পাসপোর্টের বহুল আলোচিত ডাটা অ্যান্ড পার্সোনালাইজেশন সেন্টারের পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রবিবার (৯ মার্চ) তাকে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তৌফিকুল ইসলামকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নূরুল আনোয়ার।
পাসপোর্ট অধিদফতরের যে কয়জন কর্মকর্তা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদের মালিক, তাদের মধ্যে তৌফিকুল ইসলাম অন্যতম। দুদকের দায়ের করা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিও তিনি।
তৌফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারের জারি করা বরখাস্তের আদেশের কপি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এসেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘যেহেতু তৌফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলার চার্জশিট আদালতে গৃহীত হয়েছে, সেহেতু চাকরির বিধান মোতাবেক ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি চাকরি হতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি।
জানা যায়, ২০০৪ সালে ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট অধিদফতরে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন তৌফিকুল ইসলাম খান। তার প্রথম পোস্টিং যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। চাকরি জীবনে তিনি নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লা, খুলনা, ঢাকার যাত্রাবাড়ী এবং হেড অফিসে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ের পার্সোনালাইজেশন সেন্টারের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। এর মধ্যে তিনি সহকারী পরিচালক ছিলেন ৭ বছর, উপ-পরিচালক ছিলেন ৮ বছর এবং উভয় পদে মোট ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার ৩ মাসের মধ্যে পরিচালক পদে পদোন্নতি পান। এ সময় তিনি সর্বসাকুল্যে যথাক্রমে ৫৫ হাজার, ৬৫ হাজার এবং এখন ৭৫ হাজার টাকা করে বেতন তুলছেন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তিনি ঢাকায় ফ্ল্যাট ৮টি, প্লট ৭টি ও বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়ে যান।
দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, পাসপোর্টের এই পরিচালকের নামে রয়েছে ঢাকার উত্তরায় ১৫শ’ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, যা কেনা হয় ১ কোটি ১০ লাখ টাকায়। ধানমন্ডিতে ২ হাজার বর্গফুটের প্লট কেনা হয়েছে ২ কোটি টাকায়। ধানমন্ডির গ্রিন রোডে সাড়ে ১২০০ বর্গফুটের ৩টি ফ্ল্যাট। একেকটির মূল্য ৮০ লাখ টাকা। লালমাটিয়ায় ১৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ইন্দিরা রোডে তিনি একটি ফ্ল্যাট কেনেন ৬৫ লাখ টাকায়। এটি এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নামে বুকিং দিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন তিনি। শান্তিনগরে তার একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, এটি কেনা হয় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। এটির মূল্য তৌফিক তার ভাইয়ের নামে পরিশোধ দেখান। রাজধানীর নীলক্ষেতে তার দুটি দোকান আছে। দোকান দুটি একসঙ্গে কেনা হয় ২ কোটি ২০ লাখ টাকায়। বিভিন্ন ব্যাংকে তার এফডিআর রয়েছে ৬৪ লাখ টাকার।
অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, তৌফিকুল ইসলাম খান মিরপুর রূপনগর (সম্প্রসারিত) প্রকল্পে ২ কাঠার প্লট কিনেছেন ১ কোটি ১০ লাখ টাকায়। উত্তরায় ৩ কাঠার প্লটটি কেনেন ১ কোটি ৫০ লাখ দিয়ে, এখন যার বাজার দর ২ কোটি। রাজধানীর বনশ্রীতে রয়েছে সাড়ে ৩ কাঠার প্লট, শাশুড়ির নামে কেনা এই প্লটের দাম ৩ কোটি টাকা। নিজ জেলা নেত্রকোনায় ১৪.৫৭ শতাংশ জমির ওপর দোতলা বাড়ি রয়েছে। এটি ২ কোটি ১০ লাখে কেনা। নেত্রকোনায় আরেকটি ৬ তলা বাড়ি রয়েছে তার। এটি পৌনে ৪ শতাংশ জায়গার ওপর। কিনেছেন ২ কোটি টাকায়। তৌফিক নেত্রকোনার নিজ গ্রামে এক দাগে কিনেছেন ৪ একর কৃষি জমি। এটির আনুমানিক দাম ১ কোটি ৮০ লাখ। মোহনগঞ্জে একসঙ্গে ১৩ একর জমি কিনেছেন ৮০ লাখ টাকায়।
তৌফিক ইসলামের মোট নগদ অর্থ রয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ব্যাংকে রয়েছে ৬৫ লাখ টাকা। স্বর্ণালঙ্কার আছে ৪৫ ভরি। মূল্য ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পারিবারিক ব্যবহারের জন্য কিনেছেন ২টি গাড়ি। একটি ফিল্ডার, আরেকটি নোয়াহ। এছাড়া তার নগদ রয়েছে ৩ হাজার মার্কিন ডলার, ৭০০ সিঙ্গাপুরি ডলার, ইউরো রয়েছে ৯ হাজার।
দুদকের অনুসন্ধান দলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পাসপোর্টের যে কয়জন কর্মকর্তা বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক, এর মধ্যে তৌফিকুল ইসলাম খান অন্যতম। তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আমরা ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মামলা করি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে, সেখানে তাকে অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ফলে তাকে গ্রেফতারে কোনও বাধা নেই। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।