদ্দ অনুযায়ী আপদকালীন জিওব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। আগামী অক্টোবর মাস থেকে নদী ভাঙন এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। ভাঙ্গনরোধের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড সব সময় সচেতনার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও তিনি জানান।