DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাবৃহস্পতিবার ৫ই ডিসেম্বর ২০২৪
ঢাকাবৃহস্পতিবার ৫ই ডিসেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেনা ক্যাম্প স্থাপন জরুরী

Astha Desk
ডিসেম্বর ২, ২০২৪ ১২:৫৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেনা

মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছঃ

একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র তখনই অর্থবহ হয় যখন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়। স্বাধীনতার পর দেশের অগ্রগতির পথে বাধা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা জটিল হয়ে দেখা দিয়েছিল। প্রায়

দুই যুগ ধরে আত্মঘাতী তৎপরতায় লিপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি (জেএসএস) কথিত শান্তিবাহিনীর সাথে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামক এক চুক্তি সম্পাদিত হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অনেক ধারা-উপধারা সাংঘর্ষিক। তাই এই চুক্তির সংবিধান বিরোধী ধারা-উপধারা গুলো সংশোধনের দাবি তীব্র হয়েছে। এই দাবিতে রাষ্ট্রের স্বপক্ষের শক্তি বরাবরই আন্দোলন করে আসছে।

১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তারা এ সমস্যা সমাধানের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ২৪টি বৈঠকে এই নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। কিন্তু পার্বত্য বাঙালিদের অভিযোগ, পার্বত্য বাঙালি এবং বাংলাদেশ সংবিধানকে পাশকাটিয়ে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সংবিধান পরিপন্থী ধারা চুক্তিতে যুক্ত করা হয়েছে। যার কারণে চুক্তিতে অসংখ্য অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক ধারা যুক্ত হয়েছে।

এই চুক্তিতে সরকার পক্ষে স্বাক্ষর করেন, তৎকালীন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত মুহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য জন সংহতি সমিতির পক্ষে সংগঠনের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা।

চুক্তির অসাংবিধানিক ধারা যুক্ত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় এক কালো অধ্যায় সূচিত হয়। এই নিয়ে নানান তর্ক-বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কারণ রাষ্ট্রের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাঙালি এই চুক্তিতে সাংবিধানিক অধিকার হারিয়েছে।

চুক্তির অসাংবিধানিক ধারার কারণে প্রথাগত ভূমি আইন পার্বত্য বাঙালিদের ভূমি অধিকার কেড়ে নিয়েছে৷ এই নিয়ে বাঙালি সম্প্রদায়ের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে৷ সরকারের কাছে পার্বত্যবাসীদের প্রাণের দাবি সংবিধান পরিপন্থী চুক্তির ধারাগুলো সংশোধন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশে বাঙালিদের ভূমি অধিকার ফিরে দেওয়া হোক। সরকারের একান্ত আন্তরিক প্রচেষ্ঠাই তা সম্ভব বলে পার্বত্যবাসী মনে করে।

১৯০০ সালের পহেলা মে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পাহাড়ের ক্ষুদ্র- নৃগোষ্ঠী জাতিসত্তাগুলোর সংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় এবং প্রশাসনিক অন্য পুনর্গঠনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘শাসন বহির্ভূত এলাকা’ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৫৭ সালে তা বিলুপ্ত করে পাকিস্তান সরকার।

পার্বত্য চট্টগ্রামের তথ্য আলোকপাত ও বিভিন্ন লেখক, গবেষকদের বইয়ের তথ্য-উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, রাজমোহন দেওয়ানের নেতৃত্বে ১৯১৫ সালে সর্বপ্রথম চাকমা যুবক সমিতি গঠিত হয়। ১৯১৯ সালে ঘনশ্যাম দেওয়ানের নেতৃত্বে গঠিত হয় চাকমা যুবক সংঘ।

১৯২০ সালে কামিনী মোহন দেওয়ান গঠন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসমিতি। প্রায় দু’দশক ধরে এ সংগঠনটি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। ১৯৩৯ সালে যামিনী রঞ্জন দেওয়ান ও স্নেহকুমার চাকমা এ সংগঠনের যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। তখন থেকেই জনসমিতির রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির প্রাক্কালে জনসমিতি পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার চেষ্টা করে। যারা ১৯৪৭ সালের ২০ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রামের পাকিস্তানি শাসন কায়েমের বিপক্ষে ছিল। অতঃপর ১৯৫৭ সালে র‌্যাডক্লিফ মিশন পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করে।

১৯৬০ সালে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর কাপ্তাই কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টি হলে বিপুল সংখ্যক উপজাতীয় পরিবারকে পাহাড়ে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় কিছু সংখ্যক পাহাড়ী জনগোষ্ঠী দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার উপজাতীয়দের মধ্য থেকে একটি অংশ চাকমা রাজা ত্রিদির রায় এর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে।

১৯৭২ সালে উপজাতীয় নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএন লারমা) পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বিশেষ মর্যাদা ও স্বায়ত্তশাসনের জন্য বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির কাছে দাবি জানিয়ে ব্যর্থ হন।

১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রয়ারী এম.এন লারমার নেতৃত্বে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি’ বা জেএসএস নামে উপজাতি জনগণের একটি অংশ সশস্ত্র সংগঠন গড়ে ওঠে। কথিত আছে তৎকালীন রাষ্ট্র প্রধান তাদের বাঙালি হয়ে যাবার পরামর্শ দেন।

১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি আর্মড ক্যাডার ফোর্স ‘শান্তিবাহিনী’ গঠন করে। পরবর্তীতে এ বাহিনী প্রথমে স্বাধিকার, পরে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও জুমল্যান্ড প্রতিষ্ঠার দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম চালাতে শুরু করলে উপজাতি-বাঙ্গালী মিলিয়ে প্রায় ৩৫ সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়।

শান্তিবাহিনীর গেরিলা কার্যক্রম ও সরকারি পদক্ষেপ:
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান-এর হত্যাকান্ডের ফলে জন সংহতি সমিতির সংকটময় অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং সন্তু লারমা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যান।

১৯৭৫-১৯৭৭ সালের মধ্যে শান্তিবাহিনী সামরিক দিক দিয়ে অধিকতর সংগঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে সংগঠিত শান্তিবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তৎকালীন সরকার সামরিক পথেই উপজাতিদের এ দেশদ্রোহী চক্রান্তকে দমন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে দরিদ্র ভূমিহীন কিছু মানুষকে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসন করেন। সরকারের মানবিক এ সিদ্ধান্ত ঘটনা উপজাতিরা মেনে নিতে পারেনি। ৬০, ৭০ ও ৮০-এর দশকে মানবেন্দ্র লারমা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মু জাতীয়তাবাদের বিকাশে যারা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তারা হলেন বিহারী খাসা, জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজা প্রমুখ।

পার্বত্য সশস্ত্র সংঘাত অবসানের জন্য প্রথম জনসংহতি সমিতির সাথে আলোচনা করা হয় ১৯৭৮ সাল থেকে। ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এই শান্তি আলোচনা চলে। এই সময় ১৯৮৯ সালের ২- জুলাই তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার পরিষদ আইনের অধীনে স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন করা হয়।

এই পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয় উপজাতীয়দের মধ্য থেকে। নিয়ম করা হয় প্রতি জেলায় ৩০ জন সদস্য রাখা হবে। যার এক-তৃতীয়াংশ বাঙালি এবং দুই তৃতীয়াংশ বিভিন্ন উপজাতি জনগোষ্ঠী। কিন্তু সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন শান্তিবাহিনী এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে। ফলে এই পরিষদের হাতে যে ২২ ধরণের ক্ষমতা হস্তান্তর হওয়ার কথা ছিল তা ব্যর্থ হয়।

আরো পড়ুন :  পানছড়িতে সেনাবাহিনীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও কম্বল বিতরণ

পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত শান্তি বাহিনীর সঙ্গে ১৩ দফা বৈঠক হয়। তারপর ১৯৯৬ সালের ২২ জুন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় বসার পর শান্তিবাহিনীর সাথে আবার নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ নেয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি স্থাপন এবং রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান হিসেবে মনোনীত হন তৎকালীন চীফ হুইফ আবুল হাসনাত মুহাম্মদ আবদুল্লাহ।

পাঁচ দফা পেশ:
কমিটির প্রধান শান্তি আলোচনার পাশাপাশি ১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্র বিরতি শুরু করেন। তখন জনসংহতি সমিতি সরকারের সাথে আলোচনা করে ৫ দফা দাবি পেশ করে।
১. বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি নির্বাচিত আঞ্চলিক পরিষদের কর্তৃত্বাধীন পৃথক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা প্রদান, যার নাম হবে জুম্মুল্যান্ড।
২. পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের জাতিগত সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান।
৩. ১৯৪৭-এর ১৪ আগস্টের পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশকারী বহিরাগতদের প্রত্যাহার। পার্বত্য ভূমির ওপর পাহাড়ি স্বত্ত্বের স্বীকৃতি।
৪. বিডিআর ক্যাম্প ব্যতীত পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর সকল ক্যাম্প ও সেনানিবাস তুলে নেয়া।
৫. ১৯৬০ সালের পর থেকে যে সব পাহাড়ি চট্টগ্রাম ছেড়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা। জনসংহতি সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল আইনি অভিযোগ প্রত্যাহার এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিষয়বস্তু:
পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রধান বিষয়বস্তু হলো দ্বিস্তর বিশিষ্ট পরিষদ। যার প্রথমটি আঞ্চলিক পরিষদ, পৃথক তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। স্থানীয় সরকার পরিষদের পরিবর্তে জেলা পরিষদ গঠিত হবে। আঞ্চলিক পরিষদের সমন্বয় করবে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলো। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে এ তিনটি জেলা পরিষদ। যা দুই যুগের বেশি সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির দিকসমূহ:
মোট ২৬টি বৈঠক শেষে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অর্থাৎ দীর্ঘদিনের অশান্ত পার্বত্য অঞ্চলকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এ নীতিমালার প্রধান প্রধান দিকগুলো:

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন অর্জনের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
স্বাক্ষরের পর থেকেই চুক্তি বলবৎ হবে।
বিডিআর ও স্থায়ী সেনানিবাস (তিন জেলা সদরে তিনটি এবং আলী কদম, রুমা ও দীঘিনালা) ব্যতীত সামরিক বাহিনী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল সরকারি, আধা সরকারি, পরিষদীয় ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সকল স্তরে নিয়োগে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হবে। সচিবসহ বিভিন্ন পদে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইনসমূহ পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন ও অবলোকন করা হবে।

পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। যার পদমর্যাদা হবে একজন প্রতিমন্ত্রীর সমান এবং তিনি অবশ্যই উপজাতীয় হবেন।

পরিষদে মহিলাদের জন্য ৩টি আসন সংরক্ষিত রাখা হবে। দুই-তৃতীয়াংশ উপজাতীয় হবে।
পরিষদের মেয়াদ ৫ বছর হবে।
পরিষদের সাথে আলোচনা ছাড়া কোনো জমি, পাহাড় ও বনাঞ্চল অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর করা যাবে।

কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমির মূল মালিকদের বন্দোবস্ত দেয়া হবে।

মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা চালু হবে।
তিন জেলা সমন্বয়ে ২২ সদস্যবিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে ৫ বছর।
সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে চাইলে সরকার পরিষদের সাথে আলাপ করবে।
উপরিউক্ত নীতিমালার ভিত্তিতেই সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ফলাফল:
পার্বত্য চুক্তির ফলে পাহাড়ি এলাকায় বিদ্যমান যে হানাহানি তা মোটেও বন্ধ হয়নি বরং চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে সশস্ত্র সংগঠন ছিল একটি এখন চুক্তির ফলে তা বৃদ্ধি পেয়ে চার-পাঁচটিতে রুপান্তরিত হয়েছে।

১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়িতে সন্তু লারমা দলের ৭৩৯ জন অকেজো কিছু অস্ত্রসহ কথিত আত্মসমর্পণ করে। প্রায় ৬৪ হাজার জন শরণার্থী দেশে ফিরে আসে। অবশ্য এই পার্বত্য চুক্তির ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ পুরুস্কার পেয়েছে।

যেমন,‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকা মন্তব্য করে, ‘এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের একটি বিদ্রোহের অবসান ঘটিয়েছে।’ ইউনেস্কো বাংলাদেশের এই পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে স্বীকৃতিস্বরূপ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

কিন্তু চুক্তির মৌলিক প্রধান শর্ত ছিল, অবৈধ অস্ত্র পরিহার পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। দুঃখজনক যে, চুক্তির ২৭ বছর পেরিয়ে গেলেও সন্তু লারমার জেএসএস সম্পূর্ণ অবৈধ অস্ত্র সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ করেনি।

করণীয়:
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে যেহেতু বাংলাদেশ সংবিধানের সাংঘর্ষিক অবস্থান রয়েছে সুতরাং, সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ধারা সংবলিত চুক্তি সংশোধন করতে হবে এবং চুক্তির বৈষম্যেমূলক ধারা-উপধারায় পার্বত্য বাঙালিরা পিছিয়ে পড়েছে। চুক্তিতে বাঙালিদের জন্যও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা। এবং পাহাড়ের সকল পক্ষের সাথে বৃহত্তর আলোচনা করতে হবে। এছাড়াও প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পগুলো স্থাপন করতে হবে।

তথ্য সূত্র:
(১) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি
(২) পার্বত্য তথ্য কোষ (আতিকুর রহমান)
(৩) বাংলাপিডিয়া

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০৩
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:১০
  • ১১:৫১
  • ৩:৩৫
  • ৫:১৪
  • ৬:৩২
  • ৬:২৪