ঢাকা ০৩:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের মৃত্যুতে মহাসচিব মির্জা ফখরুলের শোক Logo রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের মৃত্যুতে প্রবাস থেকে শোক প্রকাশ করলেন সেলিম রেজা Logo নলছিটিতে বিএনপির পক্ষে জনসংযোগ ও পথসভা করলেন এ্যাড. শাহাদাৎ হোসেন Logo কাঁঠালিয়ায় গণঅধিকার পরিষদের মনোনয়ন প্রত্যাশির লিফলেট বিতরণ Logo পানছড়িতে জামায়াতের মাসিক সাধারন সভা অনুষ্ঠিত Logo ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপি নেতা সেলিম রেজার জনপ্রিয়তা বেড়েছে Logo কিশোরগঞ্জে সুপারি চুরি করতে গিয়ে গাছ ভেঙে চোরের মৃত্যু Logo মানবতার ডাক’-এর মহতী উদ্যোগ: মরণ ফাঁদ রাস্তায় ফেরালো জীবনের চলাচল Logo গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ জাতিসংঘ আদালতের Logo মাটিরাঙ্গায় গনধর্ষণের শিকার কিশোরী: আটক-২

ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে ধর্ষণ ও নারীদের প্রতি সহিংসতা

News Editor
  • আপডেট সময় : ১২:২৬:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ১০৭৭ বার পড়া হয়েছে

দেশে গত কয়েক দিনে চাঞ্চল্যকর কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় দেশবাসী তাদের অসন্তোষ ও আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন। ধর্ষণের পেছনে ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদের নাম উঠে এসেছে। পুলিশ তাদের অনেককে গ্রেফতার করলেও, অতীতে এমন ঘটনায় জড়িতদের অনেকেই আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগের ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিত করা গেলে এসব অপরাধ কমত। রাষ্ট্র যতদিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের না হতে পারবে, ততদিন সমাজে এসব নৈরাজ্য বাড়বে।

গত শুক্রবার সিলেটে এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যান এক তরুণী। সেখানেই কয়েক যুবক স্বামীকে গাড়িতে আটকে রেখে তাকে ধর্ষণ করে। ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান ও অপর একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এছাড়া সাতক্ষীরা থেকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীকে রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার কথা বলে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ, মেসের রুমের টাইলস পরিষ্কার করার কথা বলে কেরানীগঞ্জে নারীকে ধর্ষণ, খাগড়াছড়িতে ডাকাতি করতে ঘরে ঢুকে এক প্রতিবন্ধী তরুণীকে দলবেঁধে ধর্ষণ, খাগড়াছড়িতে চাকমা সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণের মতো বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনা ঘটে গত কয়েক দিনে।

এসব ঘটনায় সারা দেশের মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ঘটনার বিচার দাবি করে সচেতন নাগরিক সমাজ। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সারা দেশে ৮৮৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এবং ১৯২ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এই আট মাসে ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছেন ৪১ জন নারী আর ৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যা করেছেন।

২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় গত বছর ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ, যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে আসক। সংস্থাটি জানায়, ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হন ৮১৮ জন নারী। ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে। আর ধর্ষিত হওয়ায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন নারী।

মানবাধিকার কর্মী ও নারী নেত্রী খুশি কবীর বলেন, ‘দেশে ধর্ষণ ও নারীদের প্রতি সহিংসতা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এসব ঘটনার সঙ্গে সরকারদলীয় বিভিন্ন লোকজন সম্পৃক্ত, যে কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বিচার হয় না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ এসব প্রভাবশালীকে গ্রেফতারও করে না বা গ্রেফতার হলেও তারা জামিনে মুক্ত হয়ে যায়। সে হিসেবে ধর্ষণ বা নারীদের প্রতি সহিংসতার এসব ঘটনায় আমরা সমাজে খুব ভালো বার্তা দিতে পারছি না। এই কারণে এই ধরনের অপরাধও থামানো যাচ্ছে না। আমার মনে হয় বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে এই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে এসব অপরাধ কমে আসবে।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির ঘটনা রোধ করতে হলে প্রশাসন, রাজনীতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সমাজবিরোধী চক্র গড়ে উঠেছে তাদের প্রতিহত করতে হবে। এই সিন্ডিকেট দূর না হলে অপরাধ প্রবণতা বাড়তে থাকবে। নারীর প্রতি আগ্রাসী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সর্বস্তরে নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে।’

বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নারীর প্রতি সহিংসতার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা, জবানবন্দি নেওয়ার পদ্ধতি বদলানো, ঘটনা অন্য খাতে প্রবাহিত করতে অপরাধী শনাক্তে নাটকীয়তা বন্ধ করারও দাবি জানান তিনি।

একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘বর্তমানে করোনার সময়ে যখন মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখন নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি সমগ্র জাতিকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। সারা দেশে প্রতিটি স্তরের নারী ও শিশুরা হত্যা-ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এমন অবস্থায় ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের পারিবারিক শিক্ষা, সংস্কার, মনোসামাজিক আচরণগত দিক আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তাই ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়ে চলা নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে কমিশন গঠন করা উচিত বলে আমি মনে করি।

ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে ধর্ষণ ও নারীদের প্রতি সহিংসতা

আপডেট সময় : ১২:২৬:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

দেশে গত কয়েক দিনে চাঞ্চল্যকর কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় দেশবাসী তাদের অসন্তোষ ও আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন। ধর্ষণের পেছনে ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদের নাম উঠে এসেছে। পুলিশ তাদের অনেককে গ্রেফতার করলেও, অতীতে এমন ঘটনায় জড়িতদের অনেকেই আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগের ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিত করা গেলে এসব অপরাধ কমত। রাষ্ট্র যতদিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের না হতে পারবে, ততদিন সমাজে এসব নৈরাজ্য বাড়বে।

গত শুক্রবার সিলেটে এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যান এক তরুণী। সেখানেই কয়েক যুবক স্বামীকে গাড়িতে আটকে রেখে তাকে ধর্ষণ করে। ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান ও অপর একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এছাড়া সাতক্ষীরা থেকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীকে রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার কথা বলে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ, মেসের রুমের টাইলস পরিষ্কার করার কথা বলে কেরানীগঞ্জে নারীকে ধর্ষণ, খাগড়াছড়িতে ডাকাতি করতে ঘরে ঢুকে এক প্রতিবন্ধী তরুণীকে দলবেঁধে ধর্ষণ, খাগড়াছড়িতে চাকমা সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণের মতো বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনা ঘটে গত কয়েক দিনে।

এসব ঘটনায় সারা দেশের মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ঘটনার বিচার দাবি করে সচেতন নাগরিক সমাজ। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সারা দেশে ৮৮৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এবং ১৯২ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এই আট মাসে ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছেন ৪১ জন নারী আর ৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যা করেছেন।

২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় গত বছর ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ, যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে আসক। সংস্থাটি জানায়, ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হন ৮১৮ জন নারী। ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে। আর ধর্ষিত হওয়ায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন নারী।

মানবাধিকার কর্মী ও নারী নেত্রী খুশি কবীর বলেন, ‘দেশে ধর্ষণ ও নারীদের প্রতি সহিংসতা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এসব ঘটনার সঙ্গে সরকারদলীয় বিভিন্ন লোকজন সম্পৃক্ত, যে কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বিচার হয় না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ এসব প্রভাবশালীকে গ্রেফতারও করে না বা গ্রেফতার হলেও তারা জামিনে মুক্ত হয়ে যায়। সে হিসেবে ধর্ষণ বা নারীদের প্রতি সহিংসতার এসব ঘটনায় আমরা সমাজে খুব ভালো বার্তা দিতে পারছি না। এই কারণে এই ধরনের অপরাধও থামানো যাচ্ছে না। আমার মনে হয় বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে এই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে এসব অপরাধ কমে আসবে।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির ঘটনা রোধ করতে হলে প্রশাসন, রাজনীতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সমাজবিরোধী চক্র গড়ে উঠেছে তাদের প্রতিহত করতে হবে। এই সিন্ডিকেট দূর না হলে অপরাধ প্রবণতা বাড়তে থাকবে। নারীর প্রতি আগ্রাসী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সর্বস্তরে নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে।’

বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নারীর প্রতি সহিংসতার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা, জবানবন্দি নেওয়ার পদ্ধতি বদলানো, ঘটনা অন্য খাতে প্রবাহিত করতে অপরাধী শনাক্তে নাটকীয়তা বন্ধ করারও দাবি জানান তিনি।

একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘বর্তমানে করোনার সময়ে যখন মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখন নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি সমগ্র জাতিকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। সারা দেশে প্রতিটি স্তরের নারী ও শিশুরা হত্যা-ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এমন অবস্থায় ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের পারিবারিক শিক্ষা, সংস্কার, মনোসামাজিক আচরণগত দিক আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তাই ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়ে চলা নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে কমিশন গঠন করা উচিত বলে আমি মনে করি।