ঢাকা ০৩:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশ প্রত্যাহারের নির্দেশ Logo কারো কোনো ব্যথা নেই, শিক্ষকদের দাবি না মানায় চলছে টানা কর্মবিরতি Logo দশমিনা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ইকবালের চতুর্থ জানাযা সম্পন্ন Logo শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ালেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সনেট Logo শাপলা না পাওয়ার প্রশ্নই আসে না: ময়মনসিংহে এনসিপির সারজিস আলম Logo অধ্যক্ষসহ ৫৫ জনের ভুয়া সনদ! বনপাড়া আদর্শ কলেজে নিয়োগ কেলেঙ্কারি ফাঁস Logo মিরপুরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে শোক প্রকাশ : তারেক রহমান Logo পানছড়ির জিয়ানগরে ভোট ফর ওয়াদুদ ভূইয়া-ভোট ফর ধানের শীষ ক্যাম্পেইন অনুষ্টিত Logo সব সরকারি কলেজে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন, পরীক্ষাও স্থগিত Logo ১৬ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম সুষ্ঠু নির্বাচন হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ঘুষ দিলেই ছুটি মেলে শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে

Astha DESK
  • আপডেট সময় : ০২:৩১:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪
  • / ১০৫৬ বার পড়া হয়েছে

ঘুষ দিলেই ছুটি মেলে শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে

স্টাফ রিপোর্টার:

পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) মো: হিটলারুজ্জামান ওরফে হিটলারের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও কোনো শাস্তি হয় না, বরং ঘুষ দিলে উল্টো বোনাস হিসেবে উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও ক্লিপ আজকের পত্রিকার কাছে এসেছে।

টিওর শাস্তির মুখে পড়ার ভয়ে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে চান না। শিক্ষকেরা ঘুষ লেনদেন ছাড়াও টিওর বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার, শিক্ষক হয়রানিসহ অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে।

হিটলারুজ্জামানের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ক্লিপ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক নারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামানের কক্ষে গিয়ে তাঁর কাছে একটি কাগজ দিলে তিনি স্বাক্ষর করতে থাকেন, এ সময় সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তি ওই নারীকে হিটলারুজ্জামানকে টাকা দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

তখন ওই নারী টাকার একটি বান্ডিল তাঁর টেবিলে রাখেন। হিটলারুজ্জামান নারীর এক হাতে কাগজটি দিয়ে এবং অন্য হাতে টেবিলের ওপর রাখা টাকা ড্রয়ারে রেখে বলেন, ‘একটা অফিসে দিয়েন এবং অন্যটি সিল দিয়ে নিয়ে যাইয়েন। অন্য কাউকে দেওয়ার দরকার নাই।’ এরপর হিটলার বলেন, ‘আর এখানে কত টাকা আছে?’ নারী বলেন, ‘১০ হাজার।’ এ সময় নারীর সঙ্গে থাকা ব্যক্তি আরও ৭ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিলে তিনি (নারী) হিটলারুজ্জামানকে আরও ৭ হাজার টাকা দেন এবং হিটলারুজ্জামান সেই টাকা ড্রয়ারে রাখেন।

নারীর সঙ্গে থাকা ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘এখানে ১৭ হাজার, স্যার, এরপর কোনো কষ্ট হলে কিন্তু আপনি দেখবেন।’ হিটলারুজ্জামান ‘ঠিক আছে’ বলে আশ্বাস দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই নারীর নাম মোসা. সাবেকুন্নাহার। তিনি দশমিনা উপজেলার আলিপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। গত ২৫ জানুয়ারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামান ওরফে হিটলারের অফিসে দুই মাসের স্বাস্থ্য ছুটি আনতে গেলে তাঁকে স্বাস্থ্য ছুটি দেন তিনি। বিনিময়ে সহকারী শিক্ষক সাবেকুন্নাহারের থেকে ১৭ হাজার টাকা নেন টিও।

সরেজমিন গতকাল বৃহস্পতিবার দশমিনা উপজেলা ৮৬ নম্বর বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, এই স্কুলে ছয়জন শিক্ষক কর্মরত। তবে উপস্থিত আছেন পাঁচজন।

এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক তামান্না জাহান ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে মার্চের ১৮ তারিখ পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি ১৫ দিনের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে ছুটি চাইলে প্রধান শিক্ষক রাজি হননি। তখন তিনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামানের কাছে যান। শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁকে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস অসুস্থতা দেখিয়ে ছুটি দেন। অথচ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের ১৮ তারিখ পর্যন্ত তাঁর উপস্থিতির স্বাক্ষর রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমার কাছে ছুটি চেয়েছিল। আমি দেইনি। পরে টিও স্যারের থেকে ছুটি এনে আমাকে দিয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে মেডিকেলের কোনো কাগজপত্র নেই।’

ছুটি নিয়েছেন এক মাস, কিন্তু এলেন গত ১৮ মার্চ, এ ছাড়া বিগত দিনের উপস্থিতিও দেখানো হয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘সে ১৮ তারিখ এবং মাঝে মাঝে এসে সব স্বাক্ষর করে দেয়। টিও (হিটলারুজ্জামান) স্যার তাঁকে উপস্থিতি সব দিয়ে দিতে বলেছে।’

এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক তামান্না জাহানের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুলে গিয়ে তো দেখেছেনই।’ এই বলেই তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘উনি (হিটলারুজ্জামান) এই উপজেলা আসার পর থেকে অর্থের বিনিময় ছাড়া কোনো কাজ করেন না। শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে রাখেন যাতে ওনার বিরুদ্ধে কেউ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে না পারে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে দশমিনা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: হিটলারুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন কল ও এসএমএস দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বখতিয়ার রহমান বলেন, ‘যদি এ রকম হয়ে থাকে তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্যাগস :

ঘুষ দিলেই ছুটি মেলে শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে

আপডেট সময় : ০২:৩১:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪

ঘুষ দিলেই ছুটি মেলে শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে

স্টাফ রিপোর্টার:

পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) মো: হিটলারুজ্জামান ওরফে হিটলারের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও কোনো শাস্তি হয় না, বরং ঘুষ দিলে উল্টো বোনাস হিসেবে উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও ক্লিপ আজকের পত্রিকার কাছে এসেছে।

টিওর শাস্তির মুখে পড়ার ভয়ে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে চান না। শিক্ষকেরা ঘুষ লেনদেন ছাড়াও টিওর বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার, শিক্ষক হয়রানিসহ অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে।

হিটলারুজ্জামানের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ক্লিপ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক নারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামানের কক্ষে গিয়ে তাঁর কাছে একটি কাগজ দিলে তিনি স্বাক্ষর করতে থাকেন, এ সময় সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তি ওই নারীকে হিটলারুজ্জামানকে টাকা দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

তখন ওই নারী টাকার একটি বান্ডিল তাঁর টেবিলে রাখেন। হিটলারুজ্জামান নারীর এক হাতে কাগজটি দিয়ে এবং অন্য হাতে টেবিলের ওপর রাখা টাকা ড্রয়ারে রেখে বলেন, ‘একটা অফিসে দিয়েন এবং অন্যটি সিল দিয়ে নিয়ে যাইয়েন। অন্য কাউকে দেওয়ার দরকার নাই।’ এরপর হিটলার বলেন, ‘আর এখানে কত টাকা আছে?’ নারী বলেন, ‘১০ হাজার।’ এ সময় নারীর সঙ্গে থাকা ব্যক্তি আরও ৭ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিলে তিনি (নারী) হিটলারুজ্জামানকে আরও ৭ হাজার টাকা দেন এবং হিটলারুজ্জামান সেই টাকা ড্রয়ারে রাখেন।

নারীর সঙ্গে থাকা ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘এখানে ১৭ হাজার, স্যার, এরপর কোনো কষ্ট হলে কিন্তু আপনি দেখবেন।’ হিটলারুজ্জামান ‘ঠিক আছে’ বলে আশ্বাস দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই নারীর নাম মোসা. সাবেকুন্নাহার। তিনি দশমিনা উপজেলার আলিপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। গত ২৫ জানুয়ারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামান ওরফে হিটলারের অফিসে দুই মাসের স্বাস্থ্য ছুটি আনতে গেলে তাঁকে স্বাস্থ্য ছুটি দেন তিনি। বিনিময়ে সহকারী শিক্ষক সাবেকুন্নাহারের থেকে ১৭ হাজার টাকা নেন টিও।

সরেজমিন গতকাল বৃহস্পতিবার দশমিনা উপজেলা ৮৬ নম্বর বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, এই স্কুলে ছয়জন শিক্ষক কর্মরত। তবে উপস্থিত আছেন পাঁচজন।

এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক তামান্না জাহান ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে মার্চের ১৮ তারিখ পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি ১৫ দিনের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে ছুটি চাইলে প্রধান শিক্ষক রাজি হননি। তখন তিনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামানের কাছে যান। শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁকে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস অসুস্থতা দেখিয়ে ছুটি দেন। অথচ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের ১৮ তারিখ পর্যন্ত তাঁর উপস্থিতির স্বাক্ষর রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমার কাছে ছুটি চেয়েছিল। আমি দেইনি। পরে টিও স্যারের থেকে ছুটি এনে আমাকে দিয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে মেডিকেলের কোনো কাগজপত্র নেই।’

ছুটি নিয়েছেন এক মাস, কিন্তু এলেন গত ১৮ মার্চ, এ ছাড়া বিগত দিনের উপস্থিতিও দেখানো হয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘সে ১৮ তারিখ এবং মাঝে মাঝে এসে সব স্বাক্ষর করে দেয়। টিও (হিটলারুজ্জামান) স্যার তাঁকে উপস্থিতি সব দিয়ে দিতে বলেছে।’

এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক তামান্না জাহানের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুলে গিয়ে তো দেখেছেনই।’ এই বলেই তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘উনি (হিটলারুজ্জামান) এই উপজেলা আসার পর থেকে অর্থের বিনিময় ছাড়া কোনো কাজ করেন না। শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে রাখেন যাতে ওনার বিরুদ্ধে কেউ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে না পারে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে দশমিনা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: হিটলারুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন কল ও এসএমএস দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বখতিয়ার রহমান বলেন, ‘যদি এ রকম হয়ে থাকে তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’